স্টাফ রিপোর্টার: রাত পোহালেই ভোটযুদ্ধ।রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট মহানগরী পোস্টারে পোস্টারেছেয়েগেছে।মাইকের প্রচারে সরগরম নগরীর প্রতিটি পাড়া-মহল্লা। তবে উৎসব আমেজের পাশাপাশিনগরবাসীর মনে বিরাজ করছে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা,উৎসব, উত্তেজনা। জাতীয় নির্বাচনের আগে চার সিটি নির্বাচন হয়ে উঠেছে প্রধান দুই জোটের জন্যমর্যাদার লড়াই। মাঠে সক্রিয় শীর্ষ নেতারা। প্রচার-প্রচারণা শেষ। চলছে শেষমুহূর্তের হিসাব মেলানো। চার সিটিতেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ক্ষমতাসীনআওয়ামী লীগ ও ১৪ দল সমর্থিত প্রার্থী এবং প্রধান বিরোধী দলের নেতৃত্বাধীন১৮ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থী। তাদের ব্যক্তি ইমেজ ছাড়িয়ে এখন জোট-মহাজোটইস্যু ভোটের ময়দানে। জাতীয় পার্টিরভূমিকা রহস্যময়। চার সিটির নির্বাচনী পরিবেশ আলাদা। প্রার্থীদের ব্যক্তিইমেজ আর জোট রাজনীতির হিসাব নিকাশ মিলিয়ে জয়-পরাজয়ের আলোচনা চলছে সর্বত্র।ইতিমধ্যে এ নির্বাচনকে ঘিরে নির্বাচনী লড়াই জমে উঠেছে জাতীয় পর্যায়েও।জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি তোলাহয়েছে গতকাল। এদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে সারা দেশবাসীর দৃষ্টি এখনরাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশনের দিকে। কোনো কোনো জায়গায় দুই পক্ষের মধ্যেউত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।
চার সিটিতে ১৮ ও ১৪ দলীয় জোট সমর্থিতপ্রার্থীর মধ্যে আসল লড়াই হবে। এ কারণে
এদিকে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে নির্বাচন কমিশন ও আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। গতকালইনির্বাচনী এলাকায় বিজিবি টহল দেয়া শুরু করেছে।
রাজশাহী সকাল থেকে রাত পর্যন্ত টানা গণসংযোগ, পথসভা, সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে প্রচার-প্রচারণা শেষ করলেন রাজশাহী সিটিকরপোরেশন নির্বাচনের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালথেকেই মাঠে নামেন তিন মেয়র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা এএইচএম খায়রুজ্জামানলিটন, বিএনপি নেতা মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হাবিবুররহমান। মাঠে ব্যস্ত সময় পার করেছেন ২২১ জন কাউন্সিলর প্রার্থী। নাওয়া-খাওয়াভুলে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছোটেন তারা।
বিকালে স্থানীয় একটি কমিউনিটিসেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে খায়রুজ্জামান লিটন শেষবারের মতো তুলে ধরেন তারউন্নয়ন কর্মকান্ড। বুলবুলও বিভিন্ন পথসভায় দেন নানান প্রতিশ্রুতি। অন্যদিকেনির্বাচনকে সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকেওনেয়া হয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নগরীতে মোতায়েন করা হয়েছে বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ বিজিবি।
খুলনা সিটিকরপোরেশন নির্বাচনের শেষ মুহূর্তের প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময়পার করলেন প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা। তবে প্রচারণা সময় এবং সাংবাদিকসম্মেলনের মাধ্যমে একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করছেনপ্রার্থীরা। এবারের নির্বাচনে তিন মেয়র প্রার্থী আওয়ামী লীগ সমর্থিতসম্মিলিত নাগরিক কমিটির তালুকদার আব্দুল খালেক (তালা), বিএনপি সমর্থিতঐক্যবদ্ধ নাগরিকফোরামের মেয়র প্রার্থী মনিরুজ্জামান মনি (আনারস) এবংজাতীয় পার্টি সমর্থিত খুলনা নাগরিক উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির শফিকুল ইসলাম মধু (দোয়াত-কলম) প্রতিদন্দ্বিতা করছেন। সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩১টি ওয়ার্ডে ১৩৬জন প্রার্থী ও সংরক্ষিত ১০টি ওয়ার্ডে মহিলা কাউন্সিলর পদে ৪৫ জন প্রার্থীরয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রচারণার শেষ দিনে পুরো নির্বাচনী এলাকা চষেবেড়ান মেয়র প্রার্থীরা। কিন্তু আলোচনার কেন্দ্রে প্রধান দুই রাজনৈতিক জোটেরপ্রার্থী। জয়-পরাজয়ের লড়াইয়ে আছেন তারা। অরাজনৈতিক নির্বাচনে এখন পুরোরাজনৈতিক আমেজ বিরাজ করছে। ভোটাররা ভাবছেন, নির্বাচনে মেয়র পদে তিনপ্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও শেষ পর্যন্ত মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতেযাচ্ছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত তালুকদার আব্দুল খালেক এবং বিএনপি সমর্থিতমনিরুজ্জামান মনির মধ্যে। জাতীয় পার্টি সমর্থিত অপর মেয়র প্রার্থী শফিকুলইসলাম মধু লড়ছেন সম্মানজনক ভোটের আশায়। খালেক না মনি, কে পাবেন নগর পিতারদায়িত্ব তা এই মুহূর্তে বলা না গেলেও উভয়ের মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাএবং জয়-পরাজয় নির্ধারণ হবে সামান্য ভোটের ব্যবধানে। আর এমনটি মনে করছেনখুলনার স্থানীয় নির্বাচন বিশ্লেষকরা।
