জি নিউজ ডেস্ক : সাভারে রানা প্লাজায় ভয়াবহ ধস ও বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রাণহানির ঘটনার পরই সরকার তাগিদ বোধ করলো পোশাক ও কাপড় শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহ সরজমিনে পরিদর্শন করে প্রকৃত অবস্থা জানার। এ জন্য সরকারের একজন প্রতিমন্ত্রীকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে। কমিটিতে স্বরাষ্ট্র, শ্রম ও কর্ম সংস্থান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ, বস্ত্র ও পাট, প্রতিরক্ষা, গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং ব্যাংক ও আর্থিক বিভাগ থেকে পূর্ণকালীন একজন সদস্য থাকবেন। এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ থেকেও একজন করে পূর্ণকালীন সদস্য থাকবেন। কমিটি আগামী তিন মাসের মধ্যে দেশের প্রতিটি পোশাক ও কাপড় শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে রিপোর্ট পেশ করবে। কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি মালিককে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ করতে বলা হবে। তারা তা না করলে ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দেয়া হবে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় পর্যায়ের এই কমিটি গঠনের ব্যাপারে সোমবার সকালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবদের জরুরি বৈঠক আহ্বান করেছে। অর্থমন্ত্রী এতে উপস্থিত থাকবেন। সাভারের ভয়াবহ স্থাপনা ধস ও ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনার পর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত কর্মপরিধি নির্দিষ্ট করে গার্মেন্ট শিল্পে দুর্ঘটনা ও প্রতিকার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব করেছেন। তার প্রস্তাবগুলো আজকের বৈঠকে গ্রহণ করে মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে।
কমিটির কর্মপরিধির মধ্যে থাকবে যে ভবনে কারখানা অবস্থিত সে সম্বন্ধে অনুসন্ধান করে স্থাপনাটি উপযুক্ত কিনা মতামত দেয়া। কারখানায় কত শ্রমিক কাজ করে, স্থাপনাটি কত তলা, কবে নির্মিত হয়েছে, কারখানার নিজস্ব ভবন, না ভাড়ায়, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ও প্রতিষেধক ব্যবস্থা যথাযথ কিনা, আগুন ধরলে বা কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটলে কারখানা থেকে বর্হিগমনের যথাযথ ব্যবস্থা আছে কি না কমিটি সরজমিনে পর্যবেক্ষণ করবে। কারখানার সার্বিক পরিবেশ নোংরা না ভাল, কারখানায় যাতায়াতের সুবন্দোবস্ত আছে কিনা, কারখানার কাছে বা কারখানার শ্রমিকদের জন্য নির্দিষ্ট কোন বাসস্থানের ব্যবস্থা আছে কিনা, শিশুদের জন্য কোন ডে-কেয়ার ব্যবস্থা আছে কিনা, কারখানায় শ্রমিকদের, তাদের সন্তানদের সাক্ষরতা দানের কোন ব্যবস্থা আছে কিনা কমিটি প্রভৃতি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করবে।
মন্ত্রিসভা বিভাগ তৈরী পোশাক ও বস্ত্র শিল্পের দুর্ঘটনা রোধ সম্পর্কে স্বরাষ্ট্র, শ্রম ও কর্মসংস্থান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, বস্ত্র ও পাট, প্রতিরক্ষা, গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে মতামত চেয়েছে। তাদের মতামতের ভিত্তিতে সুপারিশসমূহ চূড়ান্ত করা হবে।
পোশাক ও কাপড় শিল্প খাতে দুর্ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হলেও এ নিয়ে সরকার, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ’র তেমন একটা মাথাব্যথা লক্ষ্য করা যায়নি। বেশ কয়েকটি মারাত্মক অগ্নিকাণ্ড, ধসের ঘটনার পরও উল্লেখযোগ্য প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। রানা প্লাজা ধসে কয়েক শ’ মানুষের মৃত্যুর ঘটনা বহির্বিশ্বে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে। যা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। পোশাক শিল্প পড়েছে মারাত্মক হুমকির মুখে। এ অবস্থায় সরকারকে বাধ্য হয়েই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে। গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিগুলোর ভবনে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ভূমিকম্প, ধস প্রতিরোধক ব্যবস্থা নেই। গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিগুলোর অর্ধেকেরও বেশি ভাড়া বাড়িতে। এগুলো শিল্প-কারখানার উপযোগী করে নির্মিত নয়। পরবর্তীকালে গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি মালিকরা প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজও করেননি। যেসব গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি নিজস্ব ভবনে স্থাপিত সেইসব ভবনের নকশাও যথাযথ নয়। আবার সেই নকশা অনুযায়ী নির্মাণকাজও হয়নি। সাভারের ট্র্যাজেডির পর বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি মালিকদের কাছে নকশা চেয়েছেন। এত দিন সরজমিনে প্রকৃত অবস্থা দেখার তাগিদ তারাও বোধ করেননি।
তিন মাসের মধ্যে সকল গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি পরিদর্শন
Share This