“অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বললেন আইনশৃক্সখলা তেমন খারাপ নয়”
কাজী নাসির উদ্দীন সাতক্ষীরা: ২০ দিনে সাতক্ষীরায় ৭টি খুনের ঘটনার পাশাপাশি পুলিশ ক্যাম্পসহ পুলিশের উপর দুই দফে হামলা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৩ জন রাজনীতিককে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা, একজন ঘের কর্মচারিকে হত্যা ও জামায়াত অধ্যষিত কলারোয়ায় পুলিশ ক্যাম্পে হামলায় অংশ না নেয়ায় স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যা করেছে স্বামী। এসমস্ত হত্যাকাণ্ড ঘটনায় পুলিশ নামমাত্র কিছু সংখ্যাক দুঃস্কৃতিকারিকে গ্রেপ্তার করলেও প্রকৃত খুনিরা রয়েছে ধরাছোয়ার বাইরে। এমনকি জেলা পুলিশের অফিসের পাশেই পৌরসভা ভবনে নাইট গার্ডকে বেধে রেখে দেড় লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। এসব ঘটনায় হঠাৎ করে জেলায় আইনশৃক্সখলার চরম অবনতি ঘটার পাশাপাশি উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটছে সাধারণ মানুষের। ইতোমধ্যে সাধারণ মানুষ স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তার দবিতে কয়েক দফে মানববন্ধন ও গনমিছিল করেছে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানাগেছে, গত ১৩ আগস্ট হরতাল চলাকালে জেলার দেবহাটায় উপজেলা শ্রমিক লীগের সহ সভাপতি দক্ষিন পার“লিয়ার আলমগীর হোসেনের উপর হামলা চালিয়ে তাকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুর“ত্বর জখম করে হরতালের সমর্থনে থাকা পিকেটাররা। তাৎক্ষনিকভাবে প্রথমে সাতক্ষীরা সদর ও পরে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৬ আগস্ট আলমগীরের মৃত্যু হয়। এঘটনায় নিহতের পরিবার একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। এব্যাপারে দেবহাটা থানার পুলিশ মাত্র ৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এদের মধ্যে ২ জন এজাহার নামীয় ও ৫ জন সন্ধিগ্ধ আসামী রয়েছে। ২৬ আগস্ট রাত ১০ টার দিকে সদর উপজেলার হরিশপুর নামক স্থানে শিবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলামকে মাথায় কুপিয়ে হত্যা নিশ্চিত করে পালিয়ে যায় পেষাদার খুনিরা। ওই রাতেই পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্ত শেষে সজনদের কাছে হস্তান্তর করে। ঘটনার দুই দিন পর নিহতের ভাই সাবেক সেনা সদস্য আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে ২২ জনকে জ্ঞাত এবং ১০/১২ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। এমামলায় পুলিশ ওই সময়ে গনগ্রেপ্তার শুর“ করে। ৪৩ জনকে গ্রেপ্তারের পর মাত্র ৭ জনকে কারাগারে প্রেরণ করেছে। কয়েকদিন আগে স্থানীয় চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদকে পুলিশ ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। আর কোন গ্রেপ্তার নেই চাঞ্চল্যকর এমামলায়। সূত্রমতে এ কাণ্ডের মাত্র ৪ দিনের মাথায় হরিশপুরের পাশের গ্রাম বকচরায় নীরিহ কৃষক আব্দুল খালেককে মাঠের মধ্যে তার মেশিন ঘরে ঘাড়ে কুপিয়ে হত্যা করে। পরদিন সকালে স্থানীয়দের খবরের ভিত্তিতে সদর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে লাশ উদ্ধার করে। এসময় এলাকাবাসীর দাবির মুখে নিহতের স্ত্রী রহিমাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসে। পরে তাকে স্বামী হত্যার অভিযোগে কারাগারে পাঠানো হয়। এব্যাপারে নিহতের ফুফাতো ভাই বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। চাঞ্চল্যকর এ মামলায় পুলিশি তদন্তে গড়িমশির অভিযোগ এনে সচেতন এলাকাবাসী খালেক হত্যাকাণ্ডে বিচারের দাবিতে এবং জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে গতকাল রোববার সহশ্রাধিক গ্রামবাসী শহরে মিছিল ও মানববন্ধন করে প্রতিকার দাবী করেছে। সর্বশেষ গত ৬ সেপ্টেম্বর বেলা ১১ টার সময় সাতক্ষীরা শহরের শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কস্থ্য শিল্পকলা একাডেমিতে জেলা বিএনপির কর্মী সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুই গ্র“পের মধ্যে সংঘর্ষের জেরধরে সাপের মত পিটিয়ে ও কুপিয়ে জেলা মৎস্যজীবি দলের