আর দেরি নয়, সময় হয়েছে তালাকের আইন সংশোধনের

অনলাইন ডেক্সঃ- তালাক, তালাক, তালাক – শুনলেই মনে পড়ে যায় ভারতীয় চলচ্চিত্র ‘নিকাহ’-র কথা৷ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসার বন্ধন যে শুধুমাত্র একটি শব্দের তিনবার উচ্চারণে ভেঙে যেতে পারে, সেটা প্রথমবার ঐ ছবিতেই দেখেছিলাম, হয়েছিলাম বিস্মিত৷
আর সে বিস্ময় আমার আজও কাটে না, যখন দেখি পাকিস্তান বা বাংলাদেশে এই তিন তালাকের প্রথা বা ‘তালাক-ই-বিদায়ী’ বিবাহবিচ্ছেদ আইনত বন্ধ হয়ে গেলেও, ভারতে থেকে গেছে৷ আজও ভারতবর্ষের মুসলিম আইনে পুরুষের জন্য রয়েছে বিবাহবিচ্ছেদের একক ইচ্ছার আইন, অর্থাৎ তালাক দেয়ার ‘লাইসেন্স’৷ মধ্যযুগীয় এই আইন অনুযায়ী, যে কোনো সময়ে বিবাহ অস্বীকার করতে পারে একজন স্বামী৷ আর এর জন্য অভিযোগ নিয়ে আদালতে যাওয়া বা স্ত্রীর প্রতি আনা অভিযোগ প্রমাণ করারও প্রয়োজন নেই তাঁর৷ ‘তালাক’ – এই শব্দটা তিনবার উচ্চারণ করলেই কেল্লা ফতে!
এখানে বলে রাখে দরকার, শরিয়তেও কিন্তু তালাক দেয়ার অধিকার দেওয়া হয়েছে একমাত্র স্বামীকে৷ স্ত্রীর জন্যে স্বামীকে তালাক দেয়ার কোনো অনুমতি নেই৷ তবে স্বামী যদি স্ত্রীকে সেই অধিকার দিয়ে থাকেন, তাহলে স্ত্রী স্বামীর দেয়া সেই ‘এক্তিয়ার’ বা ক্ষমতা অনুযায়ী তালাক গ্রহণ করতে পারেন৷ শরিয়তের পরিভাষায় একে ‘তালাক-এ-তৌফিজ’ বলা হয়৷ তবে স্বামী যদি পুরুষত্বহীন বলে প্রমাণিত হন, এবং তার ফলে স্ত্রী তাঁর সঙ্গে ঘর-সংসার করতে অপারগ হন, তাহলে স্ত্রী বিচারকের কাছে অথবা মুফতি বোর্ডের কাছে গিয়ে মামলা দায়ের করতে পারেন৷ সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে বিবাহবিচ্ছেদও হতে পারে৷ কিন্তু স্ত্রী কোনো অবস্থাতেই স্বামীকে তিনবার ‘তালাক’ উচ্চারণ করে বিবাহবিচ্ছেদ করতে পারেন না৷ অথচ দেখুন, বিয়েটা তো একান্তভাবেই স্বামী-স্ত্রীর ব্যাপার৷ তাহলে বিবাহবিচ্ছেদের সময় স্ত্রীর কোনো ভূমিকা নেই কেন? আরো বড় কথা হলো, শুধুমাত্র ভারতীয় মুসলমানদের জন্য এ আইন কেন থেকে গেছে? ভারতের অন্যান্য ধর্ম সম্প্রদায়, বিশেষ করে হিন্দুদের জন্য বিবাহবিচ্ছেদের আইন আলাদা৷ সমাজ যেভাবেই দেখুক না কেন, আজকাল বিবাহবিচ্ছেদ বা ডিভোর্সের ঘটনা আকছার ঘটছে ভারতে, চোখে পড়ছে আদালতের নির্দেশে আলাদা থাকা বা ‘জুডিশিয়াল সেপারেশন’-এর ঘটনাও৷
তাহলে? তাহলে কি শুধুমাত্র ‘মুসলিম পার্সোনাল ল’ বলেই ভারতের সরকার, ভারতের সমাজ এতদিন চোখ বন্ধ করে আছে? কেন? মুসলমান নারীর আত্মমর্যাদা, তাঁর অধিকার কি হিন্দু বা অন্য ধর্মাবলম্বী নারীর তুলনায় কম? নাকি ‘হিন্দু ভারতের’ শাসকগোষ্ঠী মুসলিম আইনে হাত দিতে ভয় পান? ভয় পান শরিয়তের বিরুদ্ধাচারণ করতে? আমার তো মনে হয় এ প্রশ্নগুলির উত্তর খোঁজা আজ সত্যিই অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছে৷
আরো একটা কথা না বলে পারছি না৷ ডিভোর্স – তা পুরুষ বা নারী – যার মর্জিতেই হোক না কেন, যে-ই দিক না কেন, বিবাহবিচ্ছেদে আসলে কেউ জেতে না৷ ডিভোর্সের অর্থ এটাই যে স্বামী-স্ত্রী একটি সম্পর্ক রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছেন৷ এই হারের দায়িত্ব দু’জনেরই৷ খবরঃ ডিডাব্লিউ,তাই দু’জনেরই থাকতে হবে এই হারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার, সম অধিকার, তা তাঁরা যে ধর্মেরই হোন না কেন৷

Exit mobile version