জি নিউজ বিডি ডট নেট ঃ- বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের অবরোধ ও জামায়াতে ইসলামীর হরতাল চলাকালে ঢাকা ও রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। টানা অবরোধের কারণে রাজধানীর সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। রাজশাহীতে ব্যাপক সংঘর্ষ, ওসি আহত
রাজধানীতে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে পুলিশের সঙ্গে শিবিরকর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে মতিহার থানার ওসি আব্দুল মজিদসহ দুই পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। এ সময় পুলিশের গুলিতে রাবি শাখা শিবিরের ক্রীড়া সম্পাদক আফজাল হোসেনকে গুরুতর আহত অবস্থায় মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আজ সকাল ৮টার দিকে জামায়াতের ডাকা সারাদেশে হরতালের সমর্থনে বিনোদপুর বাজারে ছাত্রশিবিরের সাংগঠনিক সম্পাদক শোয়েব শাহরিয়ারের নেতৃত্বে একটি মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি নিয়ে তারা ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে উঠতে চাইলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় পুলিশ টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও শর্টগানের গুলি ছোঁড়ে। শিবিরও পুলিশকে লক্ষ্য করে পাল্টা ককটেল ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। শিবিরের ইটের আঘাতে মতিহার থানার ওসির মুখের বাম পার্শ্বে জখম ও তার সাথে থাকা পুলিশ কনস্টেবল রেজাউল করিমের মাথায় গুরুতর আহতসহ পুলিশের অন্তত ৫ সদস্য আহত হয়। পুলিশের ছোঁড়া গুলিতে শিবিরের ৮ নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ২৫ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পুলিশের গুলিতে রাবি শাখা শিবিরের ক্রীড়া সম্পাদক আফজাল হোসেনকে গুরুতর আহত অবস্থায় মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদের নগরীর বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। মহানগরীর মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি আব্দুল মজিদ জানান, শিবিরকর্মীরা মহাসড়ক অবরোধ করার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছোড়ে। তারাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল এবং ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে আমাদের কয়েকজন পুলিশ ও তাদের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়। তবে এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। ছাত্রশিবির রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রচার সম্পাদক জিয়াউদ্দিন বাবলু অভিযোগ করেন, বিনা উস্কানিতে পুলিশ ছাত্রশিবিরকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। পুলিশের হামলায় ৩০ শিবিরকর্মী আহত হয়েছেন। পুলিশের মারমুখি আচরণের তীব্র নিন্দা জানান তিনি। রাজধানীতে মিছিল, অবরোধ, গুলি-ককটেল
১৮ দলীয় জোটের চতুর্থ দিনের মতো অবরোধ ও কেন্দ্রীয় নেতা কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা জারির প্রতিবাদে ডাকা হরতালের সমর্থনে রাজধানীর মগবাজার ওয়ারলেস এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও রাস্তা অবরোধ করেছে জামায়াত। এ সময় পুলিশের সাথে জামায়াত কর্মীদের ধস্তাধস্তি হয়।
জামায়াতের রমনা থানার উদ্যোগে সকাল ৯টার দিকে একটি মিছিল বের করে রাস্তা অবরোধ করে। এতে নেতৃত্ব দেন দলের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ড. রেজাউল করিম। এসময় এক পথচারীকে আটক করে পুলিশ। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডে সকালে একটি মিছিল বের করে শিবির কর্মীরা। এ সময় রাস্তায় আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। এ সময় পুলিশ ৪ রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সকাল সাড়ে সাতটার দিকে খিলগাঁওয়ের সিপাহিবাগে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা মিছিল বের করেন। এ সময় তারা ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একজনকে আটক করে পুলিশ। কাল সাড়ে সাতটার আজিমপুর বাসস্ট্যান্ডের কাছে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা মিছিল বের করেন। তারা ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। নাশকতা ঠেকাতে রাজধানীজুড়ে সতর্ক অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সকাল থেকেই রাজধানীতে রিকশা, অটোরিকশাসহ হালকা যান চলাচল করলেও যাত্রীবাহী বাসের সংখ্যা ছিল খুবই কম। তিন প্রধান বাস টার্মিনাল গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখালী থেকে দূরপাল্লার কোন বাস ছেড়ে যায়নি। তবে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ও সদরঘাটের লঞ্চ টার্মিনাল থেকে অল্প কিছু ট্রেন ও লঞ্চ ছেড়ে গেছে। রাজধানীর বাইরে অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচির খবর:
