জি নিউজ ঃ বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া বলেছেন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আমরা অংশ নিলেও নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবি থেকে আমরা এক ইঞ্চিও সরব না। স্থানীয় নির্বাচনে বিজয়ী হলেও নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি থেকে সরে না আসার কথা আবার জানালেন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া। আগামী নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনেই দিতে হবে। নইলে ১৮ দলসহ কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নেবে না, নির্বাচনও হতে দেবে না। গতরোববার রাতে গুলশানের কার্যালয়ে বরিশালের নবনির্বাচিত মেয়র আহসান হাবিব কামালসহ ১৮ দলীয় সমর্থিত বিজয়ী কাউন্সিলরদের সঙ্গে সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন সরকারকে এই হুঁশিয়ারি দেন। খালেদা জিয়া বলেন, “চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু হলে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের জামানতই বাজেয়াপ্ত হত। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনের ফলে এখন জাতীয় নির্বাচনের সময় নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় থাকবে। তবে এতে নির্বাচন পক্ষপাতহীন হবে না দাবি করে নির্দলীয় সরকার পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলনে রয়েছে বিএনপি। নির্দলীয় সরকারের দাবি মানতে সরকারকে বাধ্য করার হুমকি দিয়ে আন্দোলনের পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচনের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে দলের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেন খালেদা। আগামী ৬ জুলাই অনুষ্ঠেয় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “ষড়যন্ত্রের খবর পাচ্ছি। ইতোমধ্যে সেখানে সন্ত্রাসী ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। নির্বাচনে ব্যবহারের জন্য কারাগার থেকে দাগী সন্ত্রাসীকে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে ‘মেরুদণ্ডহীন’ ও ‘অথর্ব’ আখ্যায়িত করে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে তাদের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। এই মাসের শুরুতে রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের জয়ের পর সরকারি দলের নেতারা বলছেন, দলীয় সরকারের অধীনেও সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হওয়া সম্ভব। সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাজেট বক্তব্যের সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী বক্তব্যে নতুন কিছু নেই, তিনি ভাঙা রেকর্ড বাজিয়েছেন, মিথ্যাচার করেছেন। যেহেতু সংসদ নেতার বক্তব্যের পর কারো বক্তব্য দেয়ার সুযোগ নেই, সেজন্য আমরা জবাব দিতে পারিনি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে নারায়ণগঞ্জে ‘ভারতীয়’ কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণে দরপত্র আহবান, সীমান্ত হত্যা বন্ধ এবং তিস্তা চুক্তি নিয়ে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য চাইলেও তা পাননি বলে জানান বিরোধীদলীয় নেতা। সংসদে উন্নয়নের যে বর্ণনা প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন, তাও সঠিক নয় বলে তিনি দাবি করেন। রূপসা, লালন শাহ, দপদপিয়া, দাউদকান্দি, কর্ণফুলি সেতু ইত্যাদি যত বড় বড় সেতু আমাদের সরকারের আমলেই নির্মাণ হয়েছে। যমুনা সেতুও আমরাই করেছি। ওই সব সেতুর নাম ফলক তারা উঠিয়ে ফেলে এখন দাবি করছে, এসব সেতু তারা করেছে। গত ৫ মে হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযানে গুলি চালানো হয়নি বলে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যও প্রত্যাখ্যান করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। খালেদা জিয়া বলেন পত্রপত্রিকায় এসেছে, ১ লাখ ৫৫ হাজার রাউন্ড গুলি ব্যবহার করা হয়েছে। ইসলামিক টিভি ও দিগন্ত টেলিভিশন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের চিত্র সরাসরি সম্প্রচার করছিল বলেই এই দুটি প্রতিষ্ঠান সরকার বন্ধ করে দিয়েছে। চার সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলরদের শপথ অনুষ্ঠানে দেরি হওয়ায় সরকারের সমালোচনা করেন বিরোধী নেতা। আহসান হাবিব কামাল বিরোধী জোট সমর্থিত ২৮ জন কাউন্সিলরকে নিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে আসেন। তিনি ও নবনির্বাচিত কাউন্সিলররা ফুল দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনকে শুভেচ্ছা জানান। বরিশালের নতুন মেয়রকে নাগরিক সুবিধার দিকে নজর দেয়ার পরামর্শ দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, “আমি অর্থ সম্পদ লুটপাট ও দুর্নীতি দেখতে চাই না। যতটুকু অর্থ বরাদ্দ হবে, তা সঠিকভাবে মানুষের সেবায় লাগাতে হবে। অনুষ্ঠানে আহসান হাবিব ছাড়াও বরিশালের সাবেক মেয়র ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবর রহমান সরোয়ার, বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এবায়েদুর রহমান চাঁন বক্তব্য রাখেন। বিএনপি নেতাদের মধ্যে অনুষ্ঠানে ছিলেন আবদুল্লাহ আল নোমান, হাফিজউদ্দিন আহমেদ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সেলিমা রহমান, শাহজাহান ওমর, জয়নাল আবেদীন, শাহজাহান মিয়া, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ।