নানা কারণে দেশের পরিস্থিতি অস্থির। তা’ সত্ত্বেও দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারা যাতে ব্যাহত না হয় সেদিকে সরকারের দৃষ্টি রাখতে হবে। এ সংক্রান্ত এক খবরে বলা হয়, বর্তমান সরকারের আমলে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খাতে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে বলে মনে করছে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। এগুলো হচ্ছে সরকারি বিনিয়োগ, রফতানি আয়, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রেমিটেন্স আয়, দারিদ্র্য নিরসন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন। তবে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা বাংলাদেশের চলমান প্রবৃদ্ধির ধারাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। সম্প্রতি সরকারের থিঙ্কট্যাঙ্ক হিসেবে খ্যাত এ সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে এসব বিষয় উঠে এসেছে। এ বিষয়ে জিইডি’র সদস্য ড. শামসুল আলম বলেন, সরকারের চার বছরে অর্থনৈতিক বিভিন্ন খাতে ব্যাপক সাফল্য অর্জিত রয়েছে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়েছে। এ েেত্র কেন্দ্রীয় ব্যাংক সামঞ্জস্যপূর্ণ মুদ্রানীতি গ্রহণ করলে মূল্যস্ফীতির এ ক্রমবর্ধমান হার নামিয়ে আনা সম্ভব হবে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার ল্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য বর্তমান সরকার বিগত বছরগুলোতে সরকারের বিনিয়োগ ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। যখন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে সংশোধিত উন্নয়ন বাজেট ছিল ২৩ হাজার কোটি টাকা। সেখানে বর্তমান অর্থবছরে ২০১২-১৩ বৃদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫ হাজার কোটি টাকায়। এটি টাকার অঙ্কে সর্বকালের সর্বোচ্চ এডিপি। রফতানি আয়ের েেত্র বলা হয়েছে, বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ১৫ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল রফতানি আয় এবং সর্বশেষ ২০১১-১২ অর্থবছরে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানি আয় হয়েছিল। গত চার বছরে রফতানি খাতে গড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ। কর্মসংস্থানের েেত্র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকার দায়িত্বগ্রহণের পর ২০০৮-০৯ অর্থবছরে প্রায় ৬ লাখ ৫০ হাজার মানুষ বিদেশে কর্মসংস্থান লাভ করেছিল। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা ও বাংলাদেশের প্রধান শ্রমবাজার মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা রাজনৈতিকভাবে অস্থির থাকা সত্ত্বেও সরকারের সমন্বিত প্রয়াসের ফলে চার বছরে ২২ লাখ ৮ হাজার শ্রমিক বিদেশ গেছে। গত চার বছরে রেমিটেন্স আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬৫ শতাংশ। রেমিটেন্স আয়ের এ প্রবৃদ্ধি হিসাব ভারসাম্য ধনাত্মক রাখতে, বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের ওপর চাপ কমাতে এবং গ্রামীণ দারিদ্র্য দূরীকরণে ব্যাপক অবদান রাখছে। দারিদ্র্য নিরসনের েেত্র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ফলে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর শতকরা পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে। ২০০৫ সালে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪০ শতাংশ। ২০১০ সালে তা হ্রাস পেয়ে হয়েছে ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ। প্রতিবছর দারিদ্র্য কমছে, ২ দশমিক ৪৬ শতাংশ হারে। এ হিসেবে ২০১২ সালে দারিদ্র্যের প্রাক্কলিত হার হবে ২৬ দশমিক ৪ শতাংশ। সেই সাথে আয় বৈষম্য না বেড়ে কিছুটা নিম্নমুখী রয়েছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার েেত্র বলা হয়েছে, গত চার বছরে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। এ খাতে প্রতিবছর গড়ে ৪ দশমিক ২ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হচ্ছে। যথাসময়ে কৃষি উপকরণ সহায়তা, উন্নত জাতের বীজ সরবরাহ, মাটির স্বাস্থ্য রায় অ-জৈব সারের পাশাপাশি জৈব সারের উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধি, বর্ধিত কৃষি ঋণ বিতরণ, নতুন জাতের ধান উদ্ভাবন এবং কৃষি জমির আওতা বৃদ্ধির কারণে কৃষি খাতে এ প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছে। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের েেত্র বলা হয়েছে, মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলের আটটি গোলের মধ্যে অধিকাংশ েেত্র এগিয়েছে বাংলাদেশ। যেমন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিার েেত্র সমতা আনয়ন, চরম দারিদ্র্য ও ুধা নির্মূলকরণ, সর্বজনীন প্রাথমিক শিা অর্জন, ৫ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুহার কমানো, মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়ন, এইচআইভি/এইডস, ম্যালেরিয়া ও অন্যান্য সংক্রামক রোগের বিস্তার কমিয়ে আনা ইত্যাদি েেত্র উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন হয়েছে। তবে অন্য ল্যগুলো অর্জন করতে গেলে আরও জোরালো প্রচেষ্টা হাতে নিতে হবে। পাশাপাশি হরতাল অবরোধের মত নানান কর্মসূচিতে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন-অগ্রগতি বারবার ব্যাহত হচ্ছে। আমরা লক্ষ্য করেছি, যেকোন সরকারের মেয়াদের শেষ সময়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তা’ সত্ত্বেও যে সব খাতে উন্নয়ন অগ্রগতি হচ্ছে তা’ অব্যাহত রাখতে সরকারের সর্বাত্মক প্রচেষ্ট চালাতে হবে।