গাজীপুর: গাজীপুর মহানগরের শিমুলতলী-জয়দেবপুর সড়কের বিলাসপুর এলাকায় শহর শাখা জামায়াতের উদ্যোগে একটি ঝটিকা মিছিল বের হয়। মিছিলটি সড়ক অবরোধ করে রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এ সময় পুলিশ এগিয়ে এলে জামায়াতের নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে পালিয়ে যায়। মেহেরপুর: অবরোধ ও হরতাল চলাকালে মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে জেলার বিভিন্ন সড়কের ৫টি স্থানে অবরোধ করেন জোটের নেতাকর্মীরা। মেহেরপুর-মুজিবনগর সড়কের বন্দর পিটিআই মোড়ে জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ফারুক হোসেনের নেতৃত্বে অবরোধ করেন জোটের নেতাকর্মীরা। এ সময় কয়েক দফা মিছিল বের করা হয়। সিরাজগঞ্জ: জেলার সদর উপজেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল চলছে। জেলার সদর উপজেলার বহুলী বাজার এলাকায় রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধ এবং জামায়াতের হরতাল চলাকালে সংঘর্ঘে পুলিশের গুলিতে শিশু সমুন নিহত, পুলিশের নির্যাতনের প্রতিবাদে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট এবং আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যু পরোয়ানার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় জামায়াত এই হরতালের ডাক দেয়। সকালে অবরোধ ও হরতাল চলাকালে সিরাজগঞ্জ-রায়গঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের রহমতগঞ্জ এলাকায় হরতালের সমর্থনে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা মিছিল এবং রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে পিকেটিং করেন। টাঙ্গাইল: শান্তিপূর্ণ অবরোধের সময় স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ ও সরকার দলীয়দের হামলার প্রতিবাদে জেলার টাঙ্গাইলের সখীপুর ও ঘাটাইল উপজেলায় অর্ধদিবস হরতাল চলছে। সকাল থেকে হরতাল সমর্থকরা উপজেলা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে অবস্থান নিয়ে ৮/১০টি সিএসজি, অটোরিকশা ভাংচুর করে। পরে পুলিশ ধাওয়া করলে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের কাশীপুরে যুবদলের নেতাকর্মীরা রাস্তা অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এসময় যুবদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বেধে যায়। এসময় পুলিশ গুলি ছড়লে চারজন গুলিবিদ্ধসহ ১০ জন আহত হয়। এখান থেকে চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। এদিকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রোডে মাসাইদে একটি ট্রাকে আগুন দিয়েছে অবরোধকারীরা। লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নুরুল হক এবং একই ওয়ার্ডের যুবদল সভাপতি আবদুল খালেকসহ বাকি আহতদের স্থানীয় ক্লিনিক ও লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের মেঘনা বাজারে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা অবরোধের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল বের করলে আওয়ামী লীগ তাদের বাধা দেয়। এ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে প্রথমে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের ১০ জন আহত হয়। মুন্সিগঞ্জ: মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় সকালে গাছের গুড়ি ফেলে রাস্তা অবরোধ করে অবরোধকারীরা। এসময় পুলিশ বাধা দিলে অবরোধকারীরা পাঁচটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। নির্দলীয় সরকারের দাবিতে এবং বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতার, আটক ও হয়রানি, মিথ্যা মামলা ও একতরফা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে শনিবার সকাল ৬টা থেকে সারাদেশে তৃতীয় দফায় ৭২ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়। তবে সোমবার দুপুরে আরো ৭২ ঘণ্টা অবরোধ কর্মসূচি বাড়ানো হয়। মোট ১৪৪ ঘণ্টার এই অবরোধ কর্মসূচি চলবে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত। অবরোধ কর্মসূচির পাশাপাশি জামায়াতের ডাকে দেশব্যাপী দ্বিতীয় দিনের মতো সকাল-সন্ধ্যা হরতাল চলছে। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার মৃত্যু পরোয়ানা জারির প্রতিবাদে এই হরতালের ডাক দেয় দলটি। খবর রেডিও তেহরান এর তাঃ-১০ ডিসেম্বর২০১৩ #