সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:সাতক্ষীরা কলারোয়ায় ফুলতলা বাজার সংলগ্ন এলাকা থেকে আটক প্রাইভেটকারসহ নকল সীমানা পিলার নিয়ে রহস্যের ঘনিভূত হতে শুর“ হয়েছে। ঘটনার দিন উক্ত অবৈধ মালের ২ জন মালিকসহ ৩ জনকে আটক করে বিজিবি। অভিযানের সময় প্রাইভেটের মুল চালককে আটক করলেও বিজিবি জেলা সদর দপ্তরে এনে তাকে ছেড়ে দিয়ে এক ঘন্টার ভাড়াটিয়া চালকসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে মামলার ঘটনায় নানা প্রশ্নের জন্ম নিয়েছে। শুর“তেই সন্দেহের তীর যায় মুল চালকের দিকে। গত ১৮ মে সকালে কথিত অভিযান আর আটকের ঘটনা এবং নাটের গুর“কে বাদ দিয়ে মামলা করায় পর্দার আড়ালে রয়েছে নাটের গুর“। এঘটনায় কলারোয়া থানায় বিজিবি’র দায়েরকৃত মামলা নং ১৭/১৩।
তথ্যনুসন্ধানে জানা যায়, গত ১৮ মে কলারোয়া থানার কাকডাঙ্গা সীমান্ত ফাঁড়ির সুবেদার মোহাম্মাদ হোসেন তার সঙ্গীয় টহল সদস্য নান্নু বিশ্বাস কে সাথে নিয়ে নিজস্ব গোয়েন্দা হাবিলদার এফ এস মোঃ এনামুল কবিরের তথ্যের ভিত্তিতে ফুলতলা বাজারের আসে পাসে তারা অবস্থান করে। ওইদিন সকাল ৮ টার সময় ওই পথে আসা একটি প্রাইভেট কারের গতি রোধ করে। যার নং ঢাকা মেট্রো গ-১২-১০৯৬ গাড়িটি তলাসি করে সেল আকারের একটি ধাতব বস্তু উদ্ধার করে যা উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন সীমানা মেগনেট বলে তাদের কাছে খবর ছিল। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে উক্ত প্রাইভেটকারে থাকা ৪ জন লোক কে বিজিবি আটক করে গাড়িসহ বিজিবি জেলা সদর দপ্তরে নিয়ে আসে।
এব্যাপারে বিজিবি’র সুবেদার মোহাম্মাদ হোসেন আলী বাদী হয়ে ৩ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। দায়েরকৃত মামলায় বরিশালের জনৈক সম্ভু হালদার যার বর্তমান বাড়ি ভারতের বারাসাত এলাকায় তাকে আসামী করা হয়। একই সাথে বৈকারির জনৈক মনির“জ্জামান, প্রাইভেট কার চালক শহরের পলাশপোল এলাকার মৃত আমজাদ হোসেনের ছেলে শেখ আমান উল্যাহ বাবু ও শহরের পুরাতন সাতক্ষীরা কাজী মোফাখ খায়র“ল ইসলাম। ঘটনার পর প্রাইভেটকারসহ তাদেরকে ধরে বিজিবি’র জেলা সদর দপ্তরে এনে শুর“ হয় নাটকীয় মোড়। অভিযোগ রয়েছে, বিজিবি জেলা সদর দপ্তরে আসার পর বাইরের সাধারণ মানুষ এসে প্রাইভেটকারসহ সীমানা পিলার দেখলেও সাংবাদিকদের বসিয়ে রাখা হয় গোল ঘরে। এঘটনার প্রতিবাদ করে ওইদিন কয়েকজন সাংবাদিক ছবি এবং তথ্য না নিয়ে বেরিয়ে আসে। এরপর শুর“ হয় দরকষাকষি। অভিযোগ রয়েছে, ধৃত মুল আসামী সম্ভু হালদার জানায় সে উক্ত প্রাইভেটকারটি যখন ভাড়া করে তখন চালক ছিল শেখ আমান উল্যাহ বাবু। কলারোয়া বাজার থেকে আকর্ষিক ভাবে বাবু তুলে নেয় কাজী মোফাখ খায়র“ল ইসলামকে। সম্ভু ওইদিন ভারতে ফিরে যাওয়ার পথে ফুলতলা বাজারে তাদের ৪ জনকে আটক করে। এসময় ধৃতদের আটক করে আটককৃত গাড়িটি অপর একজন অল্পবয়স্ক গাড়ি চালক দিয়ে চালিয়ে সাতক্ষীরা বিজিবি হেডকোয়াটারে নিয়ে আসে। সেখানে এসেই শুর“ হয় দফারফা। অভিযোগ রয়েছে ওই প্রাইভেট কারের মুল চালক শেখ আমান উল্যাহ বাবুকে মোটা অংকের দফারফা করেই আলোচিত