জি নিউজ বিডি ডট নেট ঃ- নোয়াখালীর, ফেনী ও সিরাজগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে তিন বিএনপি নেতা-কর্মী নিহত হয়েছে।এরা নিহতেরা হলেন- সোনাইমুড়ী উপজেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক তৌহিদুল ইসলাম তৌহিদ, ফেনী সদর উপজেলার ফাজিলপুর ইউনিয়ন যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি গোলাম সরওয়ার এবং সিরাজগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুল ইসলাম হত্যা মামলার আসামী বাবলু মোল্লা। তবে পুলিশের দাবি তারা ক্রস ফায়ারে নিহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ফেনী সদরের ফাজিলপুর ইউনিয়নের সূর্য ছড়া (লস্কর তালুক জিরো) পয়েন্ট এলাকায় র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটিলিয়ন (র্যাব) ও পুলিশের সঙ্গে বন্ধুকযুদ্ধে গোলাম সরওয়ার (৩২) নামে এক যুবদল নেতা নিহত হয়েছেন। নিহত গোলাম সরওয়ার একই ইউনিয়নের আলী নগর গ্রামের মৃত নুরুল হকের ছেলে ।ফেনীর অতিরিক্তি পুলিশ সুপার সাইফুল হক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, গোলাম সরওয়ার পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও ওয়ারেন্টের আসামি। তার বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজি ছিনতাইসহ প্রায় দুই ডজন মামলা রয়েছে।গোপন সূত্রে খবর পেয়ে র্যাব ও পুলিশ তাকে আটক করতে গেলে সে পুলিশকে লক্ষ্য করে হামলার চেষ্টা চালায়। পুলিশ আত্ম রক্ষার্থে গুলি চালালে বন্ধুক যুদ্ধে গোলাম সরওয়ার নিহত হয়। তিনি আরো জানান, পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ফেনী সদর হসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।অপরদিকে জেলা যুব দলের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন পাটোয়ারী অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক কারণে তাকে বাড়ি থেকে ডেকে এনে গুলি করে হত্যা করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এদিকে, ভোরে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক তৌহিদুল ইসলাম নিহত হয়েছেন। নিহত তৌহিদুল আমিশাপাড়া ইউনিয়নের বদ্রগাঁও গ্রামের নূর মোহাম্মদ মাস্টারের ছেলে। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, নোয়াখালী-১ (সোনাইমুড়ী-চাটখিল) আসনে বিএনপি থেকে নির্বাচিত সাবেক এমপি ও বর্তমান সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের সভাস্থল জাতীয় প্রেস ক্লাব এলাকা থেকে মঙ্গলবার পল্টন থানা পুলিশ তৌহিদুল ইসলামকে গ্রেফতার করে। গতবুধবার দুপুরে তাকে সোনাইমুড়ী থানায় হস্তান্তর করা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার আমিশাপড়া-সোনাপুর এলাকার মেডীপাড়ায় তার গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। এ বিষয়ে সোনাইমুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সামাদ সাংবাদিকদের জানান, বিএনপি নেতা তৌহিদকে ঢাকা থেকে র্যাব আটক করে। বুধবার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আলমগীর তাকে সোনাইমুড়ী থানায় নিয়ে আসেন। পরে তার দেয়া তথ্য মতে রাতে পুলিশ উপজেলার মেরিপাড়া থেকে অস্ত্র উদ্ধার করতে গেলে তার সহযোগীরা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। পুলিশও পাল্টা হামলা চালায়। এ সময় দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় তৌহিদ গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়। অন্যদিকে, সিরাজগঞ্জে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা র্যাবের ‘ক্রসফায়ারে’ আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুল ইসলাম হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ২ নম্বর আসামী বাবলু মিয়া (২৭) নিহত হয়েছেন। বাবলু সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নের বাঐতারা গ্রামের আ. ওয়াহাবের ছেলে। তিনি স্থানীয় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। র্যাব-১২ সিরাজগঞ্জ স্পেশাল কোম্পানি কমান্ডার (এএসপি) অশোক পাল জানান, কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসী নাশকতার পরিকল্পনা করতে অস্ত্রসহ শহরের কাটা ওয়াপদার চায়না হারবার বালির পয়েন্টে এক হয়েছে এমন গোপন সংবাদ পায় র্যাব। এর ভিত্তিতে তাদের একটি দল রাত দুইটার দিকে ওই এলাকায় যায়। এ সময় র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে সন্ত্রাসীরা। র্যাব সদস্যরাও পাল্টা গুলি ছুড়ে। এসময় উভয়পক্ষের প্রায় ২০ মিনিটের ‘বন্দুকযুদ্ধে’ বাবলু নামে এক সন্ত্রাসী নিহত হয়। অন্যরা পালিয়ে যান। পরে ঘটনাস্থল থেকে একটি রিভলবার, একটি সর্টগান ও বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। তার বিরুদ্ধে তিনটি হত্যা মামলা রয়েছে। এদিকে বিএনপি দাবি করছে- বিনা বিচারে নেতাকর্মীদের হত্যা করে ক্রসফায়ারের নাটক সাজানো হচ্ছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সরকার সমর্থন করে না। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে বিরোধী জোটের নেতাকর্মী নিহত অব্যাহত থাকায় দেশী-বিদেশী বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাঃ- ৩১ জানুয়ারি ২০১৪।