জি নিউজ ডেস্কঃ সরকার ১৩ দফা দাবি মানতে ব্যর্থ হলে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম।
সোমবার বিকেলে ৪টায় লালবাগ মাদ্রাসা সংলগ্ন হেফাজতের অস্থায়ী কার্যালয়ে হরতাল পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন সংগঠনের ঢাকা মহানগর আমির মাওলানা নূর হোসেন কাসেমী।
হরতাল শান্তিপূর্ণ হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমরা কথা দিয়েছি হরতাল শান্তিপূর্ণ করব, সে কথা রেখেছি। কিন্তু সারা দেশে নিরীহ কর্মীদের ওপর ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ কর্মীরা বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছে। এতে চট্টগ্রাম একজন নিহত ও সারাদেশে তিন শতাধিক কর্মী আহত হয়েছে। আটক করা হয়েছে অনেককে।’
সরকার নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সরকারের দায়িত্ব ছিল সারা দেশে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা । কিন্তু সরকার সে দায়িত্ব পালনে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। উল্টো সরকারদলীয় ক্যাডাররাই নিরীহ মুসলমানদের ওপর গুলি বর্ষণ করে তাণ্ডব চালিয়েছে। একই সঙ্গে আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। যা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।’
তিনি জানান, এ হামলা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে আগামী শুক্রবার সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করা হবে। জুমার নামাজের পর মসজিদে মসজিদে দোয়া অনুষ্ঠিত হবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উল আলম হানিফের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মধ্যযুগে ফিরে যাওয়া মানে কি? এ সমাজে মা-বোনদের ইজ্জত সংরক্ষিত নয়। শরিয়তের বিধান না মানার কারণে তাদের ইজ্জত সংরক্ষিত হচ্ছে না। অথচ, আমরা ইসলামের কথা বললে সেটাকে তিনি বলছেন, মধ্যযুগে ফিরে যাওয়া। এর চেয়ে ঘৃণ্য কথা আর হতে পারে না।’
নাস্তিকদের শাস্তি ইসলামি আইনে দিতে হবে বলেও দাবি জানান হেফাজতের এ নেতা।
সংবাদ সম্মেলনে সারাদেশে আহত ও নিহত হেফাজত কর্মীদের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ। তিনি বলেন,’এ আন্দোলন সরকারের বিরুদ্ধে নয়। অথচ সরকারদলীয় ক্যাডাররা বর্বরোচিত গুলিবর্ষণ করে সারাদেশে ৩ শতাধিক নেতাকর্মীকে আহত ও চট্টগ্রামে একজনকে শহীদ করেছে। ইসলামের ওপর আঘাত করে কেউ টিকে থাকতে পারেনি। বাধা যত দেয়া হবে, আন্দোলন ততোবেশি বেগবান হবে।’
তার দেয়া তথ্যমতে, চট্টগ্রামে একজন নিহত ও অর্ধশত আহত হয়েছে। ময়মনসিংহে ৫০ জন আহত হয়েছে। একইসঙ্গে গাজীপুরে ১৭ জন আহত, ৭ জন গ্রেপ্তার, ফরিদপুরে ১৬ জনকে গ্রেপ্তার, হবিগঞ্জে ৫ জন আহতসহ নেত্রকোণা, কুষ্টিয়া, রাঙ্গুনিয়ায় হেফাজতের ওপর হামলা চালানো হয়েছে।’
তিনি এ হামলার সুষ্ঠু বিচার ও তদন্ত দাবি করেন।
রংপুর : কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। বেলা পৌনে বারটার দিকে রংপুর মহানগরীর সিটি বাজার এলাকা থেকে হেফাজদে ইসলাম রংপুর কমিটির আহবায়ক মাওলানা ইউসুফের নেতৃত্বে নেতা কর্মীরা বের হয়ে নগরীর প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পায়রা চত্বরে এসে শেষ করে। সেখানেই বসে তারা জোরে জোরে জিকির করতে থাকে। পরে দোয়ার মধ্য দিয়ে শেষ হয় পিকেটিং।
পঞ্চগড় : পঞ্চগড়ে নিরুত্তাপ এই হরতালে ছিল না কোন পিকেটিং। বড় ধরনের যানবাহন ছাড়া শহরে দাপিয়ে বেড়িয়েছে ছোট যানবাহনগুলো। সকল দোকানপাট খোলা ছিল। অফিস আদালত চলেছে স্বাভাবিকভাবে। ডিউটিরত পুলিশ সদস্যদের অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে।
নীলফামারী : কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই নীলফামারীতে পালিত হয়েছে হেফাজতে ইসলামের ডাকা সকাল-সন্ধা হরতাল। হরতালে ভারী যানবাহন চলাচল না করলেও ছোট ছোট যানবহন চলাচল ছিল স্বাভাবিক। বন্ধ ছিলো শহরের অধিকাংশ দোকানপাটসহ অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তবে খোলা ছিল অফিস-আদালত, ব্যাংক বীমাসহ। এদিকে হরতালে হেফাজতে ইসলামের কোন নেতাকর্মীকে শহরাঞ্চলে দেখা না গেলেও তাঁরা অবস্থান নিয়েছে গ্রামাঞ্চলে।
দিনাজপুর : সকাল সন্ধ্যা হরতাল দিনাজপুরে শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়। সকাল থেকেই হেফাজতের নেতা মাওলানা হাবিবুর রহমান পুলহাট, হাফিজ রবিউল ইসলাম লিলির মোড়, মাওলানা মাহাবুব বটতলা, মাওলানা ওয়াজেদ পিডিপি, মাওলানা বাবর আলী কলেজ মোড়, মাওলানা ইকবাল উদ্দীন চৌরঙ্গী মোড়, হাফেজ নূরুল হুদা হাসপাতাল মোড়, মাওলানা আব্দুল কাইউময়ের নেতৃত্বে ফুলবাড়ী বাসষ্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন প্রবেশ মুখে অবস্থান নেয়।
নাটোর : হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা সকালে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে শহরের কানাইখালী কেন্দ্রিয় জামে মসজিদের সামনে সড়কের ওপর অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করে। এসময় বক্তব্য রাখেন হেফাজতে ইসলামের সভাপতি মওলানা ইলিয়াস হোসেন, সাধারন সম্পাদক মওলানা রফিকুল ইসলাম ও ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন নাটোর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আমেল খান চোধূরী প্রমুখ।
ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহে হেফাজতে ইসলাম’র সাথে ১৪ দল ও পুলিশের সংঘর্ষে পুলিশ-সাংবাদিক ও ওলামা দলের নেতাসহ অর্ধশত আহত হয়েছে। প্রায় ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে ৭টি মোটরসাইকেলসহ গাঙিনারপাড় এলাকার কয়েকশ দোকানপাট ভাঙচুর করেছে হরতাল সমর্থকরা। এদিকে ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগসহ ১৪ দল নেতাকর্মীরা লাঠিসোটাসহ একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নতুন বাজার জেলা বিএনপির অফিসসহ খন্দকার হোটেলে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগি্নসংযোগ করে। খবর পেয়ে দমকল বাহিনীর কর্মীরা এসে আগুন নেভায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শহরের বিভিন্ন স্থানে বিজিবি, র্যাবসহ ১৫ পাটুন পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সোমবার ময়মনসিংহে হরতাল চলাকালে সকাল ১১টার দিকে হেফাজতের একটি বিক্ষোভ মিছিল শহরের প্রাণকেন্দ্র গাঙিনারপাড় মোড়ে পেঁৗছলে অপরদিক থেকে আসা আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এসময় হামলাকারীরা পুলিশের সামনেই গাঙ্গিনারপাড় এলাকায় বেশকিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায় ও ভাঙচুর করে। পরে জেলা আওয়ামী লীগ অফিসেও হামলা চালাতে চেষ্টা করে। দলীয় কর্মীরা এসময় প্রতিরোধ করলেও হেফাজত সমর্থকরা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে ৭টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। পরে পুলিশ লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করলে হেফাজতের কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এসময় জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যক্ষ মতিউর রহমান এমপি শিববাড়ীস্থ দলীয় অফিসে ছিলেন। ভাঙচুর, হামলা ও পাল্টা হামলা চলাকালে উভয়পক্ষের অর্ধশতাধিক নেতা কর্মী আহত হয়। ইটের আঘাতে গাজী টিভি’র প্রতিনিধি কাজী মোহাম্মদ মুন্না, ওসি তদন্ত মাজেদুর রহমান এসআই মোর্শেদসহ ২৫ জনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়্। তার মধ্যে ৭ জন গুলিবিদ্ধ রয়েছেন। গুলিবিদ্ধরা হচ্ছেন জেলা ওলামা দলের যুগ্ম-সম্পাদক মাওলানা মফিজুল ইসলাম (৫৫), আবু ইউসুফ (১৮), ফুলপুরের আবু সালমান (২৮) রফিকুল ইসলাম (৩০) শফিউলাহ (৩২) সেলিম আহম্মেদ (৩৮) ও অজ্ঞাত (৩০)। এদিকে হেফজাতে ইসলাম নেতা মাওলানা খালেদ সাইফুলাহ সাদী (৫৫) আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন। এঘটনার পর হরতাল বিরোধীরা নতুন বাজার বিএনপি অফিসসহ জামায়াত শিবিরের কয়েকটি দোকান পাট ভাঙচুর এবং অগি্নসংযোগ করে। অগি্নসংযোগের ফলে অফিসের আসবাব পত্র ও মুল্যবান কাগজপত্র পুড়ে যায়। পরে ওল্ড পুলিশ ক্লাব রোড হোটেল খন্দকারে হামলা ও ভাঙচুর এবং অগি্নসংযোগ করে। শহরের গাঙিনারপাড় মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে বিপুল সংখ্যক পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব মোতায়েন করা হয়। এছাড়াও এরিপোর্ট লেখা পযর্ন্ত কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। সড়ক পথে কোন যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়নি। ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক ছিল। এদিকে গতকাল দুপুরে স্থানীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যক্ষ মতিউর রহমান হেফাজতে ইসলামের নামে জামায়াত-শিবির আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলা করতে গেলে ১৪ দলের নেতাকর্মী ও জনতা প্রতিরোধ করে। এসময় হেফাজত কর্মী ও ১৪ লের কর্মীদের মাঝে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। হেফাজত কর্মী গাঙ্গিনারপাড় মোড়, শিববাড়ি রোড়ে বিভিন্ন দোকানপাট ব্যাপক ভাঙচুর করে। এতে হেফাজতের আক্রমনে ছাত্রলীগের ৪ নেতাকর্মী আহত হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেছে হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা। এতে গতকাল সকাল থেকে ঢাকার সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের রেল যোগাযোগ কয়েক ঘন্টা বন্ধ ছিল। হরতালের সমর্থনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে কয়েকটি গাড়িও ভাঙচুর করে। তারাভাঙচুরের অভিযোগে দুই হেফাজত কর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানান সোনারগাঁও থানার ওসি আতিকুর রহমান। পুলিশ জানায়, সোমবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে হেফাজতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা শহরের চাষাঢ়া এলাকায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেললাইনে অবস্থান নেয়। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের সরিয়ে দেয়। এদিকে, সকাল ৬টার দিকে শহরের ডিআইটি বাণিজ্যিক এলাকায় জড়ো হয়ে লাঠিসোটা নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করে হেফাজত কর্মীরা। পরে শহরের চাষাঢ়া বিজয় স্তম্ভের সামনে জড়ো হয়ে সড়কে বসে সমাবেশ করছে তারা। অন্যদিকে, সকাল ৮টার দিকে হেফাজতের একদল কর্মী সোনারগাঁওয়ের কাঁচপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে। এসময় তারা যান চলাচলে বাধা দেয় এবং বেশ কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করে। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সকাল ১০টার দিকে মহাসড়ক থেকে সরে যায় হরতাল সমর্থকরা।
