জি নিউজ ঃ বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সোমবার এক প্রতিবাদ সমাবেশের পর টেলিভিশন চ্যানেলের গাড়িসহ বেশ কয়েকটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থির হয়ে ওঠার পর থেকে হরতাল বা অন্যান্য আন্দোলন কর্মসূচির সংবাদ সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা গণমাধ্যম কর্মীদের এ ধরনের হামলার মুখে পড়তে হচ্ছে প্রায়ই। এমন পরিস্থিতিতে সংবাদকর্মীদের রাজনৈতিক দল এবং আইন শৃঙখলা বাহিনী – এই দুপক্ষের মাঝে পড়ে বেশ ঝূঁকি নিয়েই দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
বিএনপি কার্যালয়ের সামনে আজ যে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের গাড়িটিতে আগুন দেয়া হয় – সেই গাড়িটিতে করেই সংবাদ সংগ্রহের জন্য সেখানে গিয়েছিলেন প্রতিবেদক তৌহিদ শান্ত। তিনি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলছিলেন, কোনো ধরনের উস্কানি ছাড়াই কয়েকটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে ।
”ঠিক যে মুহুর্তে মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বললেন যে শান্তিপূর্ণভাবে আপনারা সমাবেশ শেষ করবেন, ঠিক সেই মুহুর্তে আমার বাম দিকে তাকিয়ে দেখি একটি গাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে কে বা কারা, সেই আগুনের ছবি ধারণ করতে গেলে একজন সহকর্মী হঠাৎ চিৎকার করে বলতে থাকেন – তোমার গাড়িতেও আগুন!”
সে মুহুর্তেই দেখি, আমাকে বহন করা এটিএন নিউজের যে গাড়িটি পার্ক করা ছিল সেটিতে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে এবং গাড়ির চালকও আহত হয়েছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যমের কর্মীদের বিরোধীদলীয় আন্দোলন কর্মসূচি বা হরতালসহ বিভিন্ন সভা সমাবেশ কাভার করতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ই নিরাপত্তাহীনতার মুখে পড়তে হচ্ছে বলে জানান গণমাধ্যম কর্মীরা।
অনেক সময় হেলমেট এবং বুলেট প্রুফ জ্যাকেট পরেও সাংবাদিকদের সংবাদ সংগ্রহে যেতে হচ্ছে।
বেসরকারি আরেকটি টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিক মাসুদ কার্জন বলছিলেন, এখনকার সময়ে সাংবাদিকদের যেভাবে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে তা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে ভিন্ন বলে তার মনে হচ্ছে।
তিনি বলেন, এর আগে যখন জরুরি অবস্থা জারি হয়েছিল, তার আগে যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ছিল তখন আমরা কিছুসংখ্যক গণমাধ্যম কর্মীকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরতে দেখেছি। কিন্তু এবার দেখা যাচ্ছে মোটামুটি সবাই-ই হেলমেট ও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে রাজনৈতিক কর্মসূচির সংবাদ সংগ্রহ করতে আসছেন। বিশেষ করে চিত্রগ্রাহক, আলোকচিত্রীরা বেশি আহত হচ্ছেন।
এ ধরনের ঘটনা বাড়ছে এবং কোনো ক্ষেত্রেই দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চোখে পড়ছে না বলে উল্লেখ করে মাসুদ কার্জন বলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচি কাভার করতে গিয়ে শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বারাই নয়, অনেক ক্ষেত্রে আইনশৃংখলা বাহিনীর টার্গেটেও পরিণত হতে হচ্ছে সাংবাদিকদের।
হরতালের মত কর্মসূচিতেও জরুরি সেবাদান প্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমের পরিবহন আওতার বাইরে থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে আন্দোলন কর্মসূচির চিত্র পুরোটাই পাল্টে গেছে বলে মন্তব্য করেন সিনিয়র সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল। ফলে সাংবাদিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, আগে যেসব দল হরতাল ডাকতো তারা সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সংবাদপত্রের গাড়িসহ অন্যান্য জরুরি সেবাদান প্রতিষ্ঠানের পরিবহনকে এর আওতার বাইরে রাখতো। কিন্তু এখন আর এসব দেখা যায় না, ফলে সাধারণভাবে ধারণা জন্মায় যে, হরতালের সময় যেন সবধরনের যানবাহনই এর আওতার মধ্যে পড়ছে। যে দলগুলো হরতাল ডাকেন এবং মাঠে তাদের যেসব কর্মীরা থাকেন তাদের মধ্যে একটি কমিউনিকেশন গ্যাপ বা যোগাযোগের ঘাটতি আছে, যার ফলেই এমনটি ঘটছে।
তবে যাদের আন্দোলন কর্মসূচিতে এধরনের ঘটনা ঘটে সেই বিরোধী দলের পক্ষ থেকে কি বলা হচ্ছে? বিএনপির নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
তিনি বলেন, অভিযোগটা আসে বিরোধী দলের দিকে যারা হরতাল ডাকে বা আন্দোলন করে এটাও যেমন ঠিক, তেমনি সাম্প্রতিককালে পুলিশের হামলারও শিকার হয়, পুলিশ যখন এলোপাতাড়ি গুলি ছোঁড়ে, শিয়ার শেল ছোড়ে, লাঠিপেটা করে তখন কিন্তু আমরা দেখেছি সাংবাদিকরাও তার শিকার হয়।
বিএনপির এই নেতা দাবি করেন এসব ঘটনার দায়ভার বিরোধীদলের নয়।
তাদের শান্তিপুর্ণ কমর্সূচিতে ঢুকে নাশকতার উদ্দেশ্যে দলের বাইরের লোকজনই এমন কর্মকান্ড ঘটাচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।সূত্র: বিবিসি