জি নিউজঃ-নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিরোধী দলের ডাকা ৬০ ঘণ্টার হরতালের দ্বিতীয় দিনেও বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, ভাংচুর, আগুন, সড়ক অবরোধ, রেললাইন উৎপাটন ও ধরপাকড়ের খবর পাওয়া গেছে। টাঙ্গাইলে যুবদল নেতা এবং চাঁদপুরে এক ছাত্রদল কর্মী নিহত হয়েছে। ঝিনাইদহ -হরিণাকুণ্ডু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মহিবুল হক জানান, হরিণাকুণ্ডু উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন (৫০) দুপুর ১২টার দিকে দখলপুর বাজার থেকে মোটরসাইকেল যোগে বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় দুর্বৃত্তরা তাকে লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন। চাঁদপুর- আজ সকাল পৌনে ১০টার দিকে চাঁদপুর শহরের পুরানবাজারে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থকরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। এ সময় আরজু (১৮) নামে ছাত্রদলের এক কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২৯ জন। চাঁদপুর পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। এদিকে, জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলায় সকালে হরতাল চলাকালে বিএনপির অফিস ভাংচুর করেছে আওয়ামী লীগ। এছাড়া, সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে বালিজুড়ি বাজারে পিকেটিংয়ের সময় মাদারগঞ্জ উপজেলায় জামায়াতের আমির আমিনুর রহমানসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। টাঙ্গাইল -টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে মিছিল করাকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে উপজেলা যুবদলের যুগ্ম-সম্পাদক আব্দুল আলীম সিকদার নিহত হয়েছেন। আজ দুপুর পৌনে একটার দিকে মির্জাপুরের গোড়াই হাটু ভাঙা এলাকায় হরতাল সমর্থনে মিছিল বের করেন সাবেক এমপি ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ রফ। ঠিক একই সময় টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সদস্য ও গোড়াই ইউনিয়ন বিএনপির শ্রমিক ইউনিয়নের আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি ফিরোজ হায়দারের নেতৃত্বে আরও একটি মিছিল বের হয়। এ সময় কোনো এক কারণে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে পাঁচজন আহত হন।এ ঘটনার পর যুবদল নেতা আলীম সিকদারের নেতৃত্বে আবারো মিছিল বের হলে আবুল কালাম আজাদ গ্রুপের মন্টু, শাহআলম, লাবিব, বুরহান, হাসু ও আব্দুলসহ আট থেকে নয়জন লাঠিসোঠা দিয়ে পিঠিয়ে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আলীম সিকদারকে জখম করে। পরে কুমুদিনি হাসপাতালে নেয়ার পথে তিনি মারা যান। রাজধানীর হরতাল চিত্র – রাজধানীতে (সোমবার) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীর নেতৃত্বে ৫ সদস্যর একটি দল হরতালের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। ভোর পৌনে ৬টার দিকে যাত্রাবাড়ীর দনিয়ায় আওয়ামী লীগ অফিসে আগুন ধরিয়ে দেয় হরতাল সমর্থকরা। পরে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দু’টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। সকাল সাড়ে ৬টার দিকে রাজধানীর মাদারটেকে রাস্তায় পেট্রল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে হরতালের সমর্থনে মিছিল করেছে ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগরী পূর্ব শাখা। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে দক্ষিণ বনশ্রী এলাকায় হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করে জামায়াতে ইসলামী। জামায়াতের ঢাকা মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের নেতৃত্বে মিছিলটি বের করা হয়। সকাল পৌনে ৭টার দিকে মিরপুর ১১ নম্বর বাসস্ট্যান্ডে ৫টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে একটি ক্যাভার্ডভ্যানে আগুন দেয় হরতাল সমর্থকরা। পরে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। সকাল ৭টার দিকে বিমানবন্দর সড়ক থেকে খিলক্ষেত থানা পুলিশ হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করার প্রস্তুতি নেয়ার সময় ২ ছাত্রদল কর্মীকে আটক করেছে। এ সময় পুলিশের ধাওয়া খেয়ে অন্যরা পালিয়ে যায়। সকাল সোয়া ৭টার দিকে ধানমণ্ডিতে হরতালের সমর্থনে ঝটিকা মিছিল করেন জাময়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা ৩টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটান। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে রামপুরা কাঁচাবাজার এলাকায় ছাত্রদল-যুবদল হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়ে। পুলিশও পাল্টা ফাঁকা গুলি ছুড়লে সংর্ঘষ বেধে যায়। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ দু’জনকে আটক করেছে। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে সচিবালয়ে পেছনে তোপখানা রোডে ২টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় হরতাল সমর্থনকারী পিকেটাররা। সেখান থেকে পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি। সকাল পৌনে ৮টার দিকে বাড্ডা থানাধীন গুলশান লিংকরোডে গুদারাঘাট এলাকায় হরতালের সমর্থনে ঝটিকা মিছিল শেষে ৩টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে ছাত্রদল-যুবদল। এ সময় পুলিশ ধাওয়া দিয়ে ৩ জনকে আটক করেছে বলে জানিয়েছেন বাড্ডা থানার ওসি মোঃ ইকবাল হোসেন। এর আধা ঘণ্টা আগে প্রগতি স্মরণীতে পুলিশভ্যানকে লক্ষ্য করে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটালে পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লেও কেউ হতাহত বা আটক হয়নি। রাজধানীর বাইরে হরতাল পরিস্থিতি- রাজধানীর বাইরেও বিভিন্ন স্থানে হরতাল সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সংঘর্ষ, ভাংচুর, ককটেল বিস্ফোরণ, গাড়িতে আগুনসহ সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে। হরতালের দ্বিতীয় দিন সকাল ৬টা থেকে চুয়াডাঙ্গা জেলার বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা অবরোধ করেছে পিকেটাররা। সকাল ১০টা থেকে জীবননগর হাসাদাহ বাসস্ট্যান্ড থেকে হাসপাতাল পর্যন্ত হরতালকারীরা রাস্তা অবরোধ করে রেখেছে। জেলা শহরসহ আলমডাঙ্গা, দামুড়হুদা, দর্শনা ও জীবননগর এলাকায় ১৮ দলের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। যেকোন ধরনের সংঘর্ষ এড়াতে শহরে মোতায়েন করা হয়েছে তিন প্লাটুন বিজিবি, দুই প্লাটন র্যাব। লালমনিরহাটে রেললাইনের স্লিপার তুলে ফেলায় ৪ বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। এতে ৩০ জন আহত হন। কুমিল্লায় পুলিশ ও পিকেটারদের সংঘর্ষে ১৭ জন আহত হয়েছে। সকাল ১০টার দিকে ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা মিছিল বের করলে নগরীর কান্দিরপাড় এলাকায় পুলিশ বাধা দিলে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ ১৮ দলের ১০ নেতাকর্মীকে আটক করে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইকবাল মাহমুদ খানের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে পিকেটাররা। এ সময় বাড়ি জানালা দিয়ে পেট্রোল ঢেলে আগুনও দেয় তারা। তবে বাড়ির লোকজন ও স্থানীয়রা দ্রুত আগুন নিভিয়ে ফেলায় তেমন কোন ক্ষতি হয়নি। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কাভার্ডভ্যানে আগুন দিয়েছে হরতাল সমর্থকরা। চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে বিএনপির মিছিল থেকে দু’টি বাস ভাংচুর করে তারা। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় গাড়ি ভাংচুর, ককটেল বিস্ফোরণ করেছে হরতাল সমর্থকরা। এর আগে গতকাল প্রথম দিনের হরতালে সারা দেশে সহিংসতায় সাতজন নিহত হয়েছেন। নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনের প্রাথমিক কর্মসূচি হিসেবে শুক্রবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট আয়োজিত সমাবেশে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া এ হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এ খবর রেডিও তেহরান এর তাঃ- ২৮ অক্টোবর ২০১৩
বিরোধী দলের ডাকা হরতালের দ্বিতীয় দিনেও সহিংসতা – বিএনপি নেতাসহ নিহত ৪
Share This