বাজার মূল্যের চেয়ে সরকারি মূল্য কম হওয়ায় আগ্রহ হারিয়েছে মিল মালিকরা
কাজী নাসির উদ্দীন ,সাতক্ষীরা প্রতিনিধিঃ জেলায় সরকারি ভাবে ধান চাউল সংগ্রহ অভিযান শুর“ হলেও গত সাড়ে তিন মাসে শুধুমাত্র চাউল সংগ্রহ হয়েছে ৫ হাজার ৫৬ টন। ধান সংগ্রহ হয়নি এক ছটাকও। গত ৫ মে থেকে শুর“ হওয়া এ অভিযান চলবে সেপ্টেম্বর মাস পর্যš—। বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী সরকার ঘোষিত ধান ও চাউলের দাম কেজি প্রতি ২-৩ টাকা কম হওয়ায় মিল মালিকরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। জেলায় এবার ২৯ টাকা দরে চাউল ও ১৮ টাকা দরে কেজি প্রতি ধান ক্রয় করা হচ্ছে। জেলায় ৯ হাজার ৭১ মেট্রিক টন চাউল ও ২২৭৯ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষমাত্রা নিয়ে এঅভিযান শুর“ হলেও তা আশানুর“প ফল পাওয়া যাচ্ছে না। ফেয়ার এভারেজ কোয়ালিটি (এফ এ কিউ) পদ্ধতিতে ধান ও চাউলের গুনগত মান পরীক্ষা করে এ অভিযান শুর“ হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা শৈলেন চন্দ্র রায় জানান, জেলায় ছোট বড় মিলিয়ে ৩৫০ টি রাইচ মিল রয়েছে এর মধ্যে ২৩৮ টি রাইচ মিল জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসের সাথে চুক্তিবদ্ধ রয়েছে। সাতক্ষীরা জেলায় এবার ৯ হাজার ৭১ মেট্রিক টন চাউল ও ২২৭৯ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ অভিযান চলছে। সাতটি উপজেলা থেকে রাইচ মিল মালিকদের কাছ থেকে ধান ও চাউল সংগ্রহ করা হবে। দাম নির্ধারন করা হয়েছে ধান কেজি প্রতি ১৮ টাকা ও চাউল কেজি প্রতি ২৯ টাকা। সদর উপজেলা থেকে ৭৮৯ মেট্রিক টন ধান ও ৪৪৭৪ মেট্রিক টন চাউল সংগ্রহ করা হবে। সদর উপজেল থেকে শুধুমাত্র চাউল সংগ্রহ হয়েছে ২৩৬৪ মেট্রিক টন। কলারোয়া উপজেলা থেকে ৩৮২ মেট্রিক টন ধান ও ৬৩২ মেট্রিক টন চাউল সংগ্রহের কথা থারলেও শুধুমাত্র চাউল সংগ্রহ হয়েছে ৪৪ টন। দেবহাটা উপজেল থেকে ২০০ টন ধান ও ৫৮৪ মেট্রিক টন চাউল সংগ্রহের কথা থাকলেও চাউল সংগ্রহ হয়েছে ৩৬৩ টন।, কালিগঞ্জ উপজেলা থেকে ১৬৭ মেট্রিক টন ধান ও ৬৫১ মেট্রিক টন চাউল সংগ্রহের সাতক্ষীরা নিয়ে চাউল সংগ্রহ হয়েছে ৩৪৫ টন।, শ্যামনগরে ৪৬ মেট্রিক টন ধান ও ৬৭ মেট্রিক টন চাউল সংগ্রহের সাতক্ষীরা থকলেও শুধুমাত্র চাউল সংগ্রহ হয়েছে ৪০ টন।, আশাশুনি থেকে ১৯৯ মেট্রিক টন ধান ও ৯৩ মেট্রিক টন চাউল সংগ্রহের শুধুমাত্র চাউল সংগ্রহ হয়েছে ৮১ টন। তালা উপজেলা থেকে ৫০৬ মেট্রিক টন ধান ও ২৫৭০ মেট্রিক টন চাউল সংগ্রহ করার কথা থকলেও এ পর্যন্ত চাউল সংগ্রহ হয়েছে ৩৪৫ টন। এখনও পর্যন্ত কোন উপজেলা থেকে এক ছটাক ধান সংগ্রহ হয়নি।
