স্বাস্থ্য ডেস্ক ঃ- ঝকঝকে দাঁতে সুন্দর হাসি কেবল আপনার ব্যক্তিত্বকেই আকর্ষণীয় করে না, এটা আপনার সুস্বাস্থ্যেরও পরিচায়ক। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে অনেকেই দাঁত সুস্থ রাখার বিষয়ে সচেতন থাকেন না। ঠেকায় পড়ে দাঁতের চিকিত্সকের কাছে না যাওয়া পর্যন্ত যেন তাঁরা বিষয়টির গুরুত্বই বোঝেন না। একটু সচেতন হলে এবং কিছু বিষয় নিয়মিত চর্চার মধ্য দিয়ে অভ্যাসে পরিণত করতে পারলে সারা জীবন সুস্থ-সবল দাঁতের সুন্দর হাসি হাসতে পারবেন আপনি।
১.কী খাচ্ছেন, কী পান করছেন
চকলেটে আসক্তি, তেল-মসলাযুক্ত ভারী খাবারের অভ্যাস, অ্যালকোহল পানের অভ্যাস, অতিরিক্ত চা-কফি পান করা কিংবা ধূমপান বা পান চিবানোর অভ্যাস থাকলে দাঁতে দাগ পড়ার পাশাপাশি অন্যান্য সমস্যার আশঙ্কা অনেক বেশি। এসব অভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করুন। আর এমন খাদ্য-পানীয়ের পরপরই দাঁত পরিষ্কার করুন। বোতলজাত প্রায় সব পানীয়ই ‘কার্বনেট’ করা থাকে, এসব পানীয় পান বাদ দিয়ে বা যতটা সম্ভব কমিয়ে দাঁতে ক্ষতিকারক অ্যাসিডের প্রভাব কমান। কেননা তা দাঁতের এনামেলের নষ্ট করে দাঁত ক্ষয় করে ফেলে।
২.দুই বেলা দুই মিনিটের নিয়ম
প্রতিদিন দুই বেলা দাঁত মাজুন। সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে। মনে রাখুন, এই দাঁত মাজাটা যেন দুই মিনিটের কম সময়ে না হয় আবার বেশি সময় ধরেও না চলে। দাঁত ও মাড়ি ভালোভাবে পরিষ্কার করতে, ব্যাকটেরিয়া ও দাঁতের প্লাক দূর করতে এ সময়টা দরকার। কিন্তু বেশি সময় ধরে দাঁত মাজাও বিপজ্জনক। সময় ঠিক রাখতে ঘড়ি ব্যবহার করতে পারেন বা দুই মিনিটের কোনো গান বা মিউজিক ট্র্যাক বাছাই করে নিয়মিত তা শুনতে শুনতে দাঁত মাজতে পারেন।
৩.আলতো করে দাঁত মাজুন
দাঁত মাজার সময় জোরে জোরে ব্রাশ ঘষলেই দাঁত বেশি পরিষ্কার হবে—বিষয়টা মোটেও তেমন নয়। বরং জোরে জোরে ব্রাশ করলে দাঁতের এনামেলের ক্ষতি হতে পারে। কেবল সামনে-পেছনে ব্রাশ না টেনে ব্রাশটা মাড়ির সাপেক্ষে ৪৫ ডিগ্রি কোণে রেখে দাঁত মাজুন। আর অবশ্যই দুই-তিন মাস পর পর ব্রাশ পরিবর্তন করুন। ব্রাশের ফাইবারগুলো বেঁকে যাওয়ার পরও তা ব্যবহার করতে থাকলে মাড়ির ক্ষতি হতে পারে। সম্ভব হলে চিকিত্সকের পরামর্শ অনুযায়ী নরম, মাঝারি বা একটু শক্ত ব্রাশ বেছে নিয়ে তা ব্যবহার করুন।
৪.দাঁতের প্রতি সদয় হন
খাবার চিবানো আর কামড়ে খাওয়ার জন্যই দাঁত। বোতলের মুখ খোলা কিংবা প্যাকেট ছেঁড়ার হাতিয়ার দাঁত নয়।আর যে খাবার শুষে খেতে হয়, সেটা কামড়াবেন না। অতিরিক্ত শক্ত খাবার, শক্ত হাড় বেশি কামড়াবেন না। এতে দাঁতের বাইরের আবরণ বা এনামেল নষ্ট হতে পারে, দাঁতে সূক্ষ্ম ফাটল দেখা দিতে পারে। বরফ বা ক্যান্ডি কামড়ে খাবেন না, এতেও দাঁতের ক্ষতি হয়।
৫.প্রতিদিন এক কাপ চা
চায়ে এমন কিছু উপাদান আছে, যা মুখের ভেতরের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে পারে এবং মাড়ির রোগ সারাতে ভূমিকা রাখতে পারে। তবে, সেটা দুধ-চিনি মেশানো চায়ে কার্যকর থাকবে না। ব্ল্যাক-টি বা কেবল চা-পাতা আর পানিই এ জন্য ভালো। চিনি ছাড়া চা-পানে সমস্যা হলে বিকল্প চিনি ব্যবহার করতে পারেন। ভারী খাবারদাবারের পর বা বিকেল-সন্ধ্যার অবসরে প্রতিদিন এমন এক কাপ চা দাঁতের জন্য উপকারী হতে পারে।
৬.অ্যালকোহলমুক্ত মাউথওয়াশ
এমন একটা মাউথওয়াশ ব্যবহার করুন, যা অ্যালকোহলমুক্ত। বাজারের বেশির ভাগ মাউথওয়াশেই বেশ খানিকটা অ্যালকোহল থাকে বলে এসব ব্যবহারে সাময়িকভাবে মুখের টিস্যু শুষ্ক হয়ে যায় এবং ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। এ ছাড়া যেনতেন মাউথওয়াশ বেশি মাত্রায় ব্যবহার করলে মুখের ক্যানসারের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে বলেও ধারণা করা হয়েছে কোনো কোনো গবেষণায়। তাই এ বিষয়ে সচেতন হন।
৭.দাঁত পরীক্ষায় ফাঁকি দেবেন না
দাঁতে কোনো ক্ষত ধরা পড়লে, দাঁতে বা মাড়িতে ব্যথা হলে, মাড়ি থেকে রক্ত ঝরলে কিংবা দাঁত শিরশির করলে অবশ্যই দাঁতের চিকিত্সকের কাছে যান। সঠিক সময়ে চিকিত্সা করালে দাঁতের সুরক্ষা নিশ্চিত হতে পারে। আর সবারই কমবেশি ছয় মাসে, নয় মাসে একবার দাঁত পরীক্ষা করিয়ে নেওয়াটা জরুরি। কেননা অনেক সময় দাঁত ও মাড়ির এমন কিছু সমস্যায় আমরা আক্রান্ত হই, যা মারাত্মক পর্যায়ে না পৌঁছালে আমরা টের নাও পেতে পারি।সূত্রঃইন্টারনেট