জি নিউজ বিডি ডট নেট ঃ- দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত প্রার্থীর সংখ্যা ১২৮ জনে দাঁড়িয়েছে। দেশটির ইতিহাসে এই প্রথম কোনো নির্বাচনে এত বেশি সংখ্যক প্রার্থী ভোট গ্রহণের আগেই জয়ী হতে যাচ্ছেন। এর আগে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ৪৯টি আসনে ৪৮ জন এবং ২০০৭ সালের বাতিল হওয়া ২২ জানুয়ারির নির্বাচনে ১৭ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। এছাড়া শেখ মুজিবুর রহমানের সময়ে (১৯৭৩) নির্বাচনে ১১ জন, জিয়াউর রহমানের সময়ে (১৯৭৯ সালে) ১১ জন, এরশাদের সময়ে (১৯৮৮ সালে) ১৮ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। আজ (শুক্রবার) বিকেল ৫টায় শেষ হয়েছে ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সুযোগ। কমিশন সচিবালয় সর্বশেষ যে হিসাব অনুযায়ী ১২৮ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ১১৭ এবং জাতীয় পার্টির ৫ জন, আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জেপি ১ জন, জাসদের তিনজন এবং ওয়ার্কার্স পার্টির দুইজন রয়েছে। আওয়ামী লীগ, জাপা, জাতীয় পার্টি-জেপিসহ এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে ১৬টি দল। এর আগে রাত ১০টা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জনসংযোগ শাখা থেকে পাওয়া প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, ১০৪ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। শনিবার এ সংখ্যা আরো বাড়তে বলে ধারণা করছেন নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। কারণ এখনও সবগুলো আসনের হিসাব রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছ থেকে নির্বাচন কমিশনে এসে পৌঁছায়নি। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্রে জানা গেছে, এরইমধ্যে যারা প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন তাদের বাদ দিয়ে আজ রাতেই চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। কোনো আসনে একক প্রার্থী থাকলে তাকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটসহ দেশের অধিকাংশ সর্বোচ্চ সংখ্যক রাজনৈতিক দল এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। ফলে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন একতরফাভাবে করতে যাচ্ছে সরকার। এবারের নির্বাচনে ১১০৬ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিলে যাচাই বাচাইয়ে ২৬০ জন প্রা র্থী বাতিল হয়। আপিল শুনানি শেষে ৩৪ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্রের বৈধতা ফিরে পান। সব মিলিয়ে বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৮৮০ জন। মহাজোটের শরীক দল জাতীয় পার্টির প্রায় দুইশত প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করায় প্রার্থী সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাতশ’র নিচে। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী ৬৪ জেলার ৩০০টি সংসদীয় আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ীরা হলেন —
ঠাকুরগাঁও-২ মো. দবিরুল ইসলাম, দিনাজপুর-২ খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, লালমনিরহাট-২ নুরুজ্জামান আহমেদ, রংপুর-২ আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী, রংপুর-৪ টিপু মুন্সী, রংপুর-৫ এইচ এম আশিকুর রহমান, গাইবান্দা-৫ মো. ফজলে রাব্বি মিয়া, বগুড়া-১ আবদুল মান্নান, বগুড়া-২ শরিফুল ইসলাম জিন্না (জাতীয় পার্টি), বগুড়া-৩ মো. নুরুল ইসলাম তালুকদার (জাতীয় পার্টি-জেপি), বগুড়া-৫ মো. হাবিবর রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ মো. আবদুুল ওয়াদুদ, নওগাঁ-৬ মো. ইসরাফিল আলম, রাজশাহী-১ ওমর ফারুক চৌধুরী, রাজশাহী-৪ এনামুল হক, নাটোর-১ মো. আবুল কালাম, নাটোর-২ মো. শফিকুল ইসলাম শিমুল, নাটোর-৪ মো. আবদুল কুদ্দুস, সিরাজগঞ্জ-২ মো. হাবিবে মিল্লাত, সিরাজগঞ্জ-৩ মো. ইসহাক হোসেন তালুকদার, সিরাজগঞ্জ-৪ তানভীর ইমাম, সিরাজগঞ্জ-৬ মো. হাসিবুর রহমান স্বপন, যশোর-১ শেখ আফিলউদ্দিন, বাগেরহাট-২ মীর শওকত আলী বাদশা, বাগেরহাট-৩ তালুকদার আবদুল খালেক, ভোলা-৪ আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, বরিশাল-৬ আবদুল হাফিজ মল্লিক, পিরোজপুর-১ এ কে এম এ আউয়াল, পিরোজপুর-২ আনোয়ার হোসেন, টাঙ্গাইল-১ মো. আবদুর রাজ্জাক, টাঙ্গাইল-৩ আমানুর রহমান খান, টাঙ্গাইল-৭ মো. একাব্বর হোসেন, টাঙ্গাইল-৮ শওকত মোমেন শাহজাহান, ময়মনসিংহ-১ প্রমোদ মানকিন, ময়মনসিংহ-২ শরীফ আহমেদ, ময়মনসিংহ-৫ সালাইদ্দিন আহমেদ মুফতি, ময়মনসিংহ-৯ আনোয়ারুল আবেদিন খান তুহিন, কিশোরগঞ্জ-২ মো. সোহরাব উদ্দীন, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে রাষ্ট্রপতির ছেলে রেজওয়ান আহম্মদ তৌফিক, কিশোরগঞ্জ-৫ মো. আফজাল হোসেন, কিশোরগঞ্জ-৬ নজমুল আহসান পাপন, মানিকগঞ্জ-২ মমতাজ বেগম, মানিকগঞ্জ-৩ জাহিদ মালেক, ঢাকা-৩ নসরুল হামিদ বিপু, ঢাকা-১২ আসাদুজ্জামান খান কামাল, ঢাকা-১৯ ডা. মো. এনামুর রহমান, ঢাকা-২০ এম এ মালেক, গাজীপুর-১ আকম মোজাম্মেল হক, গাজীপুর-২ মো. জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর-৩ মো. রহমত আলী, গাজীপুর-৫ মেহের আফরোজ চুমকি, নরসিংদী-৪ নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, নরসিংদী-৫ রাজি উদ্দিন আহমেদ, নারায়ণগঞ্জ-২ মো. নজরুল ইসলাম বাবু, রাজবাড়ী-১ কাজী কেরামত আলী, রাজবাড়ী-২ মো. জিল্লুল হাকিম, ফরিদপুর-১ মো. আবদুর রহমান, ফরিদপুর-৩ খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মাদারীপুর-১ নূরে আলম চৌধূরী, শরীয়তপুর-১ বিএম মোজাম্মেল হক, শরীয়তপুর-২ শওকত আলী, শরীয়তপুর-৩ নাহিম রাজ্জাক, মৌলভীবাজার-৩ সৈয়দ মোহসিন আলী, মৌলভীবাজার-৪ মো. আবদুস শহীদ, কুমিল্লা-৭ অধ্যাপক আলী আশরাফ, কুমিল্লা-১০ আ হ ম মুস্তাফা কামাল, চাঁদপুর-৪ ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁয়া, চাঁদপুর-৫ মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম (বীর-উত্তম), ফেনী-২ নিজাম উদ্দিন হাজারী, নোয়াখালী-২ মোরশেদ আলম, নোয়াখালী-৫ ওবায়দুল কাদের, লক্ষ্মীপুর-৩ এ কেএম শাহজাহান কামাল, চট্টগ্রাম-৭ মো. হাছান মাহমুদ, কক্সবাজার-২ আশেক উল্লাহ রফিক ও কক্সবাজার-৩ সাইমুম সরওয়ার কমল। জাতীয় পার্টি
চট্টগ্রাম-৫ জাপার সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও পানি পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, বগুড়া-২ আসনে শরিফুল ইসলাম, বগুড়া-৩ আসনে নুরুল ইসলাম তালুকদার, ময়মনসিংহ-৫ আসনে সালাহউদ্দিন আহমেদ, কুড়িগ্রাম-২ আসনে জাতীয় পাটির্র তাজুল ইসলাম চৌধুরী। জেপি
পিরোজপুর-২ আসনে জেপির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা আনোয়ার হোসেন।
ওয়ার্কার্স পার্টি
ঢাকা-৮ রাশেদ খান মেনন ও রাজশাহী-২ আসনে ফজলে হোসেন বাদশা।
জাসদ
কুষ্টিয়া-২ হাসানুল হক ইনু, চট্টগ্রাম-৮ মাঈনুদ্দিন খান বাদল ও ফেনী-১ শিরিন আখতার। ১০ জনকে নৌকা প্রতীক দিতে শেখ হাসিনার চিঠি