সাধারণ সম্পাদক আমান উল্যাহ আমানকে হত্যা করেছে। সদর থানা থেকে মাত্র ৫০ গজ দুরে এমন একটি হত্যাকাণ্ড সাধারণ মানুষকে রিতিমত শংকিত করেছে। অবশ্য ঘটনার সময় ঘটনাস্থলেই পুলিশ ছিল নিরব দর্শকের কাতারে। দিন দুপুরে শহরের মধ্যে থানা পুলিশের সামনেই এমন মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড সাধারণ মানুষ যেন উদ্বিগ্ন। নিরাপত্তা কোথায়। এঘটনায় নিহতের মাতা ফতেমা খাতুন বাদী হয়ে জ্ঞাত ৫৪ জনকে এবং অজ্ঞাত ৪০/৫০ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। ঘটনার দিন রাতেই পুলিশ ৭ জনকে গ্রেপ্তার করলেও এই ঘটনার সাথে জড়িত থাকার মত কোন সংশিষ্টতা তাদের কাছ থেকে মেলেনি বলে অভিযোগ ভুক্তভোগিদের।
এদিকে গত ২৭ আগস্ট পারিবারিক কলহের জেরধরে জেলার তালা উপজেলার মাদ্রা গ্রামের নিরাপদ মন্ডল তার দ্বিতীয় স্ত্রী সন্ধ্যা রানীকে বাড়ীর পাশের একটি পুকুরে চুবিয়ে হত্যা করে। এঘটনায় তালা থানার পুলিশ নিরাপদ মন্ডলকে ওইদিন আটক করেছে। এছাড়াও জেলার কলারোয়ায় জামাতায় নেতার মুক্তির দাবিতে কলারোয়ার সরসকাটি পুলিশ ফাঁড়িতে হামলার ঘটনায় এক জামায়াত নেতার স্ত্রী নারগিছ খাতুন (২৯) অংশ না নেয়ায় তাকে পিটিয়ে গুর“ত্বর জখম করে স্বামী সেলিম শেখ। পরে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নারগিছের মৃত্যু হয়। সেলিম শেখ কলারোয়ার খোর্দ্দ বাটরা গ্রামের বাসিন্দা। সর্বশেষ গত ২ সেপ্টেম্বর জেলার তালা উপজেলার উথালি বিল থেকে আজম আলী সরদার (৪৫) নামের এক কৃষকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সে ওই গ্রামের গহর সরদারের ছেলে।
পাশাপাশি সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার সরশকাটি ক্যাম্পের পুলিশ সদস্যরা আলতাফ হোসেন নামের এক আসামীকে গ্রেপ্তার করায় গত ১৮ আগস্ট বেলা ১১ টার দিকে কয়েক‘শ জামায়াত-শিবির ক্যাডাররা লাঠিসোটা নিয়ে পুলিশ ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে লক আপ থেকে আটক আসামী আলতাফকে জোর পূর্বক ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। এসময় তারা বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে আসামী নিয়ে চলে যায়। অবশ্য পুলিশ আসামী ছাড়িয়ে নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে অসুস্থ্য থাকায় স্থানীয় মেম্বরের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়। এছাড়াও গত পহেলা সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬ টার দিকে দেবাহাটা থানার উপ পরিদর্শক জুলফিকার আলীসহ সঙ্গীয় ফোর্স উপজেলার কোড়া গ্রামে আসামী আটক করতে গেলে জামায়াত শিবির ক্যাডাররা পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে জখম করার পাশাপাশি দারোগা জুলফিকারের ব্যবহৃত মোটর সাইকেল ভেঙ্গে দেয়। পরদিন পরিস্থিতি সামাল দিতে সাতক্ষীরা থেকে কয়েক পাটুন পুলিশ ও বিজিবি নিয়ে অভিযুক্ত স্থানে মহড়া দিয়ে ১২ জনকে আটক করলেও কারাগারে পাঠানো হয় ৪ জনকে। এসমস্ত ঘটনায় বর্তমানে জেলাবাসী চরমভাবে উদ্বিগ্ন। যেখানে আইনশৃক্সখলা রক্ষাকারি বাহিনী নিরাপদে নেই সেখানে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়।
এসব ব্যাপারে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহজাহান আলী খান জানান, পৌরসভায় ডাকাতির ব্যাপারে অনেকটা পরিস্কার হয়েছে। রবিউল হত্যাকাণ্ডে জড়িত মুল আসামী চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বকচরার খালেক হত্যাকাণ্ডে জড়িত স্ত্রীকে আটক করা হয়েছে। বিএনপি নেতা আমান হত্যাকাণ্ডের জড়িত থাকার অভিযোগে ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সবমিলিয়ে
আইনশৃক্সখলার দিক থেকে পুলিশ পিছিয়ে নেই বলে তিনি দাবী করেন। তবে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরি আইনশৃক্সখলার অবনতি হয়নি কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে খুনের সংখ্যা বেড়েছে এমনটি দাবী করে বলেন, প্রত্যেকটি ঘটনায় পুলিশের পজেটিভ রয়েছে। হত্যাকাণ্ড গুলোর ব্যাপারে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সব মিলিয়ে আইনশৃক্সখলা তেমন খারাপ নেই বলে তিনি জানান।