কুমিল্লা : নগরীর শাসনগাছা এলাকায় হরতালের সমর্থনে হেফাজতে ইসলামের মিছিলে বাধা দেয়াকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের সাথে সংঘর্ষে হেফাজতে ইসলামের ১২ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এছাড়া হরতালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ড ও জিংলাতলীতে গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। এ সময় পুলিশের সাথে পিকেটারদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামসহ কন্দ্রীয় নেতাদের মুক্তির দাবিতে কুমিল্লা মহানগরীতে অনির্দিষ্টকালের হরতাল চলাকালে জেলা (দক্ষিণ) বিএনপির ৩২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৫০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় নগরীর শাসনগাছা বাস টার্মিনাল এলাকায় হরতালের সমর্থনে হেফাজতে ইসলামের মিছিলে বাধা দেয়াকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংঘর্ষে হেফাজতে ইসলামের মওলানা মাহদী হাসান, আবাদ মিয়া, মৌলভী আবদুর বারী, আব্দুল আজিজ, তাজুল ইসলাম, হাফেজ রাশেদ, হাফেজ ইউসুফসহ প্রায় ১২ হেফাজত নেতাকর্মী আহত হয়। আহতদের স্থানীয় ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এসময় চারটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভোর থেকেই জেলার বিভিন্ন স্থানে হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা খন্ড খন্ড মিছিল ও পিকেটিং করেছে। শহরের অভ্যন্তরীণ সড়কে বন্ধ ছিল রিকশাসহ সবধরনের যান চলাচল। দোকানপাট, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ, ব্যাংক বীমাসহ সবকিছু বন্ধ ছিল। ভাদুঘর বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোন যান ছেড়ে যায়নি বা আসেনি। সকাল প্রায় ৯টায় ঢাকা-সিলেট ও চট্টগ্রাম-সিলেট রেলপথে ব্রাহ্মণবড়িয়া রেল স্টেশন এলাকায় হরতালকারীরা অবরোধ করে রাখে। রেললাইনে পাথরের বকসহ কাঠের গুড়ি ফেলে ট্রেন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এসময় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ময়মনসিংহগামী নাসিরাবাদ মেইল ট্রেন, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনে আটকা পড়ে। পরে প্রায় ১১টায় পুলিশ সুপার মোঃ মনিরুজ্জামান পিপিএম ঘটনাস্থলে পৌছে হরতালকারীদের অনুরোধ করলে নাসিরাবাদ ট্রেনটি ষ্টেশন ত্যাগ করলেও অপরটি আটকা পড়ে থাকে। প্রায় ৫ ঘন্টা পর পারাবত ট্রেনটি রেল স্টেশন ত্যাগ করে। শহর ও আশপাশ এলাকার ৩০টি পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছে। এদিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বিশ্বরোড এলাকায় হরতালকারীরা মহাসড়ক এলাকায় অবস্থান করে শোগান দিচ্ছে। অন্যদিকে আখাউড়ায় সিলেটগামী কুশিয়ারা ও ভৈরবগামী বাল্লা ট্রেনে বাইপাস এলাকায় ঢিল ছুড়ে হরতাল সমর্থকরা। এসময় ৫ যাত্রী আহত হয়। হরতালকারীদের ট্রেনের ইঞ্জিন’র গাস, ভিআইপি কক্ষের জানালা, টেবিল ভাংচুর করে। হরতালকারীরা সকালে আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশনের অদুরে রেললাইনের উপর টায়ারে আগুন দেয়। তাছাড়া ঢাকাগামী সূবর্ণ এক্সপ্রেস, উপকুল এক্সপ্রেস ও ভৈরবগামী বাল্লা লোকাল ট্রেন আখাউড়া স্টেশনে আটকা পড়ে। এছাড়া কসবায় উপকূল এক্সপ্রেস আটকা পড়ে। হরতাল চলাকালীন সময়ে আখাউড়া স্থলবন্দরে পণ্যবাহী কোন ট্রাক প্রবেশ করেনি।