১৪-দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনুসহ ১০ জনকে নির্বাচনে নৌকা প্রতীক দিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকীব উদ্দিন আহমদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাক্ষরিত ওই চিঠিটি আওয়ামী লীগ নেতা রিয়াজুল কবির কাওসার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে পৌঁছে দেন বলে জানা গেছে। ১৪-দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে যাঁদের নৌকা প্রতীক দিতে বলা হয়েছে তাঁরা হলেন, রাজশাহী-২ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশা, নড়াইল-২ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী শেখ হাফিজুর রহমান, সাতক্ষীরা-১ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী মো. মোস্তফা লুত্ফুল্লা, ঢাকা-৮ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী রাশেদ খান মেনন, কুষ্টিয়া-২ আসনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) প্রার্থী হাসানুল হক ইনু, নরসিংদী-২ আসনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) প্রার্থী জাহেদুল কবির, ফেনী-১ আসনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) প্রার্থী শিরীন আক্তার, চট্টগ্রাম-৮ আসনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) প্রার্থী মইনুদ্দিন খান বাদল, লক্ষ্মীপুর-১ আসনে তরিকত ফেডারেশনের প্রার্থী এম এ আউয়াল, চট্টগ্রাম-২ আসনে তরিকত ফেডারেশনের প্রার্থী নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি।
আবেদন করার পরও এরশাদসহ জাপার ৪ প্রার্থীর মনোনয়ন বহাল
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৩ (সদর) আসনে জাতীয় পার্টি (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদসহ অপর চার জাপা প্রার্থীর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন রিটার্নিং অফিসার।
বুধবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে সন্ধ্যা ৬টার দিকে রিটার্নিং কর্মকতা ও রংপুর জেলা প্রশাসক ফরিদ আহাম্মেদ তার কার্যালয়ে এ আদেশ দিয়েছেন।
লালমনিরহাট-১ আসন থেকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ ও লালমনিরহাট-৩ আসন থেকে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিএম কাদেরের মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করা হয়নি। আবেদন করা সত্ত্বেও জেলা রিটানিং কর্মকতা তা প্রত্যাহার করেননি। গত বুধবার ১১ই ডিসেম্বর মশিউর রহমান রাঙ্গা প্রত্যাহার পত্র জেলা রিটানিং কর্মকতা ও জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান এর কাছে নিয়ে যান। জেলা রিটানিং কর্মকতা অফিসে না থাকার কারণে তার নির্দেশে জেলা নির্বাচন কর্মকতা মো. ফজলুল হক এর কাছে তা জমা দেন। কিন্তু জমাদান বিধি মোতাবেক না হওয়ার অজুহাতে তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়নি বলে জেলা রিটানিং কর্মকতা মো. হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের জানান।
উল্লেখ্য, বিএনপি, জামায়াত-জাতীয় পার্টি ছাড়াও এবার নিবন্ধিত ৪০টি দলের অধিকাংশ দলই অংশ নিচ্ছে না। অংশ নেয়া দলের মধ্যে রয়েছে- আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি-জেপি, জাসদ, তরিকত ফেডারেশন, ওয়ার্কার্স পার্টি ও বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফসহ ১৬টি রাজনৈতিক দল ও স্বল্পসংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থী। সর্বশেষ ২০০৮ সালের নবম সংসদে ৩৮টি নিবন্ধিত দল ও স্বতন্ত্র মিলে এক হাজার ৫৬৭ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। এর মধ্যে স্বতন্ত্র ছিল ১৪১ জন। এ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ থাকায় কোনো আসনেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হননি কেউই। এ নির্বাচনে ভোট পড়ে ৮৭ শতাংশ।খবর রেডিও তেহরান এর তাঃ-১৪ ডিসেম্বর ২০১৩ #