অপূর্ব লাল সরকার, আগৈলঝাড়া (বরিশাল) থেকে :বরিশালের আগৈলঝাড়ায় শীতের আগমণী বার্তার সাথে সাথে গাছি বা সিঁউলিরা ব্যস্ত হয়ে পরেছেন খেঁজুরের রস আহরণের জন্য। শীতের হিমেল হাওয়ার মধ্যে গাছিরা রস আহরণের আনুসঙ্গিক কাজ শেষ করেছেন। খেঁজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় উৎপাদন শুরু হয়েছে।
আবহমানকাল থেকে গ্রামবাংলার আদি ঐতিহ্যের সাথে খেঁজুরের রস ও শীতকাল একাকার হয়ে আছে। শীতের মূল উৎসবই হলো শীতের পিঠা। যার মূল উপাদান খেঁজুরের রস, ঝোলাগুড় ও পাটালীগুড়। শীতের সকালে রোদে বসে পিঠা খেতে শিশু থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধ সকলের ভাল লাগে। তাই এসময় গ্রামের ঘরে ঘরে পিঠা ও পায়েস তৈরির ধুম পরে যায়। শিশু, যুবক, বৃদ্ধ সবাই মেতে উঠে পিঠা খাওয়ার উৎসবে। তাই প্রতিবছর খেঁজুরের রস সংগ্রহের প্রস্তুতি শুরু হয় শীতের শুরুতেই। এবারও খেঁজুরগাছ কাটার কাজ শেষ করেছেন গাছি বা সিঁউলিরা। গাছের মাথায় একইস্থানে অনেকখানি বাকল তুলে সেখানে হাঁড়ি বেঁধে এ রস সংগ্রহ করছেন। উপজেলার অনেক গ্রামে মহাজনরা আগাম রসের জন্য গাছিদের অগ্রিম দাদন দিয়ে রেখেছেন। সেই টাকায় অনেকে রস সংগ্রহের বিভিন্ন উপকরণ কিনে রস সংগ্রহ শুরু করেছেন। উপজেলার গাছি জালাল মিয়া, লোকমান হোসেন ও শাহ আলম জানান, অন্য মৌসুমে তারা বিভিন্ন কাজ করেন। কিন্তু শীত এলেই তারা খেঁজুরগাছ কাটায় ব্যস্ত হয়ে পরেন। কারণ এ অঞ্চলে রসের পর্যাপ্ত চাহিদা থাকায় ভালো আয় হয়। এছাড়া শীতের সময় ধনী-গরীব সকলের কাছে খেঁজুরের গুড়েরও বেশ কদর থাকে। তারা আরো জানান, তাদের নিজেদের কোন গাছ নেই। অন্যের গাছ কেটে রস সংগ্রহ করতে হয়। তাই গাছের মালিককে রসের একটা অংশ দিতে হয়। তারপরেও প্রতিবছর তারা রস ও গুড় বিক্রি করে লাভবান হন বলে জানান তারা। বাড়ির উঠানের একপাশে স্তুপ করা থাকে অসংখ্য ছোটবড় রসের হাঁড়ি। পুরুষেরা গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে নিয়ে আসে। আর মহিলারা বাড়ির উঠানে উনুনে মস্ত পাত্রে রস জ্বাল দেন। আর সারাদিন ধরে চলে জ্বালাইয়ের মাধ্যমে রস শোধন প্রক্রিয়া। এর মাধ্যমে রসের মিষ্টি গুড় তৈরি হয়। এসময় পুরো এলাকা খেঁজুরের রসের মৌ মৌ গন্ধে ভরে উঠে।
উপজেলা কৃষি অফিসসূত্রে জানা গেছে, প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখতে খেঁজুরগাছের ভূমিকা অপরিসীম। এ উপজেলায় এখনো বেশকিছু খেঁজুরগাছ দেখা যায়। খেঁজুরগাছ ও রসের সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে ক্রমশ: তা হ্রাস পাচ্ছে।