কালিয়াকৈর (গাজীপুর) : হফাজতে ইসলামের ডাকা হরতালে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মৌচাক ও কোনাবাড়ী এলাকায় সকাল থেকে রাস্তা অবরোধ করে রাখে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা। এসময় তাদের সাথে থাকা জায়নামাজ রাস্তার উপর বিছিয়ে তারা বসে পড়ে। এসময় তারা সংগঠন ঘোষিত ১৩ দফা দাবি আদায়েরর সমর্থনে বিভিন্ন শ্লোগান দেয়।
হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ থেকে ‘নারী প্রগতিবিরোধী’ দাবি তোলা হলেও তাদের হরতাল প্রত্যাখ্যান করে স্বাভাবিকভাবেই কর্মক্ষেত্রে ছুটেছেন নারীরা। গতকাল সকাল থেকেই রাজধানীর সড়কগুলোতে দেখা যায় অফিসগামী নারীর বিচরণ। দলবেঁধে কারখানায় ছুটতে দেখা যায় পোশাক কর্মীদের। বসে থাকেননি অন্য পেশায় নিয়োজিত নারীরাও। সংবাদকর্মী, চিকিৎসক, শিক্ষকসহ সব পেশার নারীরাই ছুটেছেন কর্মস্থলের দিকে। ছেলে-মেয়েকে নিয়ে স্কুলে গেছেন গৃহবধূরাও। মিরপুরে অফিসগামী এক নারী সাংবাদি জানান, ‘হেফাজতে ইসলামের ‘বর্বরোচিত’ মনোভাবের প্রকাশ ঘটেছে তাদের দাবিগুলোর মধ্যে। নারীর বিচরণে বাধা দেয়ার যে দাবি তারা তুলেছে তা সম্পূর্ণ অনৈতিক।
৫ ঘণ্টা ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক অবরোধ : সকাল-সন্ধ্যা হরতাল সফল করতে পাঁচ ঘণ্টা ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ, সমাবেশ ও পিকেটিং করেছে হেফাজত ইসলামের নেতাকর্মীরা। গতকাল সোমবার সকাল ১০টা থেকে মহাসড়ক অবরোধ করে অবস্থান নেয় তারা। বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত সড়কে অবস্থান নিয়ে থাকে তারা। এতে দক্ষিণ অঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় হরতাল সফল করতে মুন্সীগঞ্জের মধুপুর মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ও হেফাজতে ইসলামের মুন্সীগঞ্জ জেলার আহ্বায়ক আব্দুল হামিদ মধুপুরী পীর সাহেবের নেতৃত্বে কেরানীগঞ্জ চর গলগলিয়া ও মুন্সীগঞ্জের কুচিয়ামারা ফেরিঘাট এলাকায় হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের ধলেশ্বরী সেতুর উভয় পাশে টায়ার জ্বালিয়ে সেতু অবরোধ করে রাখে। এ সময় তারা নাস্তিক বস্নগারদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। ফলে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে সকল প্রকার যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দক্ষিণ অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় চরম দুর্ভোগের পড়েন শত শত যাত্রী। অবরোধ ও সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, সৈয়দপুর মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা বশির আহম্মেদ, হেফাজতে ইসলামের সিরাজদিখান থানার সভাপতি মাওলানা ওবায়দুল্লাহ কাশেমী, মাওলানা মুফতি হাসান ও মাওলানা জাকিরসহ হাজারো মাদ্রাসা ছাত্র ও এলাকাবাসী। তবে অবরোধ চলাকালীন পুলিশকে দুরে দাঁড়িয়ে থেকে নীরব ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে। এ বিষয়ে সিরাজদিখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মাহবুবুর রহমান জানান, তারা প্রথমে কিছুটা বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে হেফাজতের নেতাকর্মীরা সংখ্যায় অনেক বেশি হওয়ায় বাঁধা প্রদান করা সম্ভব হয়নি বলে জানান ওসি।