অনলাইন ডেস্ক ,জি নিউজঃ- বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আস্থাশীল ও নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ফ্রান্সের স্ট্রুসবুর্গে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট-এর সদর দপ্তরে পাস হওয়া সর্বসম্মত প্রস্তাবে বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ উপায়ে সম্পন্ন করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। রাত আটটা থেকে শুনানি শুরু হয়ে প্রায় এক ঘন্ট চলে। পরে তা ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়েছে, পার্লামেন্টে তিনটি আলাদা প্রস্তাব অনুমোদন হয়েছে। এর মধ্যে একটি বাংলাদেশ নিয়ে। ওই প্রস্তাবে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা (এমইপি) সব ব্যক্তি ও দলকে সব সময় বিশেষ করে আগামী নির্বাচনের আগে, পরে ও নির্বাচনের সময় সংযত ও সহনশীল থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রস্তাবে আরো বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনের আগামী সাধারণ নির্বাচন পূর্ণ স্বচ্ছতার সঙ্গে আয়োজন ও তদারকি করা উচিত। এছাড়া নির্বাচনকে ঘিরে সব ধরনের সহিংসতা থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর বিরত থাকা উচিত বলেও এমইপিরা মনে করেন। রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচন বয়কট না করার পরামর্শ দিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট বলেছে, এটা নাগরিকদের রাজনৈতিক মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করবে এবং সামাজিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার অবনতি হবে। উন্নয়ন অগ্রগতিকেও বাধাগ্রস্ত করবে। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা তাদের যৌথ প্রস্তাবে মোট ১৫টি সুপারিশ করেন। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- নির্বাচন ঘিরে প্রধান দুই রাজনৈতিক জোটে বিরোধ এবং জামায়াত ও বিএনপির সাধারণ ধর্মঘটে বাংলাদেশের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা স্থবির করে ফেলার তীব্র নিন্দা জানাতে হবে। ‘অধিকাংশ গণতান্ত্রিক দেশ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়াই নির্বাচন করে’- এ বিষয়টি মাথায় রেখে জাতীয় সংসদ সব দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করতে হবে। বাংলাদেশের জনগণকে গণতান্ত্রিক উপায়ে তাদের মতপ্রকাশের সুযোগ দিতে বাংলাদেশের স্বার্থে সরকার ও বিরোধী দলকে অবিলম্বে সমঝোতার আহ্বান জানাতে হবে। সহিষ্ণু ও বহুমতের বাংলাদেশের সুনামের কথা স্মরণ রেখে কোনো দল বা গোষ্ঠীর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টার নিন্দা জানাতে হবে। ইউরোপীয় পার্লামেন্টে জাতীয় নির্বাচন ছাড়াও বাংলাদেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি, বিডিআর বিদ্রোহের বিচার ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা হয়। এর আগে একটি বিশ্বাসযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিতকল্পে সব রাজনৈতিক দল ও পক্ষকে সংলাপের দিকে এগিয়ে যেতে এবং আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এছাড়া, গত বুধবার মার্কিন কংগ্রেসের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপ-কমিটির শুনানিতে বাংলাদেশের আগামী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে প্রধান দুই দলের বিপরীতমুখী অবস্থান এবং ক্রমবর্ধমান সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে মার্কিন কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার বিরোধী দলকে বাদ দিয়ে নির্বাচনের যে চেষ্টা করছে তাতে পরিস্থিতি আরও সংঘাতময় হয়ে উঠবে। এই সংঘাতময় পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে অনিচ্ছা সত্ত্বেও সেনা বাহিনীই ভূমিকা নিতে পারে। এই সহিংস পরিস্থিতিতে সন্ত্রাসবাদ মাথাচাড়া দিতে পারে বাংলাদেশে।‘নৈরাজ্যে বাংলাদেশ : খাদের কিনারে একটি দেশ?’ শীর্ষক এ শুনানিতে সভাপতিত্ব করেন মার্কিন কংগ্রেসের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান স্টিভ শ্যাবোট। সূত্র -রেডিও তেহরান, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০১৩