ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সাতক্ষীরা শহরের ইটাগাছার মেসার্স শফিউর রহমান শফি জানান, আশাশুনির খাজরা বাজারের গোষ্ট বিহারী রায়ের দোকান থেকে মালপাড়া ঠাকুরতলা পর্যন্ত কপোতাক্ষ নদের ২০০ মিটার বেড়িবাঁধ ১৪ ফুট চওড়া করে দু’কোটি ৩২ লাখ টাকায় ২০১১-২০১২ অর্থবছরে সংস্কার করার জন্য তার লাইসেন্সের পক্ষে খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহ-নেওয়াজ ডালিম কার্যাদেশ পান। এতে ব্যাংক গ্যারান্টিসহ (বিডি) কাগজপত্র তৈরি করতে তার প্রায় ছয় লাখ টাকা খরচ হয়। এরপর এক বছর কেটে গেলেও শাহ-নেওয়াজ ডালিম কোন কাজ না করে কাগজপত্র তার কাছে (শফি) দিয়ে কাজ করতে বলেন। পরে নিজের লাইসেন্স বাঁচাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ বরাবর কাজ করার জন্য অতিরিক্ত সময়ের আবেদন জানান শফি। গত বছরের ২১ মার্চ তিনি নতুন কার্যাদেশ পান। আদেশে চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে বাঁধ সংস্কারের কাজ শেষ করতে বলা হয়। প্রথম পর্যায়ের কিছু কাজ করার পর পানি উন্নয়ন বোর্ড চুক্তি অনুযায়ী টাকা না দেওয়ার কারণে কাজ বিলম্বিত হয়। এরপরও বর্তমানে জিও ব্যাগে বালি ভরাট ও ব্লকের কাজ ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। কাজ করার সময় চেয়ারম্যান ডালিমকে কয়েক দফায় বেশ কিছু টাকা চাঁদা দিতে হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, গত মঙ্গলবার বিকেলে এক কার্গো কুচো পাথর ভর্তি খাজরা মালোপাড়ায় নিয়ে এলে তা নামাতে দেয়নি ডালিম চেয়ারম্যানের লোকজন। ফলে বাঁধ সংস্কারের বাকি কাজ বন্ধ হয়ে গেছে।
এব্যাপারে খাজরা মালোপাড়ার শ্যামল মন্ডল, অরুণ মন্ডল ও বিমল মন্ডল জানান, তারা বংশপরম্পরায় এ পাড়ায় বসবাস করলেও নদীভাঙনে চলে গেছে অনেকের বসতবাড়ি। এখন তাদের বাড়ির সামনের বেড়িবাঁধ ভাঙতে ভাঙতে এক ফুট চওড়ায় এসে ঠেকেছে উলেখ করে তারা বলেন, আগামী বর্ষা মৌসুমের মধ্যে সংস্কার করা না গেলে বাঁধ ভেঙে তাদের ইউনিয়নের পশ্চিম খাজরা, চক দুর্গাপুর, রাউতাড়া, পিরোজপুর, তুয়ারডাঙা, পারশেমারি, ফটিকখালি, বুজোয়াকাটি, থানিয়া, ঘুঘুমারি, সুরিয়াবাদ চামটা ছাড়াও বড়দল ও আনুলিয়া ইউনিয়নের ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হবে। ভেসে যাবে পাঁচ হাজার বিঘার চিংড়ি ঘের ও পুকুর। আমন চাষ ব্যাহত হবে ছয় হাজার বিঘা জমিতে। জলমগ্ন হয়ে পড়বে তিনটি ইউনিয়নের ২০টির বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
এ ব্যাপারে খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহ-নেওয়াজ ডালিম তার বিরুদ্ধে চাঁদা দাবি ও গ্রহণের অভিযোগ সঠিক নয় দাবি করে বলেন, শফিউর রহমানের লাইসেন্স ব্যবহার করে দরপত্র গ্রহণের জন্য তিনি ব্যাংক থেকে সুদে অনেক টাকা নিয়েছিলেন। তাই সুদে আসলে তিনি ঠিকাদারের কাছে আট লাখ টাকা চেয়েছেন। এরমধ্যে ছয় লাখ ৪০ হাজার টাকা পেয়েছেন। বাকি টাকা না দেওয়ার জন্য কৌশলে তাকেসহ সহযোগী চারজনের নামে চাঁদাবাজির মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। মামলা করায় ঠিকাদারকে কাজ করতে বাধা দেওয়া হয়েছে।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর আশাশুনি সেকশান অফিসার (এসও) মীর শাহিনুর আলী জানান, কাজ করেও দেরীতে টাকা পাওয়ায় ঠিকাদাররা যথাসময়ে কাজ শেষ করতে পারেন না। চেয়ারম্যান ডালিম দরপত্র খরচ বহির্ভুত প্রায় দু’লাখ অতিরিক্ত টাকা দাবি করায় কাজ বন্ধের মত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তবে আগামী বর্ষা মৌসুমের মধ্যে কাজ শেষ করার জন্য বিরোধ সংশিষ্ট সকলকে নিয়ে খুব শীঘ্রই আলোচনায় বসা হবে।
আশাশুনি থানার উপ-পরিদর্শক খায়রুল ইসলাম জানান, চাঁদাবাজির মামলা হলেও তদন্ত করে আসামিদের বির“দ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে চেয়ারম্যান ডালিম ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে আশাশুনি থানায় একটি চাঁদাবাজি ও দু’টি মারপিটের মামলা রয়েছে বলে নিশ্চিত করেন তিনি।