মৌলভীবাজার , জি নিউজঃ মুন্সীবাজারের সীমার প্রেমই হত্যা করেছে আমার ছেলে রাসেলকে। ইউপি মেম্বার রায়হান ফার“ক এ সম্পর্কে সবকিছু জানেন। ঘটনার পর পরই শেখ রায়হান ফার“ক আমাকে বলেছেন- “মামলা করলেই যে ছেলে হত্যার বিচার হবে তারও কোন নিশ্চয়তা নেই। তাছাড়া, ছেলেকে তো আর ফিরে পাবেনা। কাজেই, মামলা করে আর কি করবে। তার চেয়ে আমি তোমাকে লাখ দুয়েক টাকা নিয়ে দিই, জসীম, তোফায়েল, সুমন ও রনির সাথে আপোষ-মিমাংসা করে ফেল।
শেখ রায়হান ফার“কের এসব কথা থেকেই আমি নিশ্চিত, জসীম, তোফায়েল, সুমন ও রনিই আমার ছেলে রাসেলকে হত্যা করে লাশ রেললাইনের উপর ফেলে রাখে”। মৌলভীবাজার পৌর জনমিলণ কেন্দ্রের সম্মুখস্থ ছাতনী তলার জমশেদের চায়ের দোকানে বসে অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে এ প্রতিবেদককে এসব কথা বলেছিলেন একমাত্র শিশুকন্যা কোলে কমলগঞ্জের বহুল আলোচিত রাসেল হত্যামামলার বাদী নিহত রাসেলের মা স্বপ্না বেগম। কমলগঞ্জ উপজেলার শমসেরনগর ইউনিয়নস্থিত দৌলতপুর গ্রামের স্বপ্না বেগম জনান- শত্র“ থেকে বন্ধু হওয়া একই গ্রামের জসীম ও তোফায়েল, পার্শবর্তী সিংরাউলী গ্রামের সুমন ও রাধানগর গ্রামের রনি গত বছরের ৭ নভেম্বর তার একমাত্র পুত্র রাসেল (১৯)কে একই উপজেলার মুন্সীবাজার গ্রামে তার প্রেমিকা সীমা’র বাড়ী বেড়াতে যাবার কথা বলে বাড়ী থেকে নিয়ে গিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে তার লাশ শমসেরনগর রেলওয়ে আউটার সিগনালের নিকটস্থ রেললাইনের উপর ফেলে রাখে।
লোকমুখে রেললাইনের উপর লাশ পড়ে থাকার খবর শুনে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন লাশটি তারই পুত্র রাসেলের। পরে কমলগঞ্জ থানার পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মৌলভীবাবাজর সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে এবং পরবর্তীতে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়েরের মাধ্যমে দায়িত্ব শেষ করে। ফলে, বাধ্য হয়ে তিনি আদালতে হত্যামামলা দায়ের করলে, বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে কমলগঞ্জ থানা রাসেল হত্যামামলা (নং- জি আর ১৩/১৩) রেকর্ড এবং প্রথমে পলাতক আসামী তোফায়েলকে গ্রেফতার করে। এর দীর্ঘদিন পর কুলাউড়া উপজেলার শরিফপুর ইউনিয়নস্থিত আমতল এলাকায় এক মহিলার মোবাইল ফোন ছিনতাই করে পালানোর সময় রাসেল হত্যামামলার আরেক আসামী সুমন জনতার হাতে ধৃত ও পুলিশে সোপর্দ হলে পুলিশ তাকে রাসেল হত্যামামলায়ও গ্রেফতার দেখায়। এদিকে, তোফায়েল গ্রেফতার হবার পর থেকে তার পরিবারের লোকজন রাসেল হত্যামামলার বাদী স্বপ্না বেগমকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য নানা ভয়ভীতি ও হুমকী প্রদর্শন করে আসছিল।
পরবর্তীতে সুমন গ্রেফতার হবার পর উভয় আসামীর পরিবার একজোট হয়ে স্বপ্না বেগমকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য নানা ভয়ভীতি ও হুমকী প্রদর্শন করে চলেছে। এমতাবস্থায়, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন রাসেলের মা ও রাসেল হত্যামামলার বাদী স্বপ্না বেগম। অপরদিকে, হত্যাকান্ডের দীর্ঘদিন অতিক্রান্ত হলেও পুলিশ এখনও এ হত্যাকান্ডের কোন কুল কিনারা করছেনা। স্বপ্না বেগম জানান- রাসেল ও আসামীদের মধ্যে প্রথমে বিরোধ ছিল এবং এ নিয়ে রাসেল কমলগঞ্জ থানায় মামলাও করেছিল। কিন্তু, কমলগঞ্জ থানা সেই মামলাটি রেকর্ড করেনি। পরবর্তীতে আসামীরা কৌশলে রাসেলের সাথে ঘনিষ্ট বন্ধুত্ব গড়ে তোলে।
সেই সুবাদে জসীমের সাথেই তার প্রেমিকা র“মাদের বাড়ীতে যাওয়া-আসার সুবাদে র“মার ছোটবোন সীমা’র সাথে রাসেলের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। কিন্তু, জসীম ও র“মা তাদের এ প্রেম মেনে নিতে না পেরে, পুরনো বিরোধের প্রতিশোধ ও সীমা’র সাথে প্রেমের অপরাধের শাস্থি হিসাবে সু-পরিকল্পিতভাবে প্রেমিকা সীমা’র বাড়ী বেড়াতে যাবার কথা বলে জসীম, তোফায়েল, সুমন ও রনি তাকে বাড়ী থেকে নিয়ে গিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে তার লাশ শমসেরনগর রেলওয়ে আউটার সিগনালের নিকটস্থ রেললাইনের উপর ফেলে রাখে। রাসেল হত্যাকান্ডের সপ্তাহ দুয়েক পর র“মাকে বিয়ে করে ঘরে তোলেছে আসামী জসীম।
এর মাস খানেক পর সীমা’রও বিয়ে হয়েছে মৌলভীবাজার জেলা সদরের একজনের সাথে। স্বপ্না বেগম তার পুত্র হত্যামামলার আসামীগণ ও আসামী জসীমের তৎকালীন প্রেমিকা ও বর্তমানে স্ত্রী র“মা এবং রাসেলের প্রেমিকা ও র“মা’র ছোটবোন সীমাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে রাসেল হত্যাকান্ডের সকল রহস্য উদঘাটিত হবে বলে দাবী করেন।
আব্দুল হাকিম রাজ/জি নিউজ