করল ঢাকা-আগৈলঝাড়া নৌ-রুটের পূবালী-২ লঞ্চ স্টাফরা
অপূর্ব লাল সরকার, আগৈলঝাড়া (বরিশাল) থেকেঃরাখে আল্লা, মারে কে ? প্রবাদের এমন সত্যিটা আরেকবার স্রষ্টা সত্যি প্রমাণ করেছেন হতভাগ্য এক মহিলার ভাগ্যকে ঘিরে। হৃদয় বিদারক এক ঘটনার মধ্য দিয়ে অলৌকিকভাবে বেচে যাওয়া হতভাগ্য মহিলাকে শীতের রাতে মেঘনা নদী থেকে উদ্ধার করেছেন বরিশালে আগৈলঝাড়া উপজেলা ঢাকা-পয়সারহাটগামী লঞ্চের স্টাফরা। সোমবার রাতে ঢাকার সদরঘাট থেকে ছেড়ে আসে পয়সারহাটগামী লঞ্চ পূবালী-২। এরই মধ্যে হুলারহাট ও খেপুপাড়াগামী দুটি লঞ্চ ওভারটেক করেছে পূবালী লঞ্চ-২কে। লঞ্চের সুকানী কালাম শুনতে পেলেন ভয়ংকর মেঘনা নদীতে মধ্যবয়সী এক নারী বাঁচাও বাঁচাও বলে আর্তচিৎকার করছেন। লঞ্চের সার্চলাইট ঘুরিয়ে নদীতে একজন নারীকে ভাসতে দেখে লঞ্চ ঘুরিয়ে কাছে আনলেন তিনি। নদীর প্রবল স্রোতে প্রথমবার তলিয়ে গেলেন ওই নারী। হাল ছাড়লেন না কালাম। একটু পর আবার ভেসে উঠলেন পানির উপর। দ্বিতীয়বার চেষ্টা করলেন নদী থেকে তুলে আনতে। কিন্তু নদীর স্রোতের সাথে যুদ্ধ করে এতক্ষনে নিজের সমস্ত শক্তি হারিয়ে ওই নারী উঠতে পারলেন না লঞ্চে। উৎসুক যাত্রীরা শুধুই তাকিয়ে দেখছেন। এসময় নিজের জীবন বাজি রেখে এক যাত্রী ঝাঁপিয়ে পরলেন নদীতে। সারেং কালাম তার কাছে বয়া ফেললে ওই যাত্রী বয়া ধরে হতভাগিনী ওই নারীকে নিলেন নিজের হাতের মধ্যে। অন্যান্যদের সহায়তায় তুলে আনা হল তাদের। এতক্ষণে ওই নারী জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। লঞ্চে তুলে সেবাশুশ্রæসা শুরু হলেও সারা রাতেও জ্ঞান ফেরানো গেলনা তার। বয়স আনুমানিক ২২ থেকে ২৫ বছর। পরনে ছিল সবুজ রংয়ের ডিজাইন করা সালোয়ার-কামিজ। বেলা ১০টার দিকে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার পয়সারহাট ঘাটে লঞ্চটি ভেরার আগে থেকেই খবর ছড়িয়ে পরে চারদিকে। স্থানীয় পুরুষ-মহিলারা ছুটে আসেন লঞ্চঘাটে। তারাহুরো করে যাত্রীরা নামার আগেই তারা লঞ্চে উঠে পরেন। স্থানীয় রাবেয়া নিজের সন্তানের মত পরম যতেœ মাতৃস্নেহ সেবাশুশ্রæসা শুরু করেন। একপর্যায়ে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক মনোতোষ বাড়ৈ চিকিৎসা শুরু করেন। তার জ্ঞান না ফেরায় নাম-ঠিকানাসহ নদীতে ভাসমান অবস্থার কথা জানা যায়নি। সংবাদকর্মীদের পরামর্শে হতভাগিনীকে নেয়া হল আগৈলঝাড়া উপজেলা হাসপাতালে। সাথে গেলেন লঞ্চের সুপারভাইজার বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার সজল আহম্মেদ। রোগী নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছার আগেই সংবাদকর্মীরা একধিকবার ফোন দিয়েও কথা বলতে পারেনি স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মকর্তা ডা. সেলিম মিয়ার সাথে। রোগী নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার সাথেই ডাক্তাররা রোগীর ¯^জন না থাকায় উট্কো ঝামেলা থেকে নিজেদের বাঁচাতে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। লঞ্চের সুপারভাইজার সজলের ঐকান্তিক চেষ্টায় তাকে ভর্তি করা হল ফিমেল মেডিসিন বিভাগে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জ্ঞান ফেরেনি হতভাগিনী ওই নারীর।