জি নিউজ অনলাইন ঃ- সংসদে বিএনপি-জামায়াতের নৃশংসতার চিত্র তুলে ধরলেন প্রধানমন্ত্রী।দোষ চাপানোর সংস্কৃতি থেকে বেরিয়েআসার আহ্বান জানিয়েছেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । তিনি বলেছেনঅনেকেই বলেন, দেশে সুশাসন নেই। কিন্ত দেশেসুশাসন না থাকলে গণতন্ত্র অব্যাহত থাকতো না। অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়েইআমরা এগিয়ে চলছি। তবে কিছু কিছু বিছন্ন ঘটনা ঘটছে। তিনি আরো বলেছেন, আমারচোখে অপরাধী-অপরাধীই। সে যেই হোক না কেন তার বিচার হবেই হবে। দেশ চলবেসংবিধান অনুযায়ী।গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বাজেট অধিবেশনের সমাপনীবক্তৃতায় তিনি একথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে চলাঅধিবেশনে তিনি এ সময় বিগত দিনে বিএনপি-জামায়াত জোটের হত্যা, নির্যাতন ওঅগ্নিসংযোগসহ নানা নৃশংসতা ছবি তুলে ধরেন। তিনি ওই ভয়াবহ চিত্রগুলো সংসদেররেকর্ডে রাখার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গিয়েও জনগনকে মারে। আবারক্ষমতার বাইরে থাকলেও মারে। তারা আন্দোলনের নামে সহিংসতা চালিয়েগণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্থ করতে চায়। আগামীকে কোন ধরণের সহিংস আন্দোলন বরদাস্তকরা হবে না বলেও তিনি এসময় হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন।নির্বাচন বর্জনেরসমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন ঠেকানোর নামে খালেদা জিয়াজামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে এদেশে যাতে নির্বাচন না হয়, দেশ ও গণতন্ত্র ধ্বংস হয়, দেশে অগণতান্ত্রিক পথে যাক- সেটাই চেয়েছিলেন। আমরা তাদের সকল সন্ত্রাসীকর্মকান্ড ও ধ্বংসযজ্ঞ মোকাবেলা করে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে সুসংহত ওঅর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে সক্ষম হয়েছি। তিনি বলেন, নির্বাচনে না এসে সবহারিয়ে বিএনপি নেত্রী ও তাঁর দলের নেতারা চিঠি পাঠিয়ে মিথ্যা কুৎসা রটিয়েদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। বিএনপি নেত্রীর প্রতি প্রশ্নরেখে তিনি বলেন, আন্দোলনের নামে এভাবে মানুষ হত্যা করে দেশের কী লাভ হলো? আপনি কী অর্জন করেছেন? আপনি নির্বাচনে না এসে দেশের কষ্টার্জিত গণতন্ত্র ওদেশকে ধ্বংস করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আপনার সেই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে।ভারতেরইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে দেয়া সাক্ষাতকারে খালেদা জিয়ার প্রদত্ত বক্তব্যেরসমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাক্ষাতকারে বিএনপি নেত্রী সব দায় আওয়ামীলীগের ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা করেছেন। সংখ্যালঘুদের নিয়ে মায়াকান্নাকরেছেন। তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রী ক্ষমতায় থাকাকালে এদেশেরহিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান ও মুসলমান কোন সম্প্রদায়ের মানুষ রেহাই পায়নি।সবধর্মের মানুষকে নিষ্ঠুরভাবে তারা নির্যাতন ও হত্যা করেছে। দেশের মানুষবিএনপি-জামায়াতের এমন নিষ্ঠুরতার কথা কোনদিন ভুলবে না প্রধানমন্ত্রীসাবেক স্বৈরশাসক এরশাদের বেশকিছু অভিযোগের জবাব দেন। বঙ্গবন্ধুহত্যাকান্ডের সঙ্গে জেনারেল জিয়ার সম্পৃক্ততার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সামরিক শাসন জারি করে গণতন্ত্রকে হত্যা করেন জেনারেলজিয়া। বঙ্গবন্ধুর খুনী মীরজাফর মোশতাক এই জিয়াকেই সেনাবাহিনী প্রধানকরেছিল। বঙ্গবন্ধুর দুই খুনী ফারুক-রশিদও বিবিসিতে সাক্ষাতকার দিয়ে বলেছে, বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে জেনারেল জিয়া তাদের সঙ্গে ছিল। রাষ্ট্রপতি বিচারপতিসায়েমকে অস্ত্রের মুখে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে জিয়া হাজার হাজার সেনাবাহিনীরঅফিসার ও সদস্যকে হত্যা করে। একমাত্র বিমানবাহিনীতেই ৫৬২ জন অফিসারকে হত্যাকরেন তিনি। বিএনপি নেতারা দাবি করেন তারা নাকি গণতন্ত্র দিয়েছেন! জিয়াপ্রতিরাতে কার্ফিউ দিয়ে দেশ চালিয়েছে। কার্ফিউ দিয়ে দেশ চালানো কীগণতন্ত্রের নমনা? তিনি বলেন, জেনারেল জিয়ার পথ অনুসরণ করে জেনারেল এরশাদওতিন মাসের মাথায় রাষ্ট্রপতি আহসান উদ্দিন চৌধুরীকে হঠিয়ে ক্ষমতা দখলকরেছিলেন। বাংলাদেশে অস্ত্র, সন্ত্রাস, কালো টাকা, ঋণ খেলাপী ও নির্বাচনেকারচুপি-ডাকাতি সামরিক স্বৈরাচাররাই সৃষ্টি করেছিল। তারা অবৈধ ক্ষমতাকেপাকাপোক্ত করতেই ভোট কারচুপি ও ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে নতুন দল সৃষ্টিকরেছিল। তিনি বলেন, আমরা সব সময় গণতন্ত্র চেয়েছি, গণতন্ত্রের জন্যলড়াই-সংগ্রাম করেছি। ’৮৬ সালের নির্বাচন যদি অবাধ ও নিরপেক্ষভাবেঅনুষ্ঠানের সুযোগ দেওয়া হতো তবে এরশাদ সাহেবকে ওভাবে পদত্যাগ করতে হতো না।প্রধানমন্ত্রীবলেন, ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আমরা অংশ নিলাম। কিন্তু ওই নির্বাচনে কোনো দলইসরকার গঠন করার মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় নি। বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদতখন রাষ্ট্রপতি। তিনি তখন আমাদের ডেকেছিলেন, বঙ্গভবনে আলোচনা হয়েছিলো।ইচ্ছা করলে জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করতে পারতাম।কিন্তু নীতিগতভাবে আমি ক্ষমতা গঠন করতে চাইনি। যাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনকরলাম, তাদের নিয়ে একটি দূর্বল সরকার গঠন করতে চাইনি। তিনি বলেন, ওইসময়বিএনপি জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে সরকার গঠন করলো। কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় এসেপ্রথম নির্যাতন চালালো জাতীয় পার্টির উপর। আমার প্রশ্ন- যে ভাবী সাহেবার (খালেদা জিয়া) জন্য আপনি (এরশাদ) এতো কিছু করলেন, গাড়ী দিলেন, বাড়ি দিলেন।সন্তানদের পড়ালেখার ভরণপোষনের টাকা দিলেন। এতো চেষ্টা করলেন ভাবী সাহেবারমন পেতে কিন্তু তিনিই (খালেদা জিয়া) ক্ষমতায় গিয়ে আপনাকে, আপনার স্ত্রীকেআপনার সরকারের মন্ত্রীদের গ্রেফতার করলেন। আমি আপনাকে (এরশাদ) বলবো, যদিকোনো দিন সুযোগ পান তাহলে ভাবী সাহেবাকে জিজ্ঞেস করবেন কেনো আপনি মন পেলেননা? খালেদা জিয়ার বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়ারা ২১ বছর এবং পরে খালেদা জিয়ারা আরো পাঁচ বছর- সবমিলিয়ে তারা ২৬ বছর ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু দেশের অমীমাংসিত একটি ইস্যু তারাসমাধান করে যায়নি, কোনো উদ্যোগও নেয়নি। একমাত্র আওয়ামী লীগই ক্ষমতায় এসেঐতিহাসিক গঙ্গার পানি চূক্তি, পাবর্ত্য শান্তি চূক্তি করেছে। দুই দেশেরসীমানা নির্ধারণ ও ছিটমহল সমস্যার সমাধান করেছে। মিয়ানমারের সঙ্গে আইনিলড়াইয়ের মাধ্যমে সমুদ্রসীমায় আমাদের অধিকার নিশ্চিত করেছি। সমুদ্রসীমা নিয়েভারতের সঙ্গে চলা মামলার রায় এই মাসেই ঘোষিত হবে। এই রায়ও যাতে বাংলাদেশেরঅনুকূলে আসে, আমাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাই সেজন্য আল্লাহর দরবারেদোয়া-প্রার্থণা করার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বানজানান প্রধানমন্ত্রীশেখ হাসিনা।
বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে জনগনকে মারে,বাইরে থাকলেও মারেঃ প্রধানমন্ত্রী
Share This