তিনি আরও বলেন, জেলায় ফেয়ার এভারেজ কোয়ালিটি পদ্ধতিতে অনুসরণ করে ধান চাল সংগ্রহ অভিযান শুর“ হয়েছে। ধান চাউলের তুলনায় এবার ১৪% কম থাকতে হবে। চিটা কম থাকতে হবে এবং চাউলে কালো ধরনের চাউল কম থাকতে হবে। বাজার দর অনুযায়ী ধান ও চাউলের দাম কম দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন সেক্ষেত্রে কোন প্রভাব পড়বে না। যেসব মিল মালিকরা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন বা ব্যাংক ড্রাফট জমা দিয়েছেন তাদের কে চুক্তি অনুযায়ী ধান ও চাউল দিতে হবে। যে সব মিল মালিকরা চুক্তি অনুযায়ী ধান ও চাউল দিতে ব্যার্থ হবে তাদেরকে সর্বোচ্চ এক বছরের জন্য রাইস মিলের লাইসেন্স স্থগিত করা হবে এবং তাদের জমাকৃত ব্যাংক ড্রাফট বাজেয়াপ্ত করা হবে। তবে তিনি সরকার ঘেষিত ধান ও চাউলের দাম নির্ধারণ ও বর্তমান বাজার দর বৃদ্ধির কারণে এ অভিযান কিছুটা বিড়ম্বনার স্বীকার হতে হচ্ছে বলে স্বীকার করেন। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এ অভিযান সফল ভাবে সম্পন্ন হবে বলে মনে করেন।
জেলা রাইচ মিল মালিক সমিতের সহ সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল খালেক জানান, সরকার ঘোষিত ধান ও চাউলের যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে তা বাস্তবায়ন করা অসম্ভব হয়ে দড়িয়েছে। কারণ জেলার মিল মালিকদের অধিক দামে ধান ক্রয় করতে হচ্ছে। তাছাড়া বাহিরের জেলা থেকে পাইকাররা এসে অধিক ধামে ধান ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছে। প্রত্যেকদিন জেলার বহিরে থেকে আশা পাইকাররা ৫০ ট্রাক ধান কিনে নিয়ে যাচ্ছে। জেলায় তার কোন নিয়ন্ত্রন নেই। যদি নিয়ন্ত্রন থাকত তাহলে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস কর্তৃক জেলা মিল মালিকদের উপর চাপিয়ে দেওয়া ধান চাউল সংগ্রহ অভিযান সফল হতো। তিনি আরও বলেন সবে বোরো মৌসুমের ধান উঠলেও প্রত্যেকদিন ধানের ধাম লাফিয়ে লাফিয়ে উঠছে। বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী প্রতিটি ধানের বস্তায় ২০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এভাবে যদি ধানের ধাম বৃদ্ধি পায় তাহলে জেলায় ধান চাউল সংগ্রহ অভিযান ভেস্তে যাবে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস কর্তৃক রাইচ মিল মালিকদের উপর চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধাš— বাস্তবায়ন করা অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছে। আবার যদি মিল মালিকরা ধান ও চাউল দিতে ব্যর্থ হয় তাহলে তাদের লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়া হয়। আবার চাউল জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসে নিয়ে গেলে তখন তাদের উপর আরেক বার খড়গ চাপিয়ে দিয়ে বলা হয়, চাউল ভাল না। অধিকাংশ চাউল ভাঙ্গা। এরপর অফিসের কর্মকর্তাদের আর্থিক সুবিধা দিলে তখন সব কিছু ঠিক হয়ে যায়। তিনি আরও বলেন গত আমন মৌসুমে সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হওয়ায় খাদ্য নিয়ন্ত্রন অফিস অনেক মিল মালিকদের লাইসেন্স বতিল করে দিয়েছে। এভাবে যদি রাইচ মিল মালিদের কাছ থেকে জোর করে চাউল সংগ্রহ করা হয় তাহলে জেলার মিল মালিকরা আর্থিক ভাবেক্ষতিগ্রস্ত হবে।