সাতক্ষীরা প্রতিনিধি ঃ সাতক্ষীরায় কথিত প্রেমের ঘটনায় স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ সমাজপতিদের নির্যাতনে লোকলজ্জায় নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আত্মহননের চেষ্টায় ব্যর্থ কিশোরী তপতী মন্ডল দীর্ঘ ১০দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে গতকাল শুক্রবার ভোরে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আলিপুর ইউনিয়নের গাংনিয়া গ্রামের নিজ বাড়ীতে সন্ধ্যায় মরদেহ এনে সৎকার করার প্রস্তুতি চলছিল। বিষয়টি তার বাবা সুবল মন্ডল নিশ্চিত করেছেন। সমাজপতিদের অত্যাচার আর নির্যাতনের ছাফ মুছে ফেলতে মাত্র ১৬ বছর বয়সী তপতি মÊলকে এপৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হল।
প্রাপ্ত তথ্যে জানাগেছে, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার গাংনিয়া গ্রামের সুবল মন্ডলের মেয়ে তপতী মন্ডলের সাথে একই গ্রামের গঙ্গারাম মÊলের ছেলে মিলন মÊলের কথিত প্রেমের সম্পর্ককে ঘিরে স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ সমাজপতিদের মাথা ব্যাথা শুর“ হয়। এরই জেরধরে ইউপি সদস্য মোশাররফ হোসেন নিউটনসহ স্থানীয় প্রভাবশালি সমাজপতিরা গত ৩ জুন তপতীর বাড়ির সামনে বিচার বসিয়ে তপতীকে বেপরোয়া মারপিট করে। লোকলজ্জায় পরদিন বেলা ১১ টার দিকে তপতী মÊল নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। গুর“তর আহত অবস্থায় তপতীর পরিবার তপতীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সাতক্ষীরা শহরে নেয়ার চেষ্টা করে। শহরে আসলে অমানুষিক ঘটনা জানাজানি হবে এমনটি ভেবে ইউপি সদস্য মোশাররফ হোসেন নিউটনসহ গ্রাম্য প্রভাবশালি সমাজপতিরা বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। এক পর্যায়ে সমাজপতিদের চাপে সংখ্যালঘু এ পরিবারটি কোন দিশে বিশে না পেয়ে ইউপি সদস্য ও সমাজপতিদের নির্দেশ মত অগ্নিদগ্ধ তপতীকে নিজ বাড়িতে রেখে গ্রাম্য হাতুড়ে চিকিৎসক মিজানুর রহমানের মাধ্যমে তাকে চিকিৎসা নিতে বাধ্য করে।
ঘটনার ২দিন পর স্থানীয় একজন সাংবাদিক মর্মাšি—ক নির্যাতন ও অগ্নিদগ্ধ তপতির ছবি ক্যামেরা বন্দি করলে ইউপি সদস্য উক্ত সাংবাদিককে নিজ বাড়িতে ডেকে এনে ছবিটি ক্যামেরা থেকে ডিলেট করতে বাধ্য করে। এলাকার ¯^ঘোষিত রাজা নামে পরিচিত ইউপি সদস্য নিউটনের ভয়ে যেন কেউ মুখ খোলেনা। এক কান, দুই কান করতে করতে ওইদিন রাত ১০ টার দিকে সাতক্ষীরায় কর্মরত একজন গনমাধ্যম কর্মীর কাছে খবর আসে। তিনি বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরিকে অবহিত করেন। তারই নির্দেশে ওই রাতেই সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি আমান উল্যাহ, এসআই হাসেমসহ সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে গাংনিয়া গ্রামে তপতী মÊলের বাড়িতে পৌছায়। নির্মম নির্যাতন আর মর্মাšি—ক দৃশ্য দেখে পুলিশও হতবাক হয়ে পড়ে।
ওই রাতেই পুলিশের গাড়িতে অগ্নিদগ্ধ তপতীসহ তার পরিবারের সদস্যদের সাতক্ষীরায় এনে সদর হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেয়। এক পর্যায়ে তপতী মÊলের প্রাথমিক চিকিৎসা থেকে শুর“ করে পরদিন ঢাকায় প্রেরণ পর্যš— সম¯— খরজ সাতক্ষীরা সদর থানার পুলিশরাই বহন করে। এরই মধ্যে তপতীর মা বাদী হয়ে গ্রাম্য ডাক্তার, ইউপি সদস্যসহ সমাজপতিদের ৭ জনের নামে নারি ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পরপরই পুলিশ গ্রাম্য হাতুড়ে চিকিৎসক মিজানুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠায়। বর্তমানে এ মামলার অন্যান্য আসামীরা পলাতক রয়েছে। এদিকে ঢাকায় চিকিৎসাধীন তপতীর অবস্থার ক্রমাবনতি ঘটতে থাকে। সেখানকার বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনসহ এনজিওরা আর্থিক সহযোগিতা করলেও অবশেষে চিকিৎসার ১০ দিন পর এপৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে তপতী গতকাল শুক্রবার ভোরে চলে গেল পরপারে। শুক্রবার সকাল হতে না হতেই সাতক্ষীরায় খবর আসে তপতী মÊল আর নেই। এদিকে শুক্রবার বিকেলে ঢাকা থেকে সাতক্ষীরায় নিহত তপতী মÊলের লাশ এসে পৌছায়। সন্ধ্যায় নিজ বাড়িতে চলছিল তপতীর ফের সৎকারের কাজ। বর্তমানে প্রভাবশালি আসামীদের লোকজন তপতীর পরিবারকে নানাভাবে হুমকী দিচ্ছে অভিযোগ উঠেছে।
এব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (তদš—) এমামলার তদš—কারি কর্মকর্তা তরীকুল ইসলাম দুপুরেই তপতীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, চলমান মামলাটি তদš—কার্যের ধরণ পাল্টে যাবে এবং আসামীদের বির“দ্ধে কঠোর ভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরি জানান, ভোটের ডিউটিতে খুলনায় আছি। তপতী মÊল মারাগেছে শুনেছি। তাবে বাচানোর চেষ্টা করেও বাচানো গেলনা। তিনি বলেন, মামলার তদš—কাজ পরিবর্তন হবে। নারি নির্যাতন এ মামলাটি এখন হত্যা মামলা হিসেবে গন্য করে পুনরায় তদš—কাজ শুর“ হবে।
কাজী নাসির উদ্দীন,সাতক্ষীরা