চট্টগ্রামে দিনে গড়ে নয়টি বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন

bissed

অনলাইন ডেস্ক:- গত বছরের ১৯ আগস্ট পছন্দ করে ফিরোজ মিয়াকে বিয়ে করেছিলেন পোশাকশ্রমিক সোমা আক্তার বিয়ের পর থেকে সোমার বেতনের পুরো টাকাই নিয়ে যেতেন ফিরোজ শুধু বেতনের টাকাই নয়, বাবার বাড়ি থেকে যৌতুক আনারও দাবি করেন তিনি
নির্যাতনের মাত্রা বাড়তে থাকায় গত জুন আদালতে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেন সোমা অভিযোগ, টাকার লোভেই বিয়ে করেছিলেন স্বামী চট্টগ্রামে সোমার মতো নিম্নবিত্ত পোশাক কারখানায় কর্মরতরাই বিচ্ছেদের পথ বেশি বেছে নিচ্ছেন   সিটি করপোরেশনের তথ্য পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিবছর যে পরিমাণ বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে, তার প্রায় ৭০ শতাংশের জন্যই আবেদন করেন নারীরা তাঁদের বেশির ভাগই আবার নিম্নবিত্ত পোশাক কারখানায় কর্মরত বিয়ের পর পাহাড়তলীর বিজলী বেগম জানতে পারেন, স্বামী ইউনুস মিয়া আগেই বিয়ে করেছিলেন সেই ঘরে একটি সন্তান রয়েছে ছাড়া ইউনুস মিয়া মাদকাসক্ত তাঁর প্রতারণা মাদকাসক্তি সহ্য করতে না পেরে নিজেই বিচ্ছেদের পথ বেছে নিয়েছেন বলে আবেদনে উল্লেখ করেন বিজলী বেগম
সম্প্রতি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন গত চার অর্থবছরে সালিসি আদালতে মোট কতটি বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে, তার একটি তালিকা করেছে ওই তালিকা থেকে দেখা যায়, চট্টগ্রামে বিবাহবিচ্ছেদ ক্রমাগত বাড়ছে আর বিচ্ছেদ আবেদনের ক্ষেত্রে মেয়েরাই এগিয়ে পাঁচ বছর আগেও যেখানে গড়ে দৈনিক পাঁচটি বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করা হতো, বর্তমানে এর সংখ্যা গড়ে প্রায় নয়টি
২০০৯১০ সালে (জুন থেকে জুন ধরে) বিবাহবিচ্ছেদের আবেদনের সংখ্যা ছিল এক হাজার ৯৫২টি ২০১০ সালে তা বেড়ে হয় দুই হাজার ৮৮১টি ২০১১ সালে তিন হাজার ৪০০টি, ২০১২ সালে তিন হাজার ৪৪২, ২০১৩ সালে দুই আদালতে মোট তিন হাজার ৪৫৪টি বিচ্ছেদের আবেদন জমা পড়েছে
রেকর্ডপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, উচ্চবিত্ত আর নিম্নবিত্তই হোক, সব আবেদনের ভাষা প্রায় একই মেয়েদের বিবাহবিচ্ছেদের আবেদনের প্রধান কারণগুলো হচ্ছে যৌতুকের জন্য নির্যাতন, স্বামীর পরকীয়া বা দ্বিতীয় বিয়ে, মতের বনিবনা না হওয়া, শাশুড়ির সঙ্গে দ্বন্দ্ব, স্বামীর মাদকাসক্তি আর পুরুষের আবেদনের প্রধান কারণ দেখানো হয়, স্ত্রীর পরকীয়া বা অনৈতিক সম্পর্ক, সংসারে মানিয়ে না চলা, স্বামীর কথা না শোনা ইত্যাদি
চট্টগ্রামের দুটি সালিসি আদালতের মধ্যে আদালত বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি রেকর্ডে তাই দেখা গেছে জানা গেছে, নগরের ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৯টি ওয়ার্ড সালিসি আদালতএর অন্তর্ভুক্ত সংখ্যায় কম হলেও এই আদালতের এখতিয়ারভুক্ত এলাকাগুলোতে পোশাকশ্রমিকেরা বেশি থাকেন ফলে এই আদালতে বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যাও বেশি গত চার বছরে আদালত মোট ছয় হাজার ৬৫৬টি আবেদন জমা পড়েছে অপরদিকে আদালত জমা পড়া আবেদনের সংখ্যা চার হাজার ৩৩০টি
কেন বাড়ছে বিচ্ছেদের সংখ্যাএর কারণ হিসেবে বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির চট্টগ্রাম বিভাগের প্রধান ওয়াহিদা ইদরিস বলেন, মেয়েরা এখন আগের তুলনায় কর্মক্ষম অধিকারসচেতন এসব কারণে অনেক সময় নির্যাতন সহ্য না করে প্রতিবাদ করছে তবে সব দোষ পুরুষের একার নয় সহমর্মিতা, বিশ্বাস, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ কমে যাচ্ছে তখন তুচ্ছ কারণও বড় হয়ে দেখা দেয় বিবাহবিচ্ছেদ কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয়
সালিস কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে বিবাহবিচ্ছেদের হার কমানো সম্ভব বলেও মনে করেন ওয়াহিদা ইদরিস জন্য পরিবারপরিজন সংশ্লিষ্টদেরও দায়িত্ব রয়েছে বলে তিনি মনে করেন
আদালত সূত্রে জানা গেছে, বিচ্ছেদের আবেদন করার পর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সালিসের নোটিশ পেয়ে হাজির হচ্ছেন না আবেদনকারীরা ফলে মীমাংসা বা সালিসের সুযোগ কম পাওয়া যায় গতকাল বৃহস্পতিবার আদালত ১১ জনের হাজির হওয়ার কথা ছিল কিন্তু আসেন চারজন
আইন অনুযায়ী, আবেদন জমা পড়ার পর দুই পক্ষকে এক মাসের নোটিশ দেন আদালত সময়ের মধ্যে তাঁরা হাজির হলে আদালত দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করেন সমঝোতা না হলে ৯০ দিনের মধ্যে তালাক কার্যকর হয়ে যায়
বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সচিব রশিদ আহমদ বলেন, যাঁরা আবেদন করেন, তাঁদের খুব কমসংখ্যক সমঝোতায় আসেন ফলে বিচ্ছেদের হার বাড়ছে
সম্প্রতি বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেছেন এমন একজন নারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে সংসারটা টিকিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেছি কিন্তু নির্যাতনের মাত্রা সীমা ছাড়িয়ে গেছে তাই শেষ পর্যন্ত ১২ বছরের সংসার থেকে বিচ্ছেদের পথেই হাঁটতে হলো আমাকেসূত্র:প্রথম আলো

 

Exit mobile version