জি নিউজঃ–ভারতে পাচার হওয়া বাংলাদেশি কিশোরী আফরোজা খাতুনকে ৫ বছর পর বিজিবির মাধ্যমে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে ভারত। এ সময় ১ লাখ ৬০ হাজার ভারতীয় রুপি ক্ষতিপূরণ দেয়া হয় আফরোজার নামে। সীমান্ত সম্মেলনে যোগ দিতে আসা বিএসএফ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আফরোজা ঢাকা ফিরেছে। শনিবার সকালে ঢাকার পিলখানা বিজিবি সদর দপ্তরে বিজিবি’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদের কাছে আফরোজাকে হস্তান্তর করেন বিএসএফ’র স্পেশাল ডিজি বি.ডি শর্মা। এ সময় বিজিবি মহাপরিচালক ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) প্রধানকে ধন্যবাদ জানান। বি.ডি শর্মা বলেন, আমরা মানবতার কথা চিন্তা করে আফরোজাকে নিজের দেশে তার পরিবারের কাছে ফেরত দিয়েছি।২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে আফরোজা ও তার বড় ভাই মুন্না পারভেজকে নিয়ে তাদের অসহায় মা মনোয়ারা বেগম কাজের সন্ধানে দালাল চক্রের মাধ্যমে অবৈধভাবে হিলি সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে যান। আফরোজার জন্ম ২০০১ সালে নাটোর জেলার বেলঘরিয়া শিবপুর (দাসপাড়া) গ্রামের বাড়িতে। তার বাবা মোঃ আকরাম হোসেন পাবনা সদর উপজেলার জহিরপুরের বাসিন্দা। মা মনোয়ারা বেগম আফরোজার বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন।
অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের পর দিল্লিতে আফরোজার দূর সম্পর্কের খালার বাসায় তারা আশ্রয় গ্রহণ করে। কয়েক দিন পরই তার মা মনোয়ারা বেগম অসুস্থ হয়ে দিল্লিতে চিকিৎসা গ্রহণের পর ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসেই বাংলাদেশে ফিরে আসার জন্য ভারতের শিলিগুড়িতে চলে আসেন। সেখান থেকে বালুরঘাট সীমান্তে আসার পর প্রচ- বৃষ্টির কারণে সীমান্তে আটকা পড়লে ভারতীয় পুলিশ তাদের ৩ জনকেই আটক করে বালুর ঘাট জেলা কারাগারে প্রেরণ করে।পরে বালুর ঘাট আদালত মনোয়ারা বেগমকে ভারতে অনুপ্রবেশের দায়ে দুই বছরের কারাদ- এবং ১০ হাজার রুপি জরিমানা করে। আফরোজা মায়ের সঙ্গে কারাগারে থাকলেও বড় ভাই মুন্না পারভেজের বয়স ৬ বছরের বেশি হওয়ায় তাকে বালুরঘাট শুভায়ন হোমে পাঠিয়ে দেয়া হয়।পরবর্তী সময়ে মনোয়ারা বেগম ও মেয়ে আফরোজাকে বালুরঘাট কারাগার থেকে মুর্শিদাবাদের বহরমপুর কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। বহরমপুর কারাগারে থাকাকালীন অসুস্থতাজনিত কারণে তাকে বহরমপুর সদর হাসপাতালে নেয়া হলে ২০০৯ সালের ১৩ অক্টোবর সেখানে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।এসব ঘটনা জানার পর আফরোজা ও তার ভাই মুন্না পারভেজকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য বিজিবির পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হয়। বিজিবির পক্ষ থেকে এ বিষয়টি বিজিবি-বিএসএফের বিভিন্ন পর্যায়ের বৈঠকে তুলে ধরা হয়। মা মনোয়ারা বেগমের মৃত্যুর পর আফরোজার অনিশ্চিত ভবিষ্যত ও দুঃখ দুর্দশার কথা জানতে পেরে পশ্চিমবঙ্গ কারা অধিদপ্তরের তৎকালীন অতিরিক্তি মহাপরিচালক (বর্তমানে অতিরিক্ত মহাপরিচালক, বিএসএফ-ইস্ট) বংশী ধর শর্মা (বি ডি শর্মা) তার স্থানীয় অভিভাবকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তিনি উদ্যোগ নিয়ে ভারত সরকারের অনুমতিক্রমে তাকে নদীয়া জেলার (দয়াবাড়ী) রানাঘাট হলি চাইল্ড হোমে ভর্তির ব্যবস্থা করেন। বি ডি শর্মা তার আন্তরিকতা ও কর্তব্যবোধ থেকে নির্মম পরিস্থিতির শিকার আফরোজা ও মুন্না পারভেজকে সহায়তার জন্য রাজ্য মানবাধিকার কমিশনকে বিষয়টি অবহিত করেন। কমিশন আফরোজা ও মুন্না পারভেজকে ক্ষতিপূরণ বাবদ দেড় লাখ রুপি করে প্রদান করেন। মুন্না পারভেজকে ২০১১ সালের ২৪ আগস্ট ইং তারিখে বাংলাদেশে ফেরত আনা হয়। এদিকে, বিএসএফ’র কাছ থেকে আফরোজা খাতুনকে গ্রহণ করে তার জন্য বিজিবি মহাপরিচালকের নির্দেশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বিজিবি’র পক্ষ থেকে আফরোজা খাতুনের সম্মতিক্রমে এবং তার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে বিজিবি’র খরচে রাজশাহীর শহীদ কর্নেল কাজী এমদাদুল হক পাবলিক স্কুলে পড়ালেখার সুযোগ রাখা হয়েছে। আফরোজার জন্য বাসস্থান, অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসাসহ অন্যান্য ব্যয়ভার বহনের জন্য অ্যাসোসিয়েশন ফর কম্যুনিটি ডেভেলপমেন্ট (এসিডি), সাগরপাড়া, রাজশাহী দায়িত্ব নিয়েছে। এ ছাড়া আফরোজার যেকোনো প্রয়োজনে তার বাবা ও নানীর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আফরোজার নামে প্রাপ্ত অর্থ ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড, রাজশাহী শাখায় এফডিআর করে রাখা হবে।, তাঃ- ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৩