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রচারের শেষ দিনেভোটারদের কাছে বার্তা পৌঁছে দিতে বরিশালের ঘাটে ঘাটে প্ল্যাকার্ড হাতেঅবস্থান নিয়ে লিফলেট বিলি করেছেন প্রধান দুই প্রার্থীর কর্মীরা। গতকালবৃহস্পতিবার সকালে কীর্তনখোলার লঞ্চঘাটে ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি লঞ্চ থেকেযাত্রী নামার সঙ্গে সঙ্গে প্রার্থীদের প্রতিনিধিরা লিফলেট হাতে এগিয়েযাচ্ছেন যাত্রীদের দিকে। কীর্তন খোলার খেয়াঘাটেও দেখা যায় একই চিত্র।
একইভাবে প্রচার চালাচ্ছেন সম্মিলিত নাগরিক কমিটির মেয়রপ্রার্থী জেলা বিএনপির সভাপতি আহসান হাবিব কামালের কর্মীরাও। তবে মেয়র পদেরআরেক প্রার্থী মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হক খান মামুনেরকোনো কর্মীকে লঞ্চঘাটে দেখা যায়নি। এদিকে নির্বাচন সামনে রেখে বরিশালমুখীলঞ্চগুলোতে যাত্রীদের ভিড়ও বেড়ে গেছে। লঞ্চঘাট ঘুরে নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষেরসঙ্গে কথা বলে দেখা গেল- হিরন আর কামালের মধ্যে ‘হাড্ডাহাড্ডি লড়াই‘ হবেবলে তারা মানে করছেন। বৃহস্পতিবারই চার সিটিতে বিজিবি মোতায়েনের কথা রয়েছে।বরিশাল সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে তিন প্রার্থী ছাড়াও সাধারণ ওয়ার্ডেরকাউন্সিলর পদে ১১৬ জন এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলরের ৩০টি পদের জন্য ৪৫জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের মধ্যে থেকে পছন্দের জনপ্রতিধিকেনির্বাচিত করতে শনিবার একশটি কেন্দ্রে ২ লাখ ১১ হাজার ২৫৭ জন ভোটার ভোটদেবেন।
সিলেটসিটি নির্বাচনের তফসিলঘোষণার পরথেকে এপর্যন্তকোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। তবে নির্বাচনী প্রচারণারশেষ মুহূর্তেএসে প্রতিপক্ষের সহিংসতার আশঙ্কা করছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আরিফুল হকচৌধুরী। বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপিরকেন্দ্রীয়নেতা ড.মোশাররফহোসেন নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি জানান। তবে এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকারকরে আরিফুল হকের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের পাল্টা অভিযোগতুলেছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী বদর উদ্দীন আহমেদ কামরান। সিলেটে শেষমুহূর্তে প্রচার তুঙ্গে উঠেছে।প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পক্ষে অনেক সন্ত্রাসী আছে অভিযোগ তুলে জীবনেরনিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সিলেটের মেয়রপ্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদকামরান। গতকাল বৃহস্পতিবার কাজীরবাজারে নিজের প্রধান নির্বাচনী প্রচারকার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে শঙ্কার কথা জানান সরকারি দল সমর্থিত এই মেয়রপ্রার্থী। আগের দিন বিরোধী দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীরপক্ষে প্রচারে এসে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকারমোশাররফ হোসেনকামরানের বিরুদ্ধে বাইরে থেকে সন্ত্রাসী জড়ো করা এবং কালো টাকা ছড়ানোরঅভিযোগ করেন। তার ওই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সংবাদ সম্মেলন করেন কামরান।তিনি বলেন, বরিশালে একটি ঘটনা ঘটেছে। সেটি একটি শঙ্কার বিষয়। এখানে আমাদেরবিপরীতপক্ষ সন্ত্রাসীদের লালন করেন।
চার সিটি করপোরেশনের মধ্যে সিলেটসিটি করপোরেশনের ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে মোট ভোটার ২ লাখ ৯১ হাজার ৪৬ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫৭ হাজার ১৮১ জন, মহিলা ভোটার ১ লাখ ৩৩ হাজার ৮৬৫জন। বরিশাল সিটি করপোরেশনের মোট ভোটার ২ লাখ ১০ হাজার ৩৪৩ জন। এর মধ্যেপুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭ হাজার ৯২ জন, মহিলা ১ লাখ ৩ হাজার ২৫৪ জন। রাজশাহীসিটি করপোরেশনে ৩০টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ২লাখ ৮৬ হাজার ৯২৭ জন। খুলনা সিটি করপোরেশনের ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১০টিসংরক্ষিত ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৪০ হাজার ৬৪৭ জন।