একটি কুচক্রী মহল ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল নিয়ে অপপ্রচার ও গুজব ছড়িয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে

জি নিউজ:ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল ও কৃমিনাশক বড়ি খেয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এদের মধ্যে প্রায় এক হাজার শিশুকে জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ঢাকা শিশু হাসপাতালেও কয়েকটি শিশুকে ভর্তি করা হয়।
অবশ্য চিকিৎসকেরা বলেছেন, ভর্তি হওয়া শিশুদের কেবল স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। এটি সামান্য সমস্যা। এতে ভীত হওয়ার কিছু নেই।
নরসিংদীর মনোহরদীতে দেড় বছরের সামিয়া আক্তার ও খুলনার ডুমুরিয়ায় এক বছর নয় মাস বয়সী জান্নাতুল বিনা ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ার পর মারা গেছে বলে তাদের পরিবারের অভিযোগ। তবে মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নূরুল ইসলাম  বলেন, ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুলের কারণে সামিয়ার মৃত্যু হয়নি। তার মৃত্যুর কারণও তিনি জানাননি।
জান্নাতুলের মৃত্যু সম্পর্কে খুলনার সিভিল সার্জন গোলাম মুর্তোজা শিকদার বলেন, শিশুটি আগে থেকে অসুস্থ ছিল। ঠিকমতো হাঁটতে পারত না। ভিটামিনের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। অন্য কোনো কারণে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল ও কৃমিনাশক বড়ি খাওয়ানোকে কেন্দ্র করে সারা দেশে গুজব ও আতঙ্ক ছড়ানোর পেছনে কে বা কারা জড়িত আছে, তা তদন্তে চার সদস্যের কমিটি করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। কমিটি এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে। গতকাল মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যসচিব এম এম নিয়াজউদ্দিন এ কথা জানান।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মজিবুর রহমান ফকির বলেন, একটি কুচক্রী মহল ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল নিয়ে অপপ্রচার ও গুজব ছড়িয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খন্দকার মো. সিফায়েত উল্লাহ বলেন, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকায় একাধিক মসজিদের মাইক ব্যবহার করে ভিটামিন ‘এ’ সম্পর্কে বিরূপ প্রচার করা হয়। কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এক মসজিদের ইমামকে আটক করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রণালয় দাবি করে, ভিটামিন ‘এ’ আন্তর্জাতিক মানের।
সারা দেশের পরিস্থিতি: গত মঙ্গলবার দেশের ছয় মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সী সব শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল এবং দুই থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুকে ভিটামিনের সঙ্গে একটি করে কৃমিনাশক বড়ি খাওয়ানো হয়। কিন্তু ‘ভিটামিন খেয়ে শিশু মারা গেছে’, ‘শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে’, ‘ক্যাপসুল মেয়াদোত্তীর্ণ’, ‘ক্যাপসুলে বিষ আছে’—এ ধরনের অপপ্রচার মুঠোফোন, ফেসবুক ও ব্লগে চালানো হয়, যা প্রায় সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
কোনো কোনো জেলায় কিছু শিশুর বমি, জ্বর ও পাতলা পায়খানা হয়। তাদের নেওয়া হয় হাসপাতালে। প্রাথমিক চিকিৎসার পাশাপাশি অভিভাবকদের অভয় দিয়ে বাড়িতে পাঠানো হয়। কিন্তু নানা গুজবে আতঙ্কিত শত শত মানুষ শিশুদের নিয়ে উপজেলা ও জেলা হাসপাতালে ভিড় করেন। কিছু শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অনেক জেলায় মাইকে ঘোষণা দিয়ে মানুষকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করা হয়।
হাসপাতালে ভর্তি করা শিশুরা বমি, পাতলা পায়খানা বা জ্বর নিয়ে এসেছিল। এ রকম শিশু ভর্তি হয় সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে ৫১ জন, জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালে ৭৯ জন, কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ২০ জন, লালমনিরহাটের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ৬৩ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালেও মঙ্গলবার ও গতকাল ২০ জন শিশুকে ভর্তি করা হয়।
তবে এসব শিশুর ব্যাপারে কোনো তথ্য বা সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তরের নেই। এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল ও কৃমিনাশকের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। কৃমিনাশকে কারও কারও সামান্য অ্যালার্জি থাকতে পারে। ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল সুস্বাদু নয় বলে খেয়ে কেউ বমি করতে পারে। কারও পেটে বেশি কৃমি থাকলে কৃমিনাশক খাওয়ার পর তারও বমি হতে পারে। পাতলা পায়খানা হওয়ার কোনো কারণ নেই। দুটি ওষুধ একসঙ্গে খাওয়ালে রাসায়নিক মিথষ্ক্রিয়া (ড্রাগ ইন্টারঅ্যাকশন) হবে না। তিনি বলেন, ‘কেন এত শিশু হাসপাতালে ভর্তি হলো, তদন্ত হওয়া দরকার।’

Exit mobile version