স্টেট অব ইউনিয়ন ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা দ্বিতীয় মেয়াদে উচ্চাভিলাষী কর্মসূচীর পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। তার এই পরিকল্পনায় মধ্যবিত্তদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও অভিবাসন আইন বিবেচনা করার জন্য বিভক্ত কংগ্রেসের প্রতি তিনি আহ্ববান জানিয়েছেন। মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের কে উভয় করে (সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদ) এক মিলিত অধিবেশনে ওবামা ভাষণটি দেন। আয়কর ও সরকারী ব্যয় নিয়ে রিপাবলিকানদের সঙ্গে তিক্ত বিরোধে ‘আটকা পড়া’ অবস্থাতেই ওবামা ভাষণটি দিলেন। কিন্তু তার বক্তেব্যের দৃঢ়তায় ওই বিরোধ কিছু সময়ের জন্য হলেও চাপা পড়ে গিয়েছিল। ওবামা বলেন, “সরকার সব সমস্যা সমাধান করে দেবে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা এ আশা করে না, কিন্তু আমরা দলের স্বার্থের আগে জাতির স্বার্থকে প্রাধান্য দেব, এ আশা তারা করে। যে যে জায়গায় আমাদের মধ্যে যৌক্তিক সমঝোতা করা সম্ভব, আমরা দৃঢ়ভাবেই যেন তা করি এ আশাও তারা করে।” ওবামার এই ভাষণ বিরোধী রিপাবলিকানদের ওপর এক কঠিন চাপ। এতে বিভিন্ন ইস্যুতে রিপাবলিকানদের বিরোধিতাকে ‘জাতির স্বার্থের আগে দলের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া’ হচ্ছে বলে নাগরিকদের কাছে বার্তা পৌঁছে দিতে পারে। এরপরও তার বেশ কয়েকটি প্রস্তাব কংগ্রেসে বিরোধিতার মুখে পড়বে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নূন্যতম মজুরি ঘন্টাপ্রতি ৭ দশমিক ২৫ ডলার থেকে বাড়িয়ে ঘন্টাপ্রতি ৯ ডলার করার প্রস্তাব দিয়েছেন। মজুরি বৃদ্ধি করা হলে ব্যবসায়ীরা কর্মী ছাঁটাই করতে পারে, এই উদ্বেগে রিপাবলিকানরা সাধারণত নূন্যতম মজুরি বাড়ানোর বিরোধিতা করে। ব্রিজ, পথঘাট সংস্কার ইত্যাদির জন্য ওবামা ৫ হাজার কোটি ডলার তহবিল বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন। কিন্তু ওবামা প্রশাসনের প্রথম মেয়াদে এ খাতে ৭৮ হাজার ৭শ’ কোটি ডলার ব্যয়েও বেকারের হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস না পাওয়ায় রিপালিকানদের প থেকে এরও বিরোধিতা করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওবামা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির গতির কারণে নাগরিকদের কর্মসংস্থান হলেও অনেক পূর্ণকালীন চাকরি নিশ্চিত করতে পারেনি। তিনি বলেন, “কর্পোরেট ব্যবসায় লভ্যাংশ এখন যে কোনো সময়ের চেয়েই বেশি, কিন্তু এক দশকেরও বেশি সময় ধরে, মজুরি ও মধ্যবিত্তের আয় তেমন বাড়েনি।” তিনি মধ্যবিত্ত শ্রেণীকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ‘প্রকৃত চালক’ অভিহিত করে এই শ্রেণীর বিকাশের ওপর জোর দেন। এছাড়া কংগ্রেসকে ধনীদের ওপর কর বৃদ্ধি, অভিবাসন আইন পর্যালোচনা এবং কঠোর অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন করার জন্যও আহ্বান জানান তিনি। ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আইন পরিষদের পরবর্তী নির্বাচন। সবার মনোযোগ ওই নির্বাচনের দিকে চলে যাওয়ার আগেই আগামী এক বছরের মধ্যেই এসব প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতে চান ওবামা। এছাড়া স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় নিয়ে রিপাবলিকানদের আপত্তিতেও সমঝোতার ইঙ্গিত দেন তিনি। তার এই ভাষণে আভ্যন্তরীণ নীতি প্রাধান্য পেলেও পররাষ্ট্রনীতির কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে আসে। আফগানিস্তানে মোতায়েন যুক্তরাষ্ট্রের ৬৬ হাজার সেনার মধ্যে ২০১৪ সালের প্রথমভাগে ৩৪ হাজার সেনা ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা ঘোষণা করেন তিনি। তবে ২০১৪ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সব সেনা প্রত্যাহারের পর আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি কেমন হবে তা নিয়ে তিনি কিছু বলেননি। উত্তর কোরিয়ার তৃতীয় পরমাণু বোমা পরীার প্রতিক্রিয়ায় মিত্ররাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে দৃঢ় বন্ধন ও যুক্তরাষ্ট্রের পেণাস্ত্র প্রতিরা পদ্ধতি জোরদার করার মাধ্যমে মোকাবিলা করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়া উত্তর কোরিয়ার হুমকী মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বিশ্ব সম্প্রদায় পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে বলেন তিনি।