জি নিউজ : নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে ঘোষণা দিতে সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিলেন প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীকে তার বাসায় চায়ের আমন্ত্রণ জানান। তিনি বলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা না দিলে পরবর্তীতে কোন সভা সমাবেশ আয়োজন করার জন্য বিএনপি কারো অনুমতির তোয়াক্কা করবে না বলেও সরকারকে সতর্ক করেন তিনি। এর ঠিক আগ মুহুর্তে সমবেত কর্মীদের কাছে তিনি জানতে চান, যদি বলি ২৪ ঘণ্টা এখানে বসে থাকেন, আপনারা কি থাকবেন? এ বক্তব্যের জবাবে সমাবেশ স্থলে উপস্থিত নেতাকর্মীরা দাঁড়িয়ে হাত উঁচিয়ে সমস্বরে লাগাতার অবস্থানের পক্ষে তাদের সম্মতি দেন।
শনিবার বিকেলে রাজধানীর শাপলা চত্বরে ১৮ দলীয় জোট আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বেগম খালেদা জিয়া এ আলটিমেটাম দেন। বিকেল ৫টা ১৮ মিনিটে বক্তব্যের শুরুতে সাভারে ভবন ধ্বসের ঘটনায় নিহদের মাগফেরাত কামনা ও আহতদের সুস্থতা কামনা করেন তিনি। এর আগে বিকেল পৌনে ৪টায় তিনি সমাবেশ স্থলে এসে পৌঁছান। মঞ্চে উঠে হাত নেড়ে উপস্থিত নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা জানান তিনি। এ সময় নেতাকর্মীরাও হাত তালি ও স্লোগানে তাকে শুভেচ্ছা জানান।
সরকারের দুর্নীতি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল, রাজবন্দিদের মুক্তির দাবি, সাভার দুর্ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের শাস্তি ও হতাহতদের আর্থিক সহায়তার দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করেছে ১৮ দলীয় জোট। সমাবেশে সভাপাতিত্ব করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা। সমাবেশটি পরিচালনা করেন দলের প্রচার সম্পাদক ও বিরোধী দলের প্রধান হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক ও মহানগর সদস্য সচিব আব্দুস সালাম।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, সাভার ট্রাজেডির পর সরকার দেখেছে সারাদেশের মানুষ ফুঁসে উঠেছে। জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘোরানোর জন্য সরকার সংলাপের নাটক করছে। তিনি বলেন, সংলাপ যথেষ্ট নয়। সরকারকে পরিষ্কার করে নির্দলীয় সরকারের ঘোষণা দিতে হবে। দেশের স্বার্থে তত্ত্বাবধায় সরকারের বিল এনে পাস করতে হবে। নির্দলীয় সরকার ইস্যুতে আলোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে চায়ের আমন্ত্রণ জানিয়ে তিনি বলেন, সংলাপের পরিবেশ তৈরি করুণ, নির্দিষ্ট এজেন্ডা দেন। ঘোষণা দেন সংবিধান সংশোধন হবে। আমরা আলোচনার জন্য প্রস্তুত আছি। তিনি আরো বলেন, এখন তারা আলোচনা ফটো সেশনের কথা বলছেন কয়দিন পরে চা খাওয়ার আমন্ত্রণ জানাতে পারে।
সাভারের রানা প্লাজা ট্রাজেডিতে হতাহতদের স্মরণ করে বেগম জিয়া অভিযোগের সুরে বলেন, সাভারে ভবন ধসের ঘটনায় উদ্ধার কাজে সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, সরকার যদি আরো আগে পদক্ষেপ নিতো তাহলে আরো অনেক মানুষকে বাঁচানো সম্ভব হতো। সরকার নিহতদের হিসাব নিয়ে লুকোচুরি খেলছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
সাভারে আহতরা ঠিকমতো চিকিৎসা পাচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন খালেদা জিয়া। এত হতাহতের পরও শোকের দিন সরকারি ছুটি কেন ঘোষণা করা হলো না- সরকারের কাছে এ প্রশ্নও রাখেন তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মুজিবুর রহমানের জন্ম ও মৃত্যুদিনে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হলেও সাভারে এতো লোক মারা গেল কিন্তু কেন ছুটি ঘোষণা করা হলো না। সরকার শোক দিবস ঘোষণা করলেও এ সময় সংসদের অধিবেশন ডাকায় কঠোর সমালোচনা করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর সংলাপের আহ্বানকে ইঙ্গিত করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, বিপদে পড়লেই সরকারের সুর নরম হয়। বর্তমান সরকারের শুধু বড় বড় কথাই আছে। আমরা চার বছর অনেক সহ্য করেছি। আমাদের ওপর হামলা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। আমাদের দলের মহাসচিব এখনো জেলে রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। তিনি বলেন, আমরা সমাবেশে ভাড়া করে লোক আনি না। আমাদের সমাবেশে এত টাকা খরচ হয় না। তিনি আরো বলেন, আমাদেরকে মানবতার কথা শেখাবেন না। সাভারে দুর্ঘটনার পর আমরাই প্রথমে ছুটে গিয়েছি। তিনি পদ্মা সেতু, হলমার্ক, শেয়ার মার্কেট, ডেসটিনির টাকা সাভারে দান করতেও আওয়ামী লীগের প্রতি আহ্বান জানান।
সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মাহবুবুর রহমান, আ স ম হান্নান শাহ, কামাল ইবনে ইউসুফ, হাফিজউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ওসমান ফারুক, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, আবদুল মান্নান, শামসুজ্জামান দুদু, মিজানুর রহমান মিনু, বরকত উল্লাহ বুলু, মাহবুব উদ্দিন খোকন প্রমুখ। এছাড়া ১৮ দলীয় জোট, ছাত্র দল ও ছাত্রশিবিরের নেতারাও বক্তব্য রাখেন।
৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিলেন -বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া
Share This