জি নিউজ ঃ- গণজাগরণ মঞ্চ থেকে মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকারকে ‘অব্যাহতি’ দিয়েছেন গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক দাবিদার কয়েকজন৷ যাঁরা এই অব্যাহতি দিয়েছেন তাঁদের প্রধান কামাল পাশা চৌধুরী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার সেলের একজন সদস্যএর প্রতিক্রিয়ায় ইমরান এইচ সরকার বিস্ময় প্রকাশ করে জানিয়েছেন, ‘‘প্রয়োজন ফুরিয়ে যাওয়ায় সরকার গণজাগরণ মঞ্চের কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করে দিতে চায়, ধ্বংস করে দিতে চায়৷ আর এ কারণেই পরিকল্পিতভাবে এ ধরনের কাজ করা হচ্ছে।শনিবার শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ইমরান এইচ সরকারকে মুখপাত্র’র পদ থেকে অব্যাহতি দেয়ার কথা জানান গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক পরিচয়দানকারী কয়েকজন৷ সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘‘এখন থেকে ৫ সদস্যের একটি প্যানেল মঞ্চের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করবে, যাদের নাম অচিরেই জানানো হবে৷ ‘গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ও সংগঠক’ ব্যানারে এই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান কামাল পাশা চৌধুরী৷ তিনি মুক্তিযোদ্ধা ছাত্র কমান্ড-এর সাবেক আহ্বায়ক৷ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অসীম কুমার উকিল জানান, কামাল পাশা চৌধুরী ২৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার সেলে কাজ করছেন৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা থেকে পাস করা কামাল পাশা চৌধুরীর ‘ফেসবুকে’ পেশা হিসেবে লেখা আছে ফ্রিল্যান্স আর্টিস্ট৷ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ১৫-২০ জনের মধ্যে অর্ধেকই আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট৷ তাঁরা হলেন, কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক শিউলি বিনতে মহসিন, সোহেলী পারভিন মনি, হামিদা বেগম, উপ-কমিটির সদস্য এস এম এনামুল হক আবির, চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সহ-সম্পাদক রাশিদা হক কনিকা৷ এছাড়াও ছিলেন গৌরব-৭১ এর সভাপতি আজাদ আবুল কালাম, সাধারণ সম্পাদক এফ এম শাহীন, অপরাজেয় বাংলা’র সভাপতি এইচ রহমান নিলু৷কামাল পাশা বলেন, ‘‘বিতর্কিত হয়ে পড়ার কারণে ডা. ইমরান এইচ সরকারকে সাময়িকভাবে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্রের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হলো৷ এই মুহূর্ত থেকে তাঁর কোনো বক্তব্য ও কর্মসূচি গণজাগরণ মঞ্চের বক্তব্য ও কর্মসূচি বলে বিবেচিত হবে না৷কামাল পাশা নিজেকে গণজাগরণ মঞ্চের একজন সংগঠক দাবি করে বলেন, ‘‘শুরু থেকেই আমরা ছিলাম, আমরা শুরুর দিকে বিভিন্ন মিডিয়াতে ইন্টারভিউ দিয়েছি৷ পরবর্তীতে শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকায় একজনকে কথা বলতে দিতাম৷ তবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সব পর্যায়েই থাকতাম।ইমরানকে কিভাবে অব্যাহতি দেয়া হলো জানতে চাইলে কামাল পাশা বলেন, ‘‘তিনি যেভাবে মুখপাত্র হয়েছিলেন; সেভাবেই অব্যাহতি দেয়া হয়েছে৷গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের শুরু থেকে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন থাকলেও ইমরানবিরোধী এই সংবাদ সম্মেলনে কোনো ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধি ছিলেন না৷ আর গত এক বছরের আন্দোলনে ইমরানের সঙ্গে বিভিন্ন সংগঠনের যাঁরা ছিলেন, তাঁদেরও এই সংবাদ দেখা যায়নি৷এ বিষয়ে কামাল পাশা বলেন, ‘‘আন্দোলনের শুরু থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ২০৫টি সংগঠন সংহতি প্রকাশ করেছে৷ আমরা অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি; তাঁরা আমাদের সঙ্গে থাকবে৷অন্যদিকে ডা. ইমরান এইচ সরকার তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘‘আমি যতটুকু জেনেছি, যাঁরা সংবাদ সম্মেলন করেছেন, তাঁরা আওয়ামী লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতার নেতৃত্বে করেছেন৷ এর আগেও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতারা বক্তব্য দিয়েছেন যে, গণজাগরণ মঞ্চের কোনো প্রয়োজন নেই৷ইমরান অভিযোগ করে বলেন, ‘‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ার প্রতিবাদ করায় সরকার সমর্থক একটি গোষ্ঠী আমার ওপর ক্ষুব্ধ৷ এসব থেকে খুব সহজেই ধারণা করা যায়, প্রয়োজন ফুরিয়ে যাওয়ায় সরকার গণজাগরণ মঞ্চের কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করে দিতে চায়৷ ধ্বংস করে দিতে চায়৷ আর এ কারণেই পরিকল্পিতভাবে এ ধরনের কাজ করা হচ্ছে৷তিনি বলেন, ‘‘গণজাগরণ মঞ্চ কোনো রাজনৈতিক দল নয়৷ এর মুখপাত্র নির্ধারণ করার দায়িত্বও কোনো একক রাজনৈতিক দলের নেই৷ এভাবে তারা গণজাগরণ মঞ্চকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে৷’’ যাঁরা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন তাঁদের অনেককে চেনেন না জানিয়ে ইমরান বলেন, ‘‘এদের কখনো দেখেছি বলে আমি মনে করতে পারছি না৷ তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে শুনেছি, আওয়ামী লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতার নেতৃত্বে এ সংবাদ সম্মেলন হয়েছে৷ এখানে যারা ছিলেন তাঁরা বেশিরভাগই আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের কমিটি–উপ-কমিটিতে রয়েছেন৷তিনি বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষ এ মঞ্চ তৈরি করেছে তাই জনগণই ঠিক করবে গণজাগরণ মঞ্চ কিভাবে চলবে, এর ভবিষ্যত কী হবে৷শুক্রবার হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফীর ‘‘আওয়ামী লীগ- ছাত্রলীগ আমাদের বন্ধু’’ – এই বক্তব্যের বিষয়টি টেনে এনে ইমরান বলেন, ‘‘হেফাজত যে বক্তব্য দিয়েছে, তা থেকেও বোঝা যায় সরকারের অবস্থান এখন গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে৷উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধাপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসির রায়ের প্রতিবাদে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এ্যাক্টিভিস্টরা রাস্তায় নেমে আসেন৷ সেদিন রাতেই শাহবাগে জড়ো হন হাজার হাজার মানুষ৷ গড়ে ওঠে গণজাগরণ মঞ্চ৷ ডা. ইমরান এইচ সরকার প্রথম থেকেই এর সমন্বয়ক এবং মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করে আসছেন৷ গণজাগরণ মঞ্চ শাহবাগে টানা অবস্থানের মাধ্যমে তাদের দাবি আদায় করে নেয়৷ তাদের দাবির মুখে ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের বিধান করা হয়৷ এ প্রতিবেদনটি ডিডাব্লিউ এর। আর আপিলে কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় হয়৷ যা কার্যকর হয়েছে গত ডিসেম্বরে৷ গণজাগরণ মঞ্চের দাবির কারণে যুদ্ধাপরাধী সংগঠনের বিচারের বিধানও করা হয়৷ আর সেই আইনে এখন জামায়াতেরও বিচার হবে৷