জি নিউজ ডেস্কঃ- আইসিস-এর হামলা থেকে বাঁচতে ঘরছাড়া ইরাকিরা চরম বিপদগ্রস্ত৷ কোথাও কোথাও শুধু ইফতার জুটছে, কিন্তু পান উপযোগী পানি পাচ্ছেন না৷ শিয়া মুসলমানদের অনেকে ভেবে পাচ্ছেন না এ অবস্থায় বাঁচবেন কী করে, রোজাই বা রাখবেন কী করে! সুন্নিদের সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (আইসিস) উত্তর ও দক্ষিণ ইরাকের কিছু অংশ দখল করে নিয়েছে৷ তাদের হামলা শুরুর পর থেকেই সে সব এলাকা থেকে পালাতে শুরু করে শিয়া মুসলমানরা৷ এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১২ লাখ মানুষ প্রাণভয়ে ঘর-বাড়ি ছেড়ে কুর্দি অধ্যুষিত প্রদেশগুলোর দিকে অগ্রসর হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ ঘরছাড়া মানুষদের অনেকেই আইনগত জটিলতার কারণে এখনো কুর্দিদের স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশগুলোতে প্রবেশ করতে পারেনি৷ প্রচণ্ড গরমে এয়ারকুলারহীন শরণার্থী শিবিরে বড় কষ্টে দিন কাটছে তাঁদের৷ লিয়াদ নাফিয়া শিয়েত মসুলের ঘরবাড়ি ছেড়ে পাঁচ সন্তান আর স্ত্রীকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন আল-খাজার ক্যাম্পে৷ মুসলমান হিসেবে বছরের এ সময়টা তাঁর কাছেও খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ পবিত্র রমজান মাসে ধর্মপ্রাণ প্রতিটি মুসলমানই চান সিয়াম সাধনায় নিজেকে ব্রতি করতে৷ কিন্তু ৩১ বছর বয়সি শিয়েত রোজা রাখতে পারছেন না, কারণ জানাতে গিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘‘আমরা রোজা রাখবো কী ভাবে? এখানকার অধিকাংশ মানুষই রোজা রাখতে পারছেনা৷ ঠান্ডা পানি পর্যন্ত নেই, রোজা রাখবো কী ভাবে?”পবিত্র রমজান মাসে রোজাদার মুসলমানরা অন্তত দুবার আহার গ্রহণ করেন৷ সুবেহ সাদিক, অর্থাৎ সূর্যোদয়ের ঠিক আগে ‘সেহরি’, আর সূর্যাস্তের ঠিক পরে ‘ইফতার’৷ অধিকাংশ মানুষ ইফতারের পর রাতের আহারও করে থাকেন৷ কিন্তু ইরাকে বিভিন্ন স্থানের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া শিয়া মুসলমানরা অনেক ক্ষেত্রে শুধু ইফতার খাওয়ার মতো কিছু খাবার পাচ্ছেন৷ লিয়াদ নাফিয়া শিয়েত এবং আল-খাজার ক্যাম্পে তাঁর অন্য অনেক প্রতিবেশী তাই ধর্মের প্রতি অনুরাগ থাকা সত্ত্বেও রোজা রাখতে পারছেননা৷ শুধু পবিত্র কোরান পাঠ এবং মোবাইল ফোনে তেলাওয়াত শুনে সময় কাটাচ্ছেন অনেকে৷ ৪১ বছর বয়সি মোহাম্মেদ হামেদ জুমা অবশ্য মরু অঞ্চলের দাবদাহ তোয়াক্কা না করেই রোজা রাখছেন৷ এভাবে যে বেশিদিন রোজা রেখে সুস্থ থাকা যাবেনা, তা তিনিও বোঝেন৷ আইসিস হামলা চালানোর আগে তিনিও ছিলেন মসুলে৷ হোটেল কর্মী হিসেবে যা আয় করতেন তাতে ছয় সন্তান আর স্ত্রীসহ আটজনের পরিবারটি ভালোই চলতো৷ আল-খাজার শিবিরে বর্তমান দুর্দশার কথা জানাতে গিয়ে তিনি বললেন।প্রতিবেদনটি ডি ডাব্লিউ এর, এখানে একেকটা দিন যেন একেকটা বছরের মতো দীর্ঘ৷ ক্যাম্পের ভেতরে ভীষণ গরম৷ ঘর ঠান্ডা করার ব্যবস্থা না থাকায় ভোর ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত একটুও ঘুমাতে পারিনা৷ সেহরির সময় ঠান্ডা পানিও পাইনা৷ এখানে রোজা রাখা খুব কঠিন৷’