অনলাইন ডেস্ক, জি নিউজঃ- ভারত-শাসিত কাশ্মীরে সেনাবাহিনী বরাবরই মন্ত্রী ও রাজনীতিকদের হাতে অর্থ তুলে দিয়ে এসেছে – দেশের এক প্রাক্তন সেনাপ্রধানের এই দাবিকে কেন্দ্র করে কাশ্মীর তথা ভারতের রাজনীতিতে তোলপাড় পড়ে গেছে। জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা আজ বলেছেন, এই মিথ্যা অভিযোগ তার সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে এবং তিনি চান অবিলম্বে এই অভিযোগের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হোক। তবে সেনাবাহিনী ও তাদের গোয়েন্দা শাখা যে কাশ্মীরে নানাভাবে দেদার অর্থ খরচ করে – সেই সত্যিটা কেউই প্রায় অস্বীকার করতে পারছেন না – আর কাশ্মীরে গণতন্ত্রের ভিতটা ভারত কীভাবে ধরে রেখেছে, সেই মৌলিক প্রশ্নটাও আবার নতুন করে সামনে চলে আসছে।ভারতে চাঞ্চল্যকর এই বিতর্কের সূত্রপাত দিনকয়েক আগে, যখন একটি সংবাদপত্রে খবর বেরোয় প্রাক্তন সেনাপ্রধান ভি কে সিং-য়ের নিজের হাতে গড়ে তোলা একটি সেনা গোয়েন্দা ইউনিট কাশ্মীরে মন্ত্রীদের নিয়মিত টাকাপয়সা যোগাতো, এমন কী তারা সরকার ফেলারও চেষ্টা করেছিল।”রাজ্যকে স্থিতিশীল রাখার জন্য ও নানা কর্মকাণ্ড চালানোর জন্য সেনাবাহিনী কাশ্মীরের সব মন্ত্রীকেই পয়সা দেয় – আর এই রেওয়াজ চালু আছে স্বাধীনতার পর থেকেই” ভি কে সিং, প্রাক্তন সেনাপ্রধান, ক্ষুব্ধ জেনারেল ভি কে সিং প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই এর প্রতিবাদ করেন এবং বলেন, এর মধ্যে নতুন কিছু নেই। তিনি বলেন, ‘রাজ্যকে স্থিতিশীল রাখার জন্য ও নানা কর্মকাণ্ড চালানোর জন্য সেনাবাহিনী কাশ্মীরের সব মন্ত্রীকেই পয়সা দেয় – আর এই রেওয়াজ চালু আছে স্বাধীনতার পর থেকেই। এমন কী মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা কাশ্মীরে যে ক্রিকেট লীগ চালু করেছেন, তারও অর্থ দিয়েছে সেনাবাহিনীই।’ পরবর্তী কয়েক দিনে জেনারেল সিং নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন – এই অর্থ দেওয়াটাকে ঘুষ বলা যাবে না কিছুতেই, কারণ এতে জঙ্গিবাদ দমনে কিংবা কাশ্মীরী তরুণদের বিচ্ছিন্নতাবাদ থেকে দূরে রাখতে সেনাবাহিনীরই সুবিধে হয়! কিন্তু যা-ই সাফাই আসুক, অর্থ দেওয়ার উদ্দেশ্য যাই বলা হোক – এই চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর কাশ্মীর তথা ভারতের গণতন্ত্র যে অস্বস্তিকর এক প্রশ্নের সামনে পড়েছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কেন্দ্রের মন্ত্রী তথা কাশ্মীরে ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা ফারুক আবদুল্লা ঘটনার তদন্ত দাবি করে বলেছেন, ভি কে সিং মন্ত্রীদের টাকা দিয়ে থাকলে অন্যায় করেছেন। শ্রীনগরে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী, আর কংগ্রেসের নেতা দিগ্বিজয় সিং প্রশ্ন তুলেছেন, জেনারেল সিং দায়িত্বে থাকার সময় এ সব বলেননি কেন, দেশের প্রাক্তন সেনাপ্রধানরাও অবশ্য অর্থ দেওয়ার কথা পুরোপুরি অস্বীকার করতে পারছেন না; তবে তারা বলছেন টাকাটা কাশ্মীরে কোনও ব্যক্তিকে নয়, দেওয়া হয়ে কোনও সংস্থাকে বা কোনও প্রকল্পের রূপায়নে। ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ অবশ্য নাকচ করে দিচ্ছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। যেমন, র-এর প্রাক্তন শীর্ষ কর্মকর্তা রানা ব্যানার্জি বিবিসিকে বলছিলেন ভি কে সিংয়ের বক্তব্য মোটেই ঠিক নয়। মি ব্যানার্জির মতে, যেহেতু ভি কে সিংয়ের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা আছে তাই তার বক্তব্যকে ঘিরে এমন জটিল ও গোলমেলে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।”জেনারেল সিং দায়িত্বে থাকার সময় এ সব বলেননি কেন?” ওমর আবদুল্লা, মুখ্যমন্ত্রী, জম্মু ও কাশ্মীর কিন্তু কাশ্মীরে রাজনীতিকদের টাকাপয়সা দেওয়ার কথা যুক্তিসঙ্গত নয় বলেই তিনি মনে করছেন। ভি কে সিংয়ের কথায় যুক্তি থাক বা না-থাক, ঘটনা হল যেদিন তার বিরুদ্ধে কাশ্মীরি মন্ত্রীদের ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ কাগজে বেরোয়, ঠিত তার আগের দিনই বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে একই জনসভায় হাজির হয়েছিলেন তিনি। সেই কারণেই কি না বলা মুশকিল, তবে বিজেপি গোটা বিতর্কে জেনারেলের পাশেই দাঁড়িয়েছে। দলীয় মুখপাