কাজী নাসির উদ্দীন, সাতক্ষীরাঃচরম অনিয়ম ও দূর্ণীতির মধ্যদিয়ে আমদানি করা ভারতীয় ১০ ট্রাক পিয়াজ আটকের চার ঘণ্টা পর ১০ লাখ টাকার আর্থিক সুবিধা নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ভোমরা স্থল বন্দর শুল্ক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। গত সোমবার সন্ধ্যায় সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দর দিয়ে এই পিঁয়াজ আমদানি করা হয়েছিল বলে সংশিষ্ট সূত্রগুলোর দাবী।
ভোমরা স্থল বন্দরের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, বিপুল পরিমান এই পিয়াজের আমদানিকারক সংস্থা মেসার্স শরিফ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী সাত¶ীরা সদর উপজেলার পদ্মশাঁখরা গ্রামের শরিফুল ইসলাম। গত সোমবার সন্ধ্যায় ভারত থেকে ১০টি ট্রাকে ১৫০ মেট্রিক টন পিঁয়াজ আমদানি করেন। ওই পিঁয়াজ আমদানির জন্য শরিফুল ইসলাম ২০১২ সালের অক্টোবর মাসে ন্যাশনাল ব্যাংক সাতক্ষীরা শাখায় এলসি খোলেন। এ সময় তিনি টন প্রতি ১৩০ ডলার বা ১০ হাজার ১৯২ টাকার ২০ শতাংশ হিসেবে ১৫০ টনের বিপরীতে টাকা জমা দেন। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ি এক টন ভারতীয় পিঁয়াজ আমদানি করতে এক হাজার ১৫৫ ডলারের বিপরীতে ৯০ হাজার ৫৫২ টাকার ২০ শতাংশ জমা দেওয়ার কথা। সূত্রটি আরো জানায়, নিয়ম অনুযায়ি এলসি খোলার তিন মাসের মধ্যে পণ্য আমদানি বা রফতানি করা সম্ভব না হলে সেক্ষেত্রে তিন বার ঘোষণার মাধ্যমে সর্বোচ্চ আরো তিন মাস সময় পাওয়া যায়। অথচ আমদানিকারক সংস্থাটি আরো আট মাস সময় পেরিয়ে গত ১৫ ডিসেম্বর সংশিষ্ট ব্যাংকে টনপ্রতি ১০ হাজার ১৯২ টাকার ৮০ শতাংশ ৮ হাজার ১৫৩ টাকা জমা দিয়ে গত ১৫ ডিসেম্বর নো অবজেকশন সার্টিফিকেট গ্রহণ করেন। গেল সোমবার সন্ধ্যায় ১০টি ট্রাকে উক্ত আমদানিকৃত ১৫০ টন পিঁয়াজ ছাড় করান গ্যাঞ্জেস ইন্টারন্যাশনালের পক্ষে ভোমরা সিএÊএফ কর্মচারি এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ডাঃ আক্তার হোসেন (পানি)। নিয়ম বর্হিভুতভাবে আমদানি করার অভিযোগে ভোমরা বন্দরের সহকারি শুল্ক কর্মকর্তা আক্তার হোসেন ওই পণ্য আটক করেন।
ভোমরা স্থল বন্দরের কয়েকজন ব্যবসায়ি জানান, নিয়ম বহির্ভুতভাবে ওই পণ্য আনতে আমদানিকারক সংস্থাটি এক কোটি ৩৫ লাখ টাকার পরিবর্তে মাত্র ১৪ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছে। আইনভঙ্গের অভিযোগে শুল্ক কর্তৃপক্ষ ওই পণ্য আটক করে নিলাম করলে বাজার দর ৫৫ টাকা কেজির পরিবর্তে ৫০ টাকা কেজি হলেও সরকার রাজস্ব পেত কমপক্ষে ৭৫ লাখ টাকা। সেক্ষেত্রে শুল্ক কর্মকর্তা ও কয়েকজন সিএন্ডএফ এজেন্ট সংশিষ্ট আমদানি কারকের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা গ্রহণের পর উক্ত পেয়াজ সোমবার রাত ১০টার দিকে ছেড়ে দেন। তিনি আরও জানান, এই পন্য বাংলাদেশ অভ্যš—রে আসতে সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তাসহ সেদেশের রাজস্ব কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার সুস্পষ্ট আলামত পাওয়া যায়। কারণ হিসেবে তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, যে অভিযোগে ভোমরা কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আটক করেছে একই অভিযোগে সেদেশের কাস্টমস কর্তৃপক্ষকেও এই পন্য আটক করার কথা। হিসেব অনুযায়ী সেদেশের কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আটক করে একই ভাবে অনিয়মের মধ্য দিয়ে বিপুল পরিমান পিয়াজ ছাড় করানো হয়েছে। সংশিষ্ট সূত্র আরও জানান, ১০টি ট্রাকের পিয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে এলসি বিক্রয় করা হয়েছে ট্রাক প্রতি ৩ লাখ টাকা করে ৩০ লাখ টাকায়। দুদেশের কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করতে সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকার উৎকোচ দিয়ে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে এই পিয়াজ আমদানি করা হয়। ফলে ছাড়কারক প্রতিষ্ঠানটি রাতারাতি ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা অবৈধভাবে হাতিয়ে নিয়েছে। যেকারণে সরকার প্রায় ৭৫ লাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়।
এ ব্যাপারে ওই পিঁয়াজের ছাড়কারক ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট কর্মচারি এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ডাঃ আক্তার হোসেন জানান, বিষয়টি শুধুমাত্র আমদানি কারক ও ব্যাংকের বিষয়। তিনি কাগজপত্র অনুযায়ি পন্য ছাড় করিয়েছেন মাত্র। মেসার্স শরিফ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শরিফুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করে কথা বলা সম্ভব হয়নি। ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাহিনুর ইসলাম সাহিন জানান, এ পণ্য ছাড় করানোর জন্য অনিয়ম হলে সেক্ষেত্রে কোন সিএন্ডএফ এজেন্ট কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা মেলেনা।
ন্যাশনাল ব্যাংকের সাতক্ষীরা শাখার ব্যবস্থাপক কাজী মাহমুদ হোসেন জানান, আমদানিকারক ও রফতানিকারকের সঙ্গে সমঝোতা করে কাজ হলে সেক্ষেত্রে সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ি ১৫ ডিসেম্বর নো অবজেকশন সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে। ফলে শুভঙ্করের ফাঁকির জন্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়। ভোমরা শুল্ক অফিসের সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা আক্তার হোসেন জানান, নো অবজেকশন সার্টিফিকেটটি যাঁচাই বাছাই করার পর ওই পণ্য সোমবার রাত ১০ টায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি উক্ত পেয়াজ আটকের কথা অস্বীকার করে বলেছেন কাগজপত্র যাচাই বাছাই করতে দেরি হয়েছে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এবং আমদানিকারক প্রতিষ্টান ও ছাড় কারক প্রতিষ্ঠান পৃথক পৃথক অঙ্গীকার নামা দিলে পন্য ছাড় করানো হয়। তিনি আর্থিক সুবিধা গ্রহণের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এই পেয়াজ টন প্রতি ১৩০ ডলারের বিপরিতে এলসি খোলা হলেও ১১৫৫ ডলারের এ্যাসেসমেন্ট করে ছাড় করা দেয়া হয়েছে। ফলে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়নি বলে তিনি দাবী করেন।