এই মামলায় সাক্ষী করে তাকে বিজিবি হেড কোয়াটার থেকে ছেড়ে দেয়া হয়। এরপর ওইদিন সন্ধ্যায় বাকি ৩ জনকে আসামী করে কলারোয়া থানায় মামলা দায়ের পূর্বক সোপর্দ করা হয়। কলারোয়া থানার পুলিশ পরদিন তাদের কারাগারে প্রেরণ করেন। একই সাথে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করা হয়। আবেদনের প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালত দীর্ঘ সুনানি অšে— মামলার নথি পর্যালোচনা করে আসামিদের জেলগেটে দুই দিনের জিঞ্জাসাবাদের অনুমতি প্রদান করেন।
এদিকে আটক কৃত ম্যাগনেট সিমানা পিলারটি যাচাই করার জন্য আদালত নির্দেশ দিলেও সেটি পুলিশের হেফাজতে না দিয়ে বিজিবি’র হেফাজতে রাখা হয়। ফলে পুলিশ ম্যাগনেটটি পরীক্ষার জন্য বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠাতে পারেনি। সেটি প্রকৃত সীমানা পিলার কি না তা পরীক্ষার রিপোর্ট ছাড়া বলা সম্ভব নয় বলে পুলিশ জানায়। এদিকে প্রাইভেটকারের মালিক সদর উপজেলার মুকুন্দপুর গ্রামের আব্দুল খালেক এর ছেলে আইনুল হক আইনজীবির মাধ্যমে আটক কৃত গাড়িটি নিজ জিম্মায় নেয়ার জন্য গত ২০মে বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৪ এর আদলতে আবেদন করেন। আবেদনে গাড়িটির মালিকানা যাচাই পুর্বক নিজ জিম্মায় নেয়ার আবেদন পত্রে উলেখ করেন যে, ঘটনার দিন আমার নিয়োগকৃত চালক উক্ত গাড়িতে ছিল না সে ষড়যন্ত্র করে অন্যের মাধ্যমে চোরাকারবারীদের সাথে যোগসাজস করে অর্থের বিনিময়ে উক্ত মালামাল পাচার করার সময় আটক হয়। এ বিষযে আবেদনকারি কিছুই জানেন না বলে জানান। বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল আদালতের বিচারক বিষয়টির শুনানির পর উচ্চ আদালতে উপস্থাপনের জন্য আদেশ দেন। এরপর তিনি বিজ্ঞ দায়রা জজ আদালতে রিভিশন দাখিল করেন। দাখিলকৃত আবেদনে ১নং সাক্ষী আমান উল্যাহ ১ম পক্ষের নিয়োগকৃত কারটির প্রকৃত চালক। তারই অসম্মতিতে এবং অগোচরে গাড়ির চালক অবৈধ ভাবে ঘটনার দিন আটককৃত আসামীদের সাথে যোগাযোগ পূর্বক কথিত সীমানা পিলারে থাকা ম্যাগনেট ভারতে পাচারের চেষ্টা করে। বিজিবি কর্তৃক পিলার আটক সংক্রান্ত আলোচিত মামলাটি নিয়ে বর্তমানে অভিজ্ঞ মহলে আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছে। কারণ হিসেবে সংশিষ্ট একাধিক সূত্রের দাবী মুল চালক বাবু হলে মোফাক খায়র“ল কোথা থেকে এলো। আবার মুল চালককে বিজিবি সাক্ষী করলো কেন? অভিযানের নিদৃষ্ট স্থানের কাউকে এই মামলায় কেন সাক্ষী করা হয়নি? ঘটনার সময় কি উক্ত স্থানে একটি লোকও ছিলনা? তাহলে বিশাল ফাকা জায়গায় এই অভিযানের জন্যই কি প্রাইভেট কারের মুল চালক বাবু বসে ছিল? না অন্য কোন ঘটনা? না উক্ত মালের মালিক বাবু নিজেই। না পরিস্থিতি বুঝে বিজিবিকে এগিয়ে দিয়ে চালক বাবু নিজেই সটকে পড়ে। পরে তাকে বিজিবি হেড কোয়াটারে নিয়ে আসে। না এরমধ্যে দফা রফা হয়েছে এসব প্রশ্ন আর ঘটনা নিয়ে নানা প্রশ্নের উদ্রেক করেছে অভিজ্ঞ মহলের মনে। বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখে প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন ভূক্তভোগিরা।