অপূর্ব লাল সরকার, আগৈলঝাড়া (বরিশাল) থেকে :বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলা থেকে প্রতিমাসে প্রায় দু’কোটি টাকার এলফিস বা কুঁচে মাছ বিদেশে রফতানি হচ্ছে। রফতানির মাধ্যমে আয় করছে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। কুঁচে মাছ ধরা ও বিপণনের মাধ্যমে উপজেলার বহু সংখ্যক মৎস্যজীবি ও সাধারণ মানুষ এখন স্বাবলম্বি হয়ে উঠেছে।
জানা গেছে, মাছের বাজারের পাশাপাশি উপজেলার গৈলা, সাহেবেরহাট, পশ্চিম মোল্লাপাড়া, ঐচারমাঠ, পয়সারহাট, বড়মাগড়া, আস্কর, বাশাইল, রাজিহার, চলবল, বাটরা, কারফাসহ বিভিন্ন এলাকায় কুঁচে মাছ সংগ্রহ হয় বেশি। শিকারীরা প্লাস্টিকের পানির ড্রামে করে এ মাছ বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন পাইকারদের কাছে। আর বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা কুঁচে মাছ পাইকাররা একত্রিত করে নিয়ে যান ঢাকায়। সেখানে মাছ প্রক্রিয়াজাতকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে তারা বিক্রি করেন। অপেক্ষাকৃত নিচু জমিতে কুঁচে মাছ বেশি পাওয়া যায়। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ সাধারণত: এ মাছ ধরার সাথে জড়িত। কুঁচে শিকারের জন্য ব্যবহার করা হয় চাঁই, জাল, বড়ঁশি ও বাঁশের তৈরি এক ধরণের হাতিয়ার। অনেক শিকারী আছেন যারা কুঁচে মাছ খালি হাতেও ধরতে পারেন। সাধারণত: আড়াইশ’ থেকে ৩শ’ টাকা কেজি হিসেবে এ মাছ পাইকাররা কিনে থাকেন। ঢাকায় তারা বিক্রি করেন ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা কেজি দরে। মাছ শিকারের জন্য পাইকাররা শিকারীদের দাদনও দিয়ে থাকেন। উপজেলার গৈলা, আগৈলঝাড়া, সাহেবেরহাট ও পয়সারহাটে কুঁচে মাছ পাইকারী ক্রয়ের আড়ৎ রয়েছে। এ মাছ বিক্রি করে একজন শিকারী দিনে ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকার মত আয় করেন। বর্ষা মৌসুমে কুঁচের প্রচুর আমদানী ও ব্যবসা ভালো হয়। কুঁচে শিকারের ফলে দিন দিন এর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। কুঁচে সাধারণত ফসলী জমি, পুকুর, ডোবা, খাল-বিল ও হাওরে পাওয়া যায়। উপজেলার গৈলা রথখোলা বাসস্ট্যান্ডের মৎস্য ব্যবসায়ী প্রদীপ বাড়ৈ জানান, আগৈলঝাড়া থেকে প্রতি সপ্তাহে পাঁচ থেকে সাত ট্রাক কুঁচে মাছ ঢাকায় যায়। প্রতি ট্রাকে দশ থেকে পনের ড্রাম কুঁচে মাছ পাঠানো হয়। আর প্রতিটি ড্রামে থাকে ১৮০ থেকে ২শ’ কেজি মাছ। ৩শ’ টাকা কেজি হিসেবে মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৩৫ লাখ টাকা। এই মাছ ঢাকার বিভিন্ন রফতানীকারক প্রতিষ্ঠানে বিক্রি করা হয়। মৎস্য ব্যবসায়ী সুশীল বাড়ৈ জানান, বানিজ্যিকভাবে কুঁচে মাছ চাষ করতে পারলে আরো বেশি মাছ উৎপাদন করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হত। কুঁচে মাছ অঞ্চলভেদে কুইচ্চা, কুঁচে ও কুঁচে বাইম নামে পরিচিত। এর বৈজ্ঞানিক নাম মনোপটেরাস আর বানিজ্যিক নাম এলফিস। এ মাছ ৬০ থেকে ৭০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। অগভীর খাল-বিল, হাওর-বাওর, পুকুর ও মাটির নিচে এরা বাস করে। কুঁচে মাছ সাংঘাতিক রাক্ষুসে ¯^ভাবের। খাদ্য হিসেবে প্রধাণত: ছোট মাছ এদের পছন্দের খাবার। কুঁচে একটি সুস্বাদু ও প্রোটিন সমৃদ্ধ পুষ্টিকর মাছ।