জি নিউজঃ-আগামী জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে সংবিধান থেকে একচুলও নড়া হবে না- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের জবাবের এই ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সোমবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক সমাবেশে এই আহ্বান জানান তিনি। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেন, দেশের ৯০ ভাগ মানুষ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। এখনো সময় আছে, সংবিধানে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার পুনর্বহাল করুন। না হলে পরে পস্তাতে হবে , এছাড়া জনগণের আন্দোলনের বাতাস শুরু হলে চুল তো থাকবেই না, সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাবে, দিশেহারা হয়ে যাবেন। সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। বিরোধীদলীয় নেতা সেই সঙ্গে বলেন, আগামীতে ক্ষমতায় গেলে আওয়ামী লীগকে সঙ্গে নিয়ে তিনি কাজ করবেন। আমরা ক্ষমতায় গেলে নতুন ধারার রাজনীতি চালু করব। বিভক্তি ও অনৈক্যের পরিবর্তে ঐক্যের রাজনীতি করব। আওয়ামী লীগসহ সবাইকে নিয়ে রাজনীতি করব। ক্ষমতাসীন দলের উদ্দেশে বেগম খালেদা জিয়া বলেন, লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি করুন। নির্দলীয় সরকার হতে হবে। তাতে যে নাম দেন আমাদের আপত্তি নেই। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না দাবি করে আন্দোলনরত বিএনপির উদ্দেশে রোববার আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “জনগণের ভোট নিয়ে সংবিধান সংশোধন করেছি। যা হবে সংবিধান মোতাবেক হবে। এক চুলও নড়া হবে না। ওই বক্তব্যের মাধ্যমে কার্যত বিরোধী দলের দাবি প্রত্যাখ্যানের প্রেক্ষাপটে জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর সোমবার জনসভায় এলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। মাইনাস টু-এর প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বক্তব্য দিয়েছেন তার জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, মাইনাস টু-এর ভয় আমি করি না। আমি দেশ ও জনগণ ছেড়ে চলে যাইনি। আপনি (শেখ হাসিনা) পালিয়েছিলেন। আপনিই ফখরুদ্দীন সরকারের সাথে আপস করে দেশে ফিরেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী জনবিচ্ছিন্ন এবং নেতাকর্মী বিচ্ছিন্ন হয়ে ভয়ে চিৎকার করছেন- এমন মন্তব্য করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আপনি ও আপনার লোকেরা চুরি করেছেন। তাই এখন ভয়ে চিৎকার করে আপনার লোকদের সান্ত্বনা দিচ্ছেন। মহাজোট সরকারের বিভিন্ন কর্মকান্ডের কঠোর সমালোচনা করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের চরিত্র হচ্ছে মিথ্যা কথা বলা। নির্বাচনী ইশতেহারে তারা অনেক সুন্দর কথা বলেছিল। কিন্তু তা পূরণ করতে পারেনি। তাই জনগণ আওয়ামী লীগের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। সমাবেশে বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা বলেন, “আপনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, একচুলও নড়বেন না। আমরা বলতে চাই, আপনাকে একচুল নয়, বহুচুল পর্যন্ত নড়তে হবে। নইলে আপনার মাথায় কোনো চুল থাকবে না। এছাড়া নির্দলীয় সরকারের দাবি মেনে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, “আপনারা বলেছেন, অনেক উন্নয়ন করেছেন। তাহলে নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে আপনাদের কেন এত ভয়, সমপ্রতি অনুষ্ঠিত দেশের সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী জয়লাভ করার দৃষ্টান্ত দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন তার জবাবে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আওয়ামী লীগ এমন পচা পচে গেছে যে, এখন দলীয় প্রশাসন আর মাস্তান দিয়েও জিততে পারছে না। মহাজোট সরকারের উন্নয়নমূলক যে বিলবোর্ড টাঙ্গানো হয়েছে সে বিষয়ে ইঙ্গিত করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, বিএনপির উন্নয়ন কর্মকান্ড চুরি করে আপনাদের উন্নয়ন হিসেবে দেখাচ্ছেন। দেশে যত উন্নয়ন হয়েছে তা সব বিএনপি সরকারের আমলে হয়েছে উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, বড় বড় সেতু বিএনপি সরকারের আমলে হয়েছে। আওয়ামী লীগ যমুনা-রূপসা সেতু চায়নি। এগুলোর যখন কাজ হয়েছে তখন তারা হরতাল দিয়েছে। বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, তাদের একটা সুযোগ ছিল পদ্মা সেতু। এখানে ইচ্ছানুযায়ী নাম দিতে পারতেন। কিন্তু তারা আমাদের করা কাজে নিজেদের নামফলক বসিয়ে দেন। দুর্নীতির কারণে মহাজোট সরকারের মন্ত্রীদের বিচার হবে উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, আমাদের কাছে সব তথ্য আছে। সময়মতো প্রকাশ করা হবে। তিনি বলেন, ক্ষমতায় থাকতে যেসব অপকর্ম করেছেন ক্ষমতা থেকে চলে গেলে জনগণ আপনাদের ছাড়বে না। এর আগে পৌনে ৫টার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আলোচনা সভাস্থলে পৌঁছান তিনি। এসেই রঙ্গিন বেলুন আর কবতুর উড়িয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভ উদ্বোধন করেন। স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিবউন নবী খান সোহেলের সভাপতিত্বে এই সমাবেশে সংগঠনটির বিভিন্ন নেতারা বক্তব্য রাখেন।
জি নিউজ/তাঃ-১৯ আগষ্ট ২ ০১৩