অনলাইন ডেস্কঃ- গত চার দশকে বাংলাদেশের নারীরা অনেকটাই এগিয়েছেন৷ লিঙ্গবৈষম্য, ‘ধর্মের দোহাই’ দিয়ে তাঁদের গতিরোধের চেষ্টা হলেও, নারীরা সাফল্য দেখাচ্ছেন বিভিন্ন অঙ্গনে৷ তবে মডেল নায়লা নাঈম নারীর এই অগ্রযাত্রায় যোগ করেছেন এক ভিন্ন দিক৷ বাংলাদেশের নারী বলতেই কারো কারো চোখে ভেসে উঠতে পারে হেফাজতের মিছিলে মার খাওয়া সাংবাদিকের ছবি কিংবা অ্যাসিড ঝলসানো মুখ নিয়ে আর্তনাদ করা কোনো তরুণীর কথা৷ এভারেস্টের চূড়ায় বাংলাদেশি নারীর উপস্থিতির কথাও হয়ত বলবেন অনেকে৷ আর প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী নেত্রীর আসনে নারীর উপস্থিতি তো এ দেশ দেখেছে বহু আগে থেকেই৷ ব্যতিক্রমী নায়লা-বাংলাদেশের নারীদের এই অগ্রযাত্রায় এক ভিন্ন দিক যোগ করেছেন মডেল নায়লা নাঈম৷ সম্প্রতি বিকিনি এবং অন্তর্বাস পরা তাঁর কয়েকটি ছবি ফেসবুকে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে৷ সচরাচর যেসব পোশাকে বাংলাদেশের মডেলদের দেখা যায় না, সেসব পোশাকে কোনো ধরনের জড়তা, পিছুটান ছাড়াই নিজেকে তুলে ধরছেন নায়লা৷ তাঁর কথায়, ‘‘প্রথম দিকে মডেলিং করাটা শখের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও আস্তে আস্তে যখন সাফল্য আসতে শুরু করলো, আমার কাজের প্রশংসা পেতে থাকলাম, নতুন নতুন সৃজনশীল, গঠনমূলক ও ভালো কাজের প্রস্তাব আসতে থাকলো, তখন থেকে আমি মডেলিংকে আরো প্রাধান্য দিয়ে সেটা পেশা হিসাবে বেছে নিয়ে কাজ করা শুরু করলাম৷ ‘‘আমার কাছে বাঙালি পোশাক হচ্ছে, আমি আমার শালীনতা বজায় রেখে যে পোশাকটা পরবো সেটা’’ স্বল্পবসনে নায়লার তোলা ছবির সমলোচনাও করছেন অনেকে৷ নায়লা অবশ্য এ সব সমালোচনায় পিছিয়ে যাবার পাত্রী নন৷ তিনি মনে করেন, ‘‘আমার কাজগুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে এবং অনেকে হয়ত ব্যাপারটাকে সহজভাবে নিতে পারেননি, তাই তার সমালোচনা করেছেন৷ আবার অনেকে কিন্তু এই একই কাজগুলোর অনেক প্রশংসাও করেছেন৷” ‘নারী স্বাধীনতা’ নাকি ‘চরমভাবাপন্ন আচরণ’-নায়লা নাঈমের কাজের সঙ্গে পরিচিত সংগীত শিল্পী প্রীতম আহমেদ৷ বিকিনি এবং অন্তর্বাস পরা ছবি প্রসঙ্গে তিনি জানান, নারীর পোশাকের বিজ্ঞাপনের মডেল নারীই হবেন, আর সেটাই স্বাভাবিক৷ আর একজন নারী নিজেকে কিভাবে উপস্থাপন করবেন সেটাও তাঁর নিজস্ব ব্যাপার৷ প্রীতম বলেন, ‘‘যার যার স্বাধীনতা অনুযায়ী সে সে চলবে৷ এটা সমাজকে প্রভাবিত বা বিভ্রান্ত না করলেই হয়৷”ফেসবুকে প্রকাশিত নায়লার কিছু ছবি দেখেছেন প্রীতম আহমেদ৷ তিনি বলেন, ‘‘একটা ওয়েস্টার্ন পোশাক পরা হ্যাঙ্গারকে যদি আমি মার্কেটে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি, তাহলে নায়লাকে দেখতে সমস্যা কোথায়?” নারী বিষয়ক ওয়েবসাইট উইমেন চ্যাপ্টারের সম্পাদক সুপ্রীতি ধর অবশ্য এক্ষেত্রে ভিন্নমত পোষণ করেন৷ হেফাজতে ইসলাম বা জামায়াতে ইসলামীর ধর্মের দোহাই দিয়ে ‘নারীকে ঘরে আটকে রাখার’ বিষয়টি যেমন চরমভাবাপন্ন, তেমনি নায়লা নাঈম যে পোশাকে নিজেকে উপস্থাপন করছেন সেটাও চরমভাবাপন্ন আচরণ বলে মনে করেন সুপ্রীতি৷ তিনি বলেন, ‘‘নাঈমার যেসব ছবি নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে, সেগুলো আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পরিপন্থি৷” ‘ধর্মীয় মূল্যবোধ’ এবং ‘বাঙালি সংস্কৃতি’-মডেল নায়ল নাঈম অবশ্য ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘আমাদের নিজেদের একটা স্বকীয় সংস্কৃতি আছে৷ দেশীয় সংস্কৃতির কথা এবং ধমীয় মূল্যবোধের কথা মাথায় রেখে যতটুকু অগ্রগতি সম্ভব ঠিক ততখানিক এগিয়ে যাওয়া আমি সমর্থন করি৷”নায়লার এই বক্তব্যকে ‘দু’রকম আচরণ’ বলে মনে করছেন সুপ্রীতি ধর৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি বলবো ওর ভেতরে একটা দোটানা আছে৷ এবং সে দু’রকম আচরণ করছে৷ সংস্কৃতি বলতে আসলে সে কী বোঝাচ্ছে? ধর্মীয় রীতি বলতে সে কী বোঝাচ্ছে? সেটা নিয়ে আমার যথেষ্ট প্রশ্ন আছে৷ এবং এটাকে আমি মোটেও এগিয়ে যাওয়া বলবো না৷”বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে মানানসই পোশাক প্রসঙ্গে সুপ্রীতি বলেন, ‘‘আমি বাঙালি নারী৷ আমার পোশাক কিন্তু হিজাবও না, বোরকাও না, আবার বিকিনিও না৷ আমার কাছে বাঙালি পোশাক হচ্ছে, আমি আমার শালীনতা বজায় রেখে যে পোশাকটা পরবো সেটা৷ সেটি শাড়িও হতে পারে, সেলোয়ার কামিজও হতে পারে৷” নায়লার যেসব ছবি নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে সেগুলো বাঙালির সংস্কৃতির সঙ্গে মানানসই নয় বলেই মনে করেন সুপ্রীতি৷ তবে সংগীত শিল্পী, অ্যাক্টিভিস্ট প্রীতম আহমেদ মনে করেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মধ্যে পরিবর্তন আসবে৷ তিনি বলেন, ‘‘একসময় বাংলাদেশে কুঁচি দিয়ে পেট বের করা শাড়ি পরলে সেখানে (পেটে) নাকি আলকাতরা লাগিয়ে দেয়া হতো৷ সেই সময় বাংলাদেশের নারীরা পার করে এসেছে৷ এভাবে বিকিনি পরে ছবি তোলাটার বিষয়টাও এক সময় উত্তরণ করবে নারীরা৷