কাজী নাসির উদ্দীন, সাতক্ষীরাঃ সাতক্ষীরা পৌরসভায় দূর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনার ২০ দিন অতিবাহিত হলেও পুলিশ এমামলায় এখনও তেমন কোন গতি করতে পারেনি। ডাকাতির পরপরই ঘটনার দিন সকালে দুই জনকে ও পরে একজন গ্রেপ্তার করলেও রহস্য রয়েছে হিমাগারে। ঘটনায় জড়িত এমন প্রাথমিক অভিযোগে সর্বশেষ আটক পৌরকর্মচারি ইলেকট্রিশিয়ান সাময়িক বরখাস্ত হওয়া পলাশকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ শনিবার ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারি কর্মকর্তা। জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের পাশেই পৌরভবনে ডাকাতির ২০ দিনেও রহস্য উদঘাটন না হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তবে এমামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা এসআই জাভিদ হাসানের দাবী পৌরভবনে ডাকাতির বিষয়টি পুলিশ আন্তরিকতার সাথেই দেখছে। এমনকি পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারাও নিয়মিত মনিটরিং করছেন।
প্রাপ্ত তথ্যে জানাগেছে, গত ২ সেপ্টেম্বর ভোররাতে পৌরসভা ভবনের নাইট গার্ড বৃদ্ধ রফিকুল ইসলামকে বেঁধেরেখে ভবনের দ্বিতীয় তলার কয়েকটি র“মের আলমিরা ভেঙ্গে প্রায় দেড় লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। ওই দিন সকালে পৌরসভার কর্মকর্তা কর্মচারিরা অফিসে এসে দেখেন আলমিরা ভাঙ্গা। দেড় লাখ টাকা নেই। এসময় পৌরসভার সচিব সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামী করে একটি ডাকাতি মামলা দায়ের করেন। ঘটনারদিন সকালেই প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে পৌরকর্মচারি শাহিন ও আযাদকে আটক করা হয়। একই সঙ্গে ওই রাতে দায়িত্বে থাকা নাইটগার্ড রফিকুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসে। পরে রফিকুলকে ছেড়ে দিয়ে বাকি দুই জনকে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে তাদেরকে কারাগারে প্রেরণ করেন। ঘটনার পরদিন পৌরভবনের পেছন থেকে দুটি ছুরি রড ও স্ক্রু পরিত্যাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। বর্তমানে ধৃতদের মধ্যে দুই জন জামিনে রয়েছে। এর কিছুদিন পর অনিয়মের অভিযোগে প্রায় ৫ মাস বরখাস্ত পৌরসভার ইলেকট্রিশিয়ান পলাশকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নিশ্চিত হতে পারেনি। ফলে আজ শনিবার তার ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করবে বলে জানিয়েছেন।
পুলিশ জানায়, আটক পলাশের কাছে ৫টি সিম ও ৪টি মোবাইল সেট পাওয়াগেছে। অবশ্য তার কাছে ছিল ১টা মোবাইল। পলাশকে টার্গেট করার পর সে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সিমে কথা বলায় লোকেশন বের করতে অনেকটা কষ্ট হয়েছে। বেকার একটি যুবক ৫টি সিমে এবং ৪টি মোবাইল সেটে কথা বলার বিষয়টি পুলিশকে ভাবিয়ে তুলেছে। ৫ মাস বরখা¯— থাকায় সে প্রয়োজনের তাগিদে এমন ঘটনায় জড়িয়ে পড়েছে কি না তাও ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে। এরআগে আটক শাহিন ও আজাদ ডাকাতির ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মুখ খোলেনি তদন্তকারি কর্মকর্তা। তবে তিনি জানিয়েছেন, যেহেতু পৌরসভার হিসাব বিভাগেই টাকা লুটের ঘটনা ঘটেছে সেহেতু মামলার বাদী ওই বিভাগ থেকেই হওয়া উচিত ছিল এমনটি মনে করেন পুলিশ।
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা এসআই জাভিদ হাসান জানান, হিসাব বিভাগের জহোর আলী ও নাজমুল হুদা নাজুকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের একজনের বক্তব্য সুবিধা মনে হয়নি পুলিশের ফলে এ দুইজনসহ আরও কয়েকজনের কললিষ্ট উঠিয়ে সার্বিক বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তকারি কর্মকর্তা মনে করেন, ব্যাংক থেকে টাকা তুলেছেন হিসাব বিভাগ। যেদিন টাকা তুলেছেন সেইদিন রাতেই ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। অতএব টাকা উঠানো এবং তা কোথায় রাখা হয়েছে তা এদুজনেই জানেন। একই সময়ে অন্য র“মের তালা বা আলমিরা ভাঙ্গার বিষয়টি আই ওয়াস মাত্র। অন্য র“মে সামান্য কিছু টাকা বা চেক বই থাকলেও ডাকাতরা সেগুলো নেয়নি।
পুলিশ আরও জানিয়েছেন, পৌর ভবনের পেছন থেকে উদ্ধার হওয়া দা ও রড শহরের একটি কর্মকারের দোকান থেকে দুই’শ টাকা করে ক্রয় করা হয়েছে। সেই কর্মকারের সাথে কথা বলে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের লোকেশন করার চেষ্টা চলছে। জিজ্ঞাসাবাদে নাইটগার্ড রফিকুল জানিয়েছে, ডাকাতদের বয়স ২৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে হবে। তদন্তের সময় এবিষয়টি মাথায় রেখেই অগ্রসর হচ্ছে পুলিশ। তবে এঘটনায় পৌরসভার কেউ না কেউ জড়িত তা পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। তা না হলে যেদিন টাকা উঠানো হয়েছে, সেদিনই ডাকাতি হয় কিভাবে। তবে পৌরসভার একাধিক সূত্রের দাবী পুলিশ কাউকে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করার চেষ্টা করলেও জিজ্ঞাসাবাদ না করতে তদবির করা হচ্ছে।
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা আসাবাদী, পৌরভবনে ডাকাতির ঘটনায় জড়িতদের অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। পলাশকে রিমান্ডে আনার পর মামলার আরও অগ্রগতি হবে বলে তিনি মনে করেন। এব্যাপারে মেয়র আলহাজ্ব এম এ জলিল জানিয়েছেন, ঘটনার পর অজ্ঞাতদের আসামী করে মামলা করা হয়েছে। পুলিশ যাদেরকে সন্দেহ মনে করেছে তাদের গ্রেপ্তার করেছে। এব্যাপারে কাউকে ধরা বা ছাড়ার জন্য পুলিশকে সুপারিশ করা হয়নি।