এম.শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার, ১০মে ঃ চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজার ফাসিয়াখালী ও লামা উপজেলার ফাসিয়াখালী হারগাজা এলাকায় ডেসটিনি ২০০০ এর ট্রি প্ল্যানটেশনের গাছ নির্বিচারে লুট করা হচ্ছে । প্রকাশ্যে দিবালোকে হাজার হাজার গাছ কেটে ট্রাক পিকআপ ও জীপযোগে পাচার করা হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এব্যাপারে নিরব রয়েছে। অবশ্য গাছ লুটকারীরা ডেসটিনির গাছবাগান প্রকল্পের এসব গাছ নিলামে ক্রয় করেছে বলে দাবী করলেও মুলত অরক্ষিত হয়ে পড়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে প্রায়কোটি টাকা গাছ কেটে পাচার করা হয়েছে। ফুলছড়ি বিটের বনকর্মীরা গত রবিবার ৯ মে মধ্য রাতে অভিযান চালিয়ে চোরাই কাঠ ভর্তি একটি মিনি ট্রাক আটক করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ডেসটিনি ২০০০ এর ট্রি প্ল্যানটেশনের নামে অংশীদরিত্বে ভিত্তিতে বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা গ্রহণ করে। এসব টাকায় পাহাড়ি এলাকায় জমি ইজারা নিয়ে বা বাগান কিনে জনগণের মনে ধোকাও দেন ডেসটিনি। এই বিপুল অংকের টাকায় পার্বত্য জেলার লামা উপজেলাধীন ফাসিয়াখালী ইউনিয়ন ও চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজার ইউনিয়নের ফাসিয়াখালী মৌজার হারগাজা এলাকায় বান্দরবানের মাহাবুব নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে ২০০৯ সালে ১২৫ একর রাবার ও ইউক্যালিপটাস বাগান প্রায় ১ কোটি ৪ লাখ টাকায় ইজারা নেন। তবে ইজারার অর্ধেক টাকা পরিশোধ করার পর ডেসটিনি ২০০০ এর ট্রি প্ল্যানটেশনের গাছ গুলো দেখভাল করে আসছিল। ওই ইজারানেয়া বাগানে প্রায় গাছই পরিপুর্ণতা লাভও করে। ডেসটিনি কতৃপক্ষ অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে জমি নেওয়ার প্রক্রিয়ায় মূল ইজারাদের সম্মতি ও অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ইজারা নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন ডেসটিনি ট্রি প্ল্যানটেশন লি: এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহনাজ পারভীন।
”ডেসটিনি কর্তৃপক্ষ আদৌ কত গুলো গাছ রোপন করেছে তা নিয়েও ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়। তবে তারা দাবী করেন,২০০৯ সাল পর্যন্ত আড়াই কোটি গাছ রোপন করেছে। ডেসটিনি ২০০০ এর ট্রি প্ল্যানটেশনের বান্দরবান ও চট্টগ্রামে গাছ লাগানো কার্যক্রম তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত ডেসটিনির কক্সবাজারের চকরিয়ায় আঞ্চলিত কার্যালয়ও গড়ে তোলা হয়ে ছিল। এই কার্যালয় থেকে দাবী করা হয়, লামায় তাদের রোপন করা গাছের সংখ্যা দেড় কোটি।
এদিকে, গত ২০১২ সালে ১ আগষ্ট ডেসটিনির শীর্ষ ২২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে দুদক মামলা দায়ের পরবর্তী ওই কর্মকর্তাদের বেশীর ভাগই গ্রেফতার হওয়ার কারণে ফাসিয়াখালী মৌজার হারগাজা এলাকায় প্রায় ১২৫ একর বনায়ন অরক্ষিত হয়ে পড়ে। এসময় ডেসটিনি ট্রি প্ল্যানটেশন লি: এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহনাজ পারভীনও গ্রেফতার হন। তৎসময়ে পাহাড়ী জমি দখলের এই তৎপরতার কারণে পার্বত্য ভূমির মালিকানা নিয়ে বিদ্যমান সমস্যা আরও প্রকট রূপ ধারন করে। ডেসটিনির গাছবাগান প্রকল্পের বিরুদ্ধে বান্দরবান এলাকায় আদিবাসী ও কয়েকটি বাম সংগঠন আন্দোলন শুরু করেছিলেন।
২০০৯ সালের ৩ আগস্ট বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাসিয়াখালি ইউনিয়নের হারগাজা ও কাঠালছড়া ত্রিপুরা পাড়ার পক্ষে জনেরাং ত্রিপুরা ও জোথুরাম ত্রিপুরা জেলা প্রশাসনের কাছে ডেসটিনির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। তারা ডেসটিনির বিরুদ্ধে ৮৪ টি ত্রিপুরা আদিবাসী পরিবারের জুমচাষের জমি ও ফলজ–বনজ বাগান ধ্বংস করে বিদেশী প্রজাতির গাছবাগান করার অভিযোগ আনেন। তৎসময়ে ত্রিপুরা আদিবাসীদের পাডা থেকে উচ্ছেদের চেষ্টারও অভিযোগ তোলেন তারা।
এদিকে, গত ১ মাস ধরে পার্বত্য জেলার লামা উপজেলাধীন ফাসিয়াখালী ইউনিয়ন ও চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজার ইউনিয়নের ফাসিয়াখালী মৌজার হারগাজা এলাকায় প্রতিদিন কয়েক’শ শ্রমিক দিয়ে সশস্ত্র অবস্থায় স্থানীয় প্রভাবশালী লোকজন নির্বিচারে গাছ নিধন করে আসছে। এসব কাছ প্রকাশ্যে কেটে ট্রাক , পিকআপ ও জীপ যোগে পাচারও করা হচ্ছে ডুলাহাজার হারগাজা – ডুলাহাজারা বাজার সড়ক পথে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডেসটিনি ২০০০ এর ট্রি প্ল্যানটেশনের কোটি কোটি টাকার গাছ লুটের ঘটনায় জড়িত রয়েছে ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বাশার, ডুলাহাজার এলাকার নুরহোছাইন, খাট আমিন, ডাঃ নিত্য দাশ ও মে¤^ার শফিসহ আরো ১০/১৫ জন ব্যক্তি।
এলাকাবাসি জানিয়েছেন, ফাসিয়াখালী মৌজার হারগাজা এলাকায় ডেসটিনি ট্রি প্ল্যানটেশনের ১২৫ একর বনায়নের মধ্যে প্রায় ৫০ একর জমি গাছ ইতোমধ্যে লুট হয়েছে।
ডেসটিনি ২০০০ এর ট্রি প্ল্যানটেশনের গাছ লুটকারী চক্রের কয়েকজন সদস্য জানান, ২০৯ সালে ফাসিয়াখালীমৌজার হারগাজা এলাকায় বান্দরবানের মাহবুবের কাছ থেকে বাগানের জমি ইজারা নিয়ে ছিলেন। কিন্তু কোটি ৪০ লাখ টাকার চুক্তির মধ্যে ৭০ লাখ টাকা পরিশোধ না করায় এই বনায়নের গাছ ওই মাহবুবই ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বাশার এর কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। ফলে গাছ গুলোকেটে নিয়ে আসা হচ্ছে। তবে এই ঘটনার সত্যতা মিলেনি। কারণ ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বাশার বর্তমানে ভারতের মাদ্রাজের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীর রয়েছেন।
বনবিভিাগ সুত্রে জানা গেছে, গত রবিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে ফুলছড়ি বনবিট কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন এর নেতৃত্বে ভিলেজাররা কক্সবাজার–চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফুলছড়ি এলাকা হতে চোরাইগাছ ভর্তি একটি মিনি ট্রাক আটক করে। আটককৃত গাছ গুলো ফাসিয়াখালী ইউনিয়ন ও চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজার ইউনিয়নের ফাসিয়াখালী মৌজার হারগাজা এলাকার ডেসটিনির টি প্ল্যানটেশনের বাগান হতে লুট করে পাচার করা হচ্ছিল। আটককৃ গাছ ও ট্রাকটির মুল্য প্রায় ১০ লাখ টাকা বলে জানায় বনবিভাগ।
স্থানীয় কয়েকটি সুত্র জানায়, বর্তমানে অরক্ষিত ডেসটিনির টি প্ল্যানটেশন । আদিবাসী ও বাঙ্গালিদের মধ্যে প্রভাবশালীদের যোগ–সাজশে অনেক এলাকায় ডেসটিনির টি প্ল্যানটেশনের বাগান দখল ও লুট হয়ে যাচ্ছে। এসব বিষয়ে স্থানীয় কিছু তথাকথিত সংবাদ কর্মীদের এবং বন এবং পুলিশ প্রশাসনের লোকজনকে মাসোহারা দেয়ায় অনেকটা অপ্রকাশিত রয়েই যাচ্ছে এ ধরনে পরিবেশ বিধংসী কর্মকান্ডের ঘটনা।