জিনিউজ অনলাইন:- রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্পে বাংলাদেশে চরম সংকটকাল চলছে। নিরাপদ কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করতে গিয়ে একের পর এক বন্ধ হচ্ছে কারখানা । রপ্তানিতেও নেমেছে ধ্বস। পোশাক প্রস্তুতকারী ও রপ্তানিকারকদের প্রতিষ্ঠান বিজিএমইএ বলেছে ২০১৩ সালে এপ্রিল মাসে সাভারের রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর থেকে ২১০টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। আরো অনেকগুলো বন্ধের পথে রয়েছে। অন্যদিকে ক্রেতাদের অর্ডার কমে যাওয়ায় রপ্তানিও কমে যাচ্ছে। আর এ সবের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে রপ্তানির ওপর।
বিজিএমইএ’র হিসাব মতে, গত অর্থবছরের এপ্রিল মাস থেকে এ পর্যন্ত তৈরি পোশাক শিল্পের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ক্রমাগতভাবে কমেছে। নতুন অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি প্রবৃদ্ধি শুরুই হয়েছে বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে। চলতি বছরের জুলাই মাসে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ০.৭ শতাংশ। যেখানে গত বছরের একই মাসে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২৬.১৩ শতাংশ।
২০১২ সালে সাভারের তাজরীন ফ্যাশনসে আগুনের ৬৯ জনের মৃত্যু ও ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসে হাজারের বেশি শ্রমিকের মৃত্যুর পর বাংলাদেশের পোশাক কারখানায় নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরির দাবীতে সোচ্চার হয় দেশী বিদেশী মহল । শ্রমিক সংগঠন ও বিদেশী ক্রেতাদের চাপের মুখে সরকার বাধ্য হয় ব্যক্তিগত খাতের এসব শিল্প-কারখানায় উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির জন্য মালিকদের উপর চাপ দিতে।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধা স্থগিত রয়েছে। নিরাপদ কর্মপরিবেশ ইস্যুতে বাংলাদেশী পোশাকের প্রধান ক্রেতা আমেরিকায় গত তিন মাস ধরে পোশাক রপ্তানি কমছে। সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে দেশের বৃহত্তম পোশাক শিল্প ওপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান সিনহা বলেছেন, গত ছয় মাস ধরে আমাদের পোশাক রপ্তানি কমছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলিও আমেরিকার সঙ্গে যোগ দিয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যে সব কারখানায় পরিবেশ উন্নত করা হয়নি সে সব কারখানায় ইতোমধ্যে বিদেশী ক্রেতারা কার্যাদেশ দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
এদিকে, গ্যাস-বিদ্যুৎ, রাস্তা-ঘাটের অবকাঠামো সমস্যার কারণে একদিকে খরচ বাড়ছে অন্যদিকে শ্রমিক আন্দোলনের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। তাছাড়া, শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি, পরিবহন খরচ, ব্যাংক ঋণের সুদের হারসহ অন্য খরচ বেড়ে যাওয়ায়কারখানার গড় উৎপাদন খরচ ১৩ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু সেই অনুযায়ী বাড়েনি পণ্যের দাম। ফলে অনেক কারখানা ব্যয় নির্বাহ করতে না পেরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে শ্রমিক নিরাপত্তা পরিষদের আহবায়ক ড: হামিদি হোসেন রেডিও তেহরানকে জানান, গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ হলে শ্রমিকরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাছাড়া মালিক বা ক্রেতারাও সেটা চাইতে পারে না । এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দাবী করেন তিনি ।
ওদিকে গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু কারখানা বন্ধের জন্য মালিক পক্ষ ও সরকারের শ্রমিক বিরোধী মানসিকতাকেই দায়ী করেন। মিশু বলেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে এ খাতকে টিকিয়ে রাখা যাবে না ।
এরকম অবস্থার মধ্যে শ্রমিক সংগ্রাম কমিটির দাবির সমর্থনে আগামী কাল বিজিএমইএ ভবন ঘেরও কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়েছে।প্রতিবেদনটি:রেডিও তেহরান, তাদের দাবী হচ্ছে, বেআইনিভাবে বন্ধ ঘোষিত তোবা গ্রুপের পাঁচটি কারখানা খুলে দিতে হবে, বকেয়া পাওনা ও ঈদ বোনাস পরিশোধ করতে হবে।