অনলাইন ডেস্কঃ- অন্যান্য যুদ্ধের মতো সিরিয়া যুদ্ধেও মুসলিম নারীদের অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে৷ তাঁরা লড়াই করছেন ‘পবিত্র যুদ্ধ’ বা জিহাদের জন্য৷ এই যুদ্ধে জার্মানি থেকে আসা মেয়েদের সংখ্যা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ অনেক যুদ্ধে মুসলিম নারীদের অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছেবোরকা বা হিজাব পরে মেয়েরা অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছেন, এই দৃশ্য আকৃষ্ট করে মানুষকে৷ ইন্টারনেটে অসংখ্য ক্লিক আসে, পত্রপত্রিকার সংস্করণ বেড়ে যায়৷ ‘‘জিহাদে অংশগ্রহণকারিণীদের ব্যাপারে একটা মুগ্ধতা দেখা যায় মানুষের মধ্যে৷” বলেন বার্লিনের বিজ্ঞান ও রাজনীতি ফাউন্ডেশনের ইসলাম বিশেষজ্ঞ গিডো শ্টাইনব্যার্গ৷এই ধরনের প্রবণতা গত বছরগুলিতে বার বারই লক্ষ্য করা গিয়েছে৷ সংঘটিত হচ্ছে প্যালেস্টাইন, ইরাক ও চেচনিয়ায় নারীদের দ্বারা আত্মঘাতী হামলা৷ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মেয়েরা যুদ্ধে অংশ নিলে মিডিয়ার নজর কাড়ে বেশি৷যুদ্ধে যোগ দিচ্ছেন অল্পবয়সি নারীরা-জার্মানির সংবিধান সুরক্ষা দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সিরিয়ায় আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত ৮০,০০০ বিদ্রোহীর মধ্যে ৩০০ জন জার্মানি থেকে আসা৷ এর মধ্যে সম্ভবত ৪০ জন নারী৷ অবশ্য সঠিক সংখ্যাটা জানা যায়নি৷ কেননা জার্মানি থেকে সিরিয়ায় গেলেই কেউ যে বিদ্রোহীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবেন, এমন কথা নেই৷এছাড়া অনেকেই আবার তাড়াতাড়ি জার্মানিতে ফিরে আসেন৷লক্ষণীয় যে, যুদ্ধে অংশ নেওয়া মেয়েদের মধ্যে অনেকেই খুব অল্পবয়সি৷ গত বছর কন্সটানৎস শহরের হাইস্কুলের ছাত্রী সারাহ-এর ঘটনাটি সংবাদের শিরোনাম হয়েছিল৷১৫ বছর বয়সি এই ছাত্রী তুরস্কের ওপর দিয়ে সিরিয়ায় যায় ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে৷ ইন্টারনেটের মাধ্যমে অস্ত্রসহ ছবি দেখিয়ে মেয়েদের যুদ্ধে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানায় সে৷ এই প্রসঙ্গে জঙ্গিবাদ বিশেষজ্ঞ হলগার শ্মিট বলেন, ‘‘ঘটনাটি এত সংবেদনশীল এই কারণে, সম্ভবত এই মেয়েটি সবচেয়ে কমবয়সি, যে সংকটপূর্ণ অঞ্চলে গিয়ে যুদ্ধে সক্রিয় হওয়ার কথা জানিয়েছে৷” মেয়েদের সহায়ক শক্তি হিসাবে দেখা হয়-ইসলাম বিশেষজ্ঞ শ্টাইনব্যার্গ অবশ্য বিষয়টিকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দিতে চান না৷ তাঁর মতে, মেয়েটি নিজেকে অস্ত্রসহ দেখালেও তা কোনো সিরিয়াস ট্রেনিং কিনা এতে বোঝা যায় না৷ ইরাক ও প্যালেস্টাইনের মতো সিরিয়ায় আত্মঘাতী হামলা এখন পর্যন্ত লক্ষ্য করা যায়নি৷”বহু মুসলিম যোদ্ধা মেয়েদের শুধু সহায়ক শক্তি হিসাবে দেখতে চান, সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করাটা পছন্দ করেন না৷ ইন্টারনেটে ভিডিও প্রচারণার মাধ্যমে পুরুষদের নৈতিক সাহস ও সমর্থন দেওয়া হয়৷তবে অন্যান্য ইসলাম বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এটা শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র৷ খুব শিগগিরই হয়তো খবর শোনা যাবে, নারী আত্মঘাতী হামলাকারীরা সিরিয়ায় জিহাদে অংশ নিচ্ছেন৷ প্রতিশোধস্পৃহা-জঙ্গিগ্রুপের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যক্তিগত কারণেই মেয়েরা জিহাদে অংশগ্রহণ করে থাকেন৷ যেমন ইরাক, প্যালেস্টাইন, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে৷মেয়েদের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার একটি বড় কারণ হলো প্রতিশোধস্পৃহা৷ স্বামী, পুত্র বা কোনো নিকট আত্মীয় হারিয়ে অনেক মেয়েই প্রতিশোধ নিতে চান যুদ্ধে যোগ দিয়ে৷ চেচনিয়ার যুদ্ধে তথাকথিত ‘কৃষ্ণ বিধবাদের’ কথা শোনা যায়৷ সেখানে রুশ সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধে নিহতদের বিধবা স্ত্রীদের অনেকেই আত্মঘাতী হামলায় জড়িয়ে পড়েন৷আবার অনেক মেয়ে মনে করেন ‘কাফের’ বা বিধর্মীদের বিরুদ্ধে ইসলামের জন্য লড়লে পাপ মোচন বা গুণাহ মাফ হবে৷ দায়িত্ব সবারই-সংবিধান সুরক্ষা দপ্তরের মতে, জিহাদ থেকে জার্মানিতে ফিরে আসা নারী পুরুষ বড় সমস্যা হয়ে উঠতে পারেন৷তাঁরা প্রচণ্ড ভাবাদর্শ তাড়িত, সম্ভবত ট্রমার শিকারও৷ তাই জার্মানিতে সহিংস হামলা চালানোর পরিকল্পনা করা অসম্ভব নয় তাঁদের পক্ষে৷ তাই জার্মান মেয়েদের ইসলামি যুদ্ধে অংশ নেওয়ার ব্যাপারটি ইদানীং জনসমক্ষে তুলে ধরা হচ্ছে৷ জঙ্গিবাদ বিশেষজ্ঞ শ্মিট বলেন, ‘‘তাদের তরফ থেকে আসা ঝুঁকিটা একেবারে কম নয়৷ এ জন্যই ‘ফেডারেল সংবিধান সুরক্ষা দপ্তর’ অর্থাৎ জার্মানির অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা এই ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায়৷”জিহাদ থেকে ফিরে আসা মানুষদের খুঁজে বের করে তাঁদের অপরাধকর্ম তথা চরমপন্থা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করাটাই হবে আগামী বছরগুলিতে জার্মানির জন্য একটা বড় কাজ৷ এ ক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বন্ধুবান্ধব, সমাজকর্মী ও নিরাপত্তারক্ষাকারীদের৷ সূত্র-ডি ডাব্লিউ।