কাজী নাসির উদ্দীন, সাতক্ষীরাঃসাতক্ষীরা সদর উপজেলার মিনি পাকিস্তান নামে খ্যাত বহুলালোচিত সেই আগরদাড়ি এলাকায় এবার নতুন থানা তৈরির প্রস্তুতি নিয়েছে বর্তমান সরকার। ইতোমধ্যে প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা প্রাথমিকভাবে জায়গা নির্ধারন করতে তদন্ত সম্পন্ন করেছেন। গত শুক্রবার সকালে অনেকটাই গোপনে এই তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে পশ্চিম সীমান্তের ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে একটি নতুন থানা নির্মানের পরিকল্পনা করা হয়েছে। যদিও পূর্ণাঙ্গভাবে এখনও থানার নাম নির্ধারন করা না হলেও আগরদাড়ি থানা নামে নাম করণ করা হতে পারে বলে সংশিষ্টরা মনে করেছেন।
প্রাপ্ত তথ্যে জানাগেছে, বিগত ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী মাও. দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষনার পর থেকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলাসহ পুরো জেলা জুড়ে অশান্তর বাতাস বইতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় এজেলায় এ পর্যন্ত শিশু ও মুক্তিযোদ্ধাসহ ১৭ জন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা কর্মীকে কুপিয়ে পিটিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। এসময়ে জেলার বিভিন্ন স্থানে অন্তত্ব দু’শতাধিক বসত বাড়ি দোকান পাটসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ ভাংচুর লুটপাট করে সাধারণ মানুষের মধ্যে ত্রাস সৃস্টি করে চরম আতঙ্ক আর হতাশায় নিমর্জিত করে। একই সঙ্গে হরতার আর অবরোধ পালনের নামে পাকা রাস্তা কাচা রাস্তা ও মহাসড়ক কেটে ফেলা হয়। শুধু তাই নয় কোন কোন স্থানে রাস্তার উপর বুক সমান মাটি ফেলে বেড়ি বাধ দিয়ে তার উপর কলাগাছ লাগি জেলার ২০ লাখ মানুষকে অবরুদ্ধ করা হয়। এসবের পাশাপাশি হরতাল অবরোধ পালনের নামে মহাসড়কের পাশে টিন সেডের ঘর তৈরি করে সেখানে বসে রান্না খাওয়া দাওয়া করে প্রকাশে অবরোধ পালন করলেও জেলার আইনশৃক্সখলা বাহিনী ছিল অসহায়। অভিযোগ রয়েছে, এসমস্ত রাস্ট্রোবিরোধী কার্যকলাপের মুল কেন্দ্রবিন্দ ছিল আগরদাড়ি মাদ্রাসা। সেখানে বসেই সকল পরিকল্পনা করে তা জেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দেয়া হত। এমনকি পুলিশের ধড়পাকড়ের মধ্যেও উগ্র মৌলবাদ জঙ্গীগোষ্টি সংশিষ্ট স্থান বা তার আসে পাশে নিরাপদেই অবস্থান করতো। সূত্রমতে, আইনশৃক্সখলা বাহিনী যতবারই শান্তি ফিরিয়ে আনার লক্ষে ওই এলাকায় অভিযানে গেছে ততবারই অবর“দ্ধ হয়ে পড়ে। সর্বশেষ খুলনা রেঞ্জের বর্তমান ডিআইজিও অভিযান করতে যেয়ে রক্ষা পাননি। এসমস্ত বিষয় মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার হওয়ার পর বাংলাদেশসহ বিশ্ববাসীর কাছে “আগরদাড়ি” গ্রাম ব্যাপক ভাবে আলোচিত হয়ে উঠে। এক পর্যায়ে তা মিনি পাকিস্হান নাম করণ করে ফেলেন ভুক্তভোগি সাধারণ মানুষ।
বিগত দশম সংসদ নির্বাচনের পূর্ব মুহুর্তের দুই মাস সাতক্ষীরা সদর উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের সাথে যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়ে। এরপর নির্বাচন শেষে গত ২০ জানুয়ারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেলা পর্যায়ের প্রথম সফর সাতক্ষীরা দিয়েই শুরু করেন। তিনি সাতক্ষীরা সফরে আসার পর জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কয়েকটি দাবি সম্বলিত একটি স্মারক লিপি দেয়া হয়। দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম দাবী ছিল সদর উপজেলার আগরদাড়ি এলাকায় একটি পৃথক থানা নির্মান। প্রধানমন্ত্রী সেই দাবিনামা হাতে পেয়ে আশ্বাস প্রদান করেন। এরপর গত শুক্রবার সকালে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আছাদুজ্জামান এবং সদর থানার ওসি এনামুল হক বিশ্বাসসহ সঙ্গীয় ফোর্স আগরদাড়ি এলাকায় থানার জায়গা নির্ধারণের জন্য অনেকটাই গোপনে যান। বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, বৈকারি সতাক্ষীরা সড়কের আগরদাড়ি ইউনিয়নের আবাদের হাটের পাশে ওই এলাকার গোপাল চন্দ্র ঘোষালের রাস্তা সংলগ্ন এক একর জমি পছন্দ করা হয়েছে। উক্ত স্থানেই সদরের ১৪টি ইউনিয়নের পশ্চিম সীমান্তের ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে নতুন থানা তৈরির পরিকল্পনায় ইতোমধ্যে কাজ শুরু করা হয়েছে।
এব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজর“ল ইসলাম জানান, সীমান্তের সকল শ্রেণীর মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আগরদাড়ি এলাকায় একটি নতুন থানা নির্মানের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়। সেমোতাবেক প্রশাসনের পক্ষ থেকে কাজ শুরু হয়েছে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আছাদুজ্জামান জানান, তদন্তে গিয়েছিলাম জমিও দেখে এসেছি। এক একর পরিমান জমি পছন্দ করা হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও অবহিত করা হয়। সদর ওসি এনামুল হক বিশ্বাস জানান, থানা নির্মানের জন্য ব্যক্তিমালিকানার জমির চেয়ে খাস জমি খোজা হচ্ছে। সেটি হলে ভাল হবে। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহিদুজ্জামান জানান, জেলাবাসীর নিরাপত্তা দিতে প্রাথমিক ভাবে একটি থানা ও একটি ক্যাম্প স্থাপন করার পরিকল্পনা চলছে। তিনি আগরদাড়ি এলাকায় থানা হলে ভোমরা এলাকায় পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হবে এবং দুটি একই সঙ্গে তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে।