অনলাইন ডেস্কঃ- অংশত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বৈশ্বিক জ্বালানি সংকটের ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বৈশ্বিক ধীরগতির সাথে তীব্র মুদ্রাস্ফীতিজনিত সংকট অনেক দেশেই প্রকৃত মাসিক মজুরিতে উল্লেখযোগ্য পতন ঘটাচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার এখানে প্রাপ্ত বিশ্বব্যাপী মজুরি সম্পর্কিত সর্বশেষ আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- দারিদ্র্য, অসমতা ও সামাজিক অস্থিরতার বিদ্যমান স্তরের আরো অবনতি রোধে জরুরিভাবে সুপরিকল্পিত নীতিগত ব্যবস্থা প্রয়োজন। প্রতিবেতনটিতে বলা হয়েছে, সংকট মধ্যবিত্তদের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস করছে এবং বিশেষ করে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোকে কঠোরভাবে আঘাত করছে।
“গ্লোবাল ওয়েজ রিপোর্ট ২০২২-২০২৩ : মজুরি ও ক্রয়ক্ষমতার ওপর মুদ্রাস্ফীতি এবং কোভিড-১৯-এর প্রভাব”-এ বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী মাসিক মজুরি ২০২২ সালের প্রথমার্ধে প্রকৃত অর্থে ০.৯ শতাংশে নেমে এসেছে। চলতি শতাব্দীতে প্রথমবারের মতো বিশ্বব্যাপী প্রকৃত মজুরি বৃদ্ধি নেতিবাচক হয়েছে। উন্নত জি২০ দেশগুলোর মধ্যে ২০২২ সালের প্রথমার্ধে প্রকৃত মজুরি ২.২ শতাংশ কমেছে বলে অনুমান করা হয়েছে, যেখানে উদীয়মান জি২০ দেশগুলোতে প্রকৃত মজুরি ০.৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা কোভিড-১৯ মহামারীর আগের বছর ২০১৯ সালের তুলনায় ২.৬ শতাংশ কম।
আইএলও মহাপরিচালক গিলবার্ট এফ হংবো বলেন, “আমরা যে একাধিক বৈশ্বিক সংকটের মুখোমুখি হচ্ছি, তা প্রকৃত মজুরি হ্রাসের দিকে চালিত করেছে। এটি কয়েক মিলিয়ন শ্রমিককে একটি ভয়ানক পরিস্থিতির মধ্যে ফেলেছে। তারা ক্রমবর্ধমান অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হচ্ছে। সর্বনিম্ন বেতনের ক্রয়ক্ষমতা বজায় না রাখলে, আয় বৈষম্য ও দারিদ্র্য বাড়বে। এছাড়া ‘মহামারী-উত্তর অতি জরুরী পুনরুদ্ধার’ও ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। এটি বিশ্বজুড়ে আরও সামাজিক অস্থিরতা বাড়াতে পারে এবং সবার জন্য সমৃদ্ধি ও শান্তি অর্জনের লক্ষ্য বিঘিœত করতে পারে।”
কোভিড-১৯ সংকটের সময় শ্রমিক এবং তাদের পরিবারের জন্য উল্লেখযোগ্য মজুরি হ্রাসের ওপর জীবনযাত্রার ব্যয় সংকট আসে, যা অনেক দেশে নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছিল। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়ের ওপর প্রভাব ফেলে। এর কারণ হল, তারা তাদের ডিসপোজেবল আয়ের বেশিরভাগই অত্যাবশ্যকীয় পণ্য এবং পরিষেবাগুলোতে ব্যয় করে। সাধারণত অপ্রয়োজনীয় আইটেমগুলোর চেয়ে এসব আইটেমের মূল্য বেশি বেড়ে থাকে। বিশ্লেষণেও দেখা গেছে যে, মজুরি শ্রমিক এবং তাদের পরিবারের ক্রয়ক্ষমতা এবং জীবনযাত্রার মান বজায় রাখতে সহায়তা করার জন্য সু-পরিকল্পিত নীতি ব্যবস্থা প্রয়োগ করার জরুরি প্রয়োজন রয়েছে।
প্রতিবেদনের অন্যতম লেখক রোজালিয়া ভাজকুয়েজ-আলভারেজ বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই বেতন স্কেলের মাঝামাঝি এবং নিম্ন প্রান্তের কর্মীদের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। প্রকৃত মজুরির অবনতির বিরুদ্ধে লড়াই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে, যার ফলে তা মহামারীর আগে পরিলক্ষিত কর্মসংস্থানের স্তর পুনরুদ্ধারে সহায়তা করতে পারে। এটি সকল দেশ এবং অঞ্চলে মন্দার সম্ভাবনা বা গভীরতা কমানোর একটি কার্যকর উপায় হতে পারে।’
প্রতিবেদনে দেখা যায়, উত্তর আমেরিকায় (কানাডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র), ২০২১ সালে গড় প্রকৃত মজুরি বৃদ্ধি শূন্যে নেমে আসে এবং ২০২২ সালের প্রথমার্ধে মাইনাস ৩.২ শতাংশে নেমে আসে। লাতিন আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ানে প্রকৃত মজুরি বৃদ্ধি হ্রাস পেয়ে ২০২১ সালে মাইনাস ১.৪ শতাংশ এবং ২০২২ সালের প্রথমার্ধে মাইনাস ১.৭ শতাংশে নেমে আসে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নে, যেখানে চাকরি ধরে রাখার স্কিম এবং মজুরি ভর্তুকি ব্যাপকভাবে মহামারী চলাকালীন কর্মসংস্থান এবং মজুরি স্তরকে সুরক্ষিত করেছিল, যেখানে প্রকৃত মজুরি বৃদ্ধি ২০২১ সালে ১.৩ শতাংশে বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং ২০২২ সালের প্রথমার্ধে আবার হ্রাস পেয়ে মাইনাস ২.৪ শতাংশে নেমে আসে। পূর্ব ইউরোপে, প্রকৃত মজুরি প্রবৃদ্ধি ২০২০ সালে ৪.০ শতাংশ এবং ২০২১ সালে ৩.৩ শতাংশে নেমে আসে এবং ২০২২ সালের প্রথমার্ধে মাইনাস ৩.৩ শতাংশে নেমে আসে।
এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রকৃত মজুরি ২০২১ সালে ৩.৫ শতাংশে বেড়েছে এবং ২০২২ সালের প্রথমার্ধে ১.৩ শতাংশে নেমে এসেছে।
মধ্য ও পশ্চিম এশিয়ায় ২০২১ সালে প্রকৃত মজুরি বৃদ্ধি ১২.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পায়, কিন্তু ২০২২ সালের প্রথমার্ধে ২.৫ শতাংশে কমে যায়। খবর বাসস ।
আফ্রিকায় ২০২১ সালে প্রকৃত মজুরি বৃদ্ধির হার মাইনাস ১.৪ শতাংশে এবং ২০২২ সালের প্রথমার্ধে মাইনাস ০.৫ শতাংশে নেমে আসে।
আরব দেশগুলোতে মজুরি প্রবণতা অস্থায়ী, তবে ২০২১ সালে নিম্ন মজুরি ০.৫ শতাংশ এবং ২০২২ সালে ১.২ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।