অনলাইন ডেস্ক:- বাংলাদেশে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং ঘোষিত নির্বাচনের তফসিল বাতিলের দাবিতে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ১৩১ ঘণ্টার অবরোধ শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় দফা অবরোধ কর্মসূচি শেষ হওয়ার আগেই তৃতীয় দফায় ৭২ ঘন্টার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তারা। প্রথম দফায় ৭১ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি পালন করে ১৮ দল। দ্বিতীয় দফায় প্রথমে ৭২ ঘণ্টা অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হলেও পরে তা ৫৯ ঘণ্টা বাড়িয়ে ১৩১ ঘণ্টা করা হয়। প্রথম দফার তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচিতে সারাদেশে অন্তত ২৫ জন নিহত হয়। দ্বিতীয় দফার অবরোধে সারাদেশে মারা গেছেন ৩০ জনের বেশি মানুষ। এর মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে বিএনপি ও জামায়াতের অন্তত ২৫ নেতাকর্মী নিহত হয়েছে। আর সংঘর্ষে আওয়ামী লীগের ৭ নেতাকর্মীরও মৃত্যু হয়েছে। ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিরোধী দলের আন্দোলনে গত ২৫ অক্টোবর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯০ জনে। এদিকে, চলমান আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় শনিবার ভোর ছয়টা থেকে তৃতীয় দফা অবরোধের ডাক দিয়েছে ১৮ দলীয় জোট। এই অবরোধ চলবে মঙ্গলবার ভোর ছয়টা পর্যন্ত। ৭২ ঘণ্টার এই কর্মসূচিতে দেশব্যাপী সড়ক, নৌ ও রেলপথ অবরোধ করা হবে। অবরোধের শেষ দিনের চিত্র:- অবরোধের শেষ দিনের সকালে রাজধানীর সায়েদাবাদে একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে বাসের হেলপার হাসান দগ্ধ হয়েছে। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, সকালে সায়েদাবাদ জনপদ মোড়ে থেমে থাকা ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চলাচলকারী ইশরাত পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসটিতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভান। পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজারে ছোড়া হাতবোমার বিস্ফোরণে বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভির এক গাড়িচালক আহত হয়েছেন। বংশাল থানা পুলিশ জানায়, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রায়সাহেব বাজার মোড় ও জংশন রোডের মাঝামাঝি এলাকায় ২০ থেকে ২৫টি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটায় অবরোধকারীরা। এ সময়ে, সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা এনটিভির একটি গাড়ির সামনের কাঁচ ও হেডলাইট ভেঙে যায়। গাড়ির চালক বিপ্লব আহত হন। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি শান্ত করে পুলিশ। ফেনীতে গুলিবিদ্ধ রিকশাচালকের মৃত্যু– জেলার দাগনভূঞা উপজেলার সিলোনীয়ায় সোমবার আওয়ামী লীগ-শিবিরের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ রিকশাচালক মফিজুর রহমান চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। সোমবার সংঘর্ষকালে রিকশাচালক মফিজ ছাড়াও শিবিরের অন্তত ১০ নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধসহ উভয় পক্ষের অন্তত ২৫ জন আহত হন। এ সময় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা সময় টিভির, লঞ্চে আগুন– বিরোধীদলের অবরোধে সারা দেশে সড়ক ও রেলপথে নাশকতার পর এবার লঞ্চে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। বুধবার রাতে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ওয়াপদা ঘাটে বেঁধে রাখা এমভি নড়িয়া-১, এমভি সুরেশ্বর-১ সহ তিনটি লঞ্চে টায়ার জালিয়ে আগুন দেয় অবরোধকারীরা। আগুনের লেলিহান শিখা দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা এসে দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ ঘটনায় লঞ্চের কর্মী আনোয়ার হোসেন দগ্ধ হন। জড়িত থাকার অভিযোগে আটক করা হয় উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক দবির বেপারীকে। চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুর– বন্দর নগরী চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে অবরোধকারী। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বন্দরনগরীর প্রবেশমুখ সিটি গেইট এলাকা থেকে অবরোধের সমর্থনে একটি মিছিল এ কে খান এলাকার দিকে যায়। এ সময় তারা পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে হাতবোমা নিক্ষেপ করে। এরপর পুলিশ অবরোধকারীদের ধাওয়া দেয় এবং টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এ পর্যায়ে অবরোধকারীরা ওই এলাকার বিভিন্ন গলিতে ঢুকে পড়ে এবং পাহাড়তলী ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুর করে এবং আসবাবপত্রে আগুন ধরিয়ে দেয়। চুয়াডাঙ্গায় সকড় অবরোধ– চুয়াডাঙ্গা : অবরোধের শেষ দিনে জীবননগরে সড়ক অবরোধ করে জামায়াত-শিবির। সকাল সাড়ে আটটার দিকে দলের নেতা-কর্মীরা পাইলট হাইস্কুলের সামনে রাস্তা অবরোধ করে। অন্যদিকে, বিএনপি নেতা জীবননগর পৌর মেয়র নোয়াব আলীর নেতৃত্বে বাসস্ট্যান্ডের কাছে সড়ক অবরোধ করে বিএনপির নেতাকর্মীরা। কুড়িগ্রামে সংঘর্ষে আহত ৫০– কুড়িগ্রাম : জেলার চিলমারী উপজেলা শহরে বিএনপি কর্মীদের পুলিশের সংঘর্ষে কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়েছে। স্থানীয়রা জানায়, সকাল ১০টার দিকে অবরোধ সমর্থনে বিএনপির মিছিলে বাধা দিলে তারা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ পাল্টা রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করা হয়। এতে অন্ততঃ ৫০জন আহত হয়। পরে তারা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এছাড়া তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি অ্যাম্বুলেন্সও জ্বালিয়ে দেয়। সিলেটে রেলস্টেশনের আউটার সিগনাল বক্সে আগুন– সিলেট: সিলেট রেলস্টেশনের আউটার সিগনালের কন্ট্রোল বক্সটি পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বুধবার দিবাগত রাত সোয়া একটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষণিকভাবে বালি ছুড়ে ও পানি ঢেলে আগুন নিভিয়ে ফেলা হয়। নাশকতার উদ্দেশ্যে এটি করা হয়ে থাকতে পারে বলে জানায় পুলিশ। এতে কন্ট্রোল বক্স ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ট্রেন চলাচলে কোন বিঘ্ন ঘটবে না জানিয়েছে স্টেশন মাস্টার। নারায়ণগঞ্জে সংঘর্ষ, রেললাইনে আগুন– ফতুল্লায় অবরোধের সমর্থনে বের হওয়া যুবদলের মিছিলে বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং সংঘর্ষে অন্তত ৫ জন আহত হন। এদিকে, নারায়ণগঞ্জ শহরের গলাচিপা এলাকায় সকালে ঢাকা-নারায়নগঞ্জ রেললাইনে আগুন দিয়েছে শিবির কর্মীরা। পরে পুলিশ এসে শিবিরকর্মীদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ঝালকাঠিতে ট্রাকে আগুন– অবরোধ চলকালে বুধবার রাতে ঝালকাঠি-বরিশাল আঞ্চলিক মহাসড়কের ষাটপাকিয়ায় প্যাকেটজাত খাদ্য বোঝাই ট্রাকে আগুন দিয়েছে আবরোধকারীরা। এছাড়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় মিছিল করে ১৮ দলের নেতাকর্মীরা। চাঁদপুর: অবরোধ চলাকালে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপির নেতা-কর্মীরা। তারা ফরিদগঞ্জ-রায়পুর সড়কে গাছের গুড়ি ও টায়ার জ্বালিয়ে পিকেটিং করে। খবর রেডিও তেহরানএর