আমাদের সমাজে এমন কিছু মানুষ রয়েছেন, যারা নীরবে জ্ঞানের আলো ছড়ান। তাদের সেবাকে চোখে দেখা যায় না। তেমনি একজন রিয়াজুল হক। বয়স ৬০ পার হয়েছে। তার এ জীবনের ৩৩টা বছর পার করেছেন ফেরি করে বই বিক্রি করে। যদিও এখন তার এটা পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু জীবিকার পাশাপাশি তার ভিতর একটা সৎ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য দেখা গেছে। আর সেটা হচ্ছে মানুষের হাতে জ্ঞানের বই তুলে দিয়ে তার লক্ষ্য উদ্দেশ্যটা পূরণ করা। মানুষের হাতে জ্ঞানের বই তুলে দিতে পেরে তিনি আনন্দ পান, মজা পান। তাই এ পেশায় তার আয় কম হলেও তিনি অন্য কোনো পেশায় নামছেন না। তার ভিতরের এই লক্ষ্য উদ্দেশ্যটা মানুষকে হাজার বছরের জন্য ঋণী করে রাখবে। কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার প্রত্যন্ত টালুয়ার চর গ্রামে রিয়াজুল হকের বাড়ি। ঘরে স্ত্রী জরিনা খাতুন আর ৩ মেয়ে ও এক ছেলে সন্তান রয়েছে। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন আর ছেলেকে বিয়ে করিয়েছেন। সবার ছোট সাজেদা খাতুন কলেজে একাদশ শ্রেণীতে লেখাপড়া করে। জমাজমি বলতে শুধু বাড়ির ভিটা। এ ছাড়া তার এক কাঠা সম্পদও নেই। রিয়াজুলের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বয়স ১৮/২০ হবে।
সে সময়ে রৌমারী সিজি জামান উচ্চ বিদ্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প ছিল। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করতেন এবং প্রশিক্ষণও গ্রহণ করেন। যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেন, কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় তার নাম নেই। জানা গেছে, বৃহত্তর রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা, রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড সকল স্থানে রিয়াজুল ঘুরে বেড়িয়েছেন বইয়ের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে। যেখানেই কোনো মেলা বা অনুষ্ঠান এবং লোক সমাগম হবে সেখানেই দেখা মিলবে রিয়াজুলের। আর রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলার এমন কোনো গ্রাম নেই যেখানে ফেরি করে বই বিক্রি করেনি রিয়াজুল হক। হাট-ঘাট, গ্রাম-বন্দর সব স্থানেই তিনি বই বিক্রি করেন। রিয়াজুল হক বলেন, এমনিতেই কোনো লাইব্রেরি দোকানে মানুষ বই কিনতে যায় না। কিন্তু যদি হাতের কাছে একটা বই দেয়া হয় তাহলে অনেকে তা কেনেন। আর কিনলে সে তখন বইটা পড়বে। এতে সে জ্ঞান লাভ করবে। তার শেষ ইচ্ছে, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত যাতে মানুষের হাতে জ্ঞানের বই তুলে দিতে পারেন। বই পড়লে মানুষের মাঝে যে হিংসা, বিদ্বেষ কমে যায় তা তিনি জানতেন।
সম্পাদনা/শাবানা মন্ডল /০১.৪৮ঘ /২২ ফেব্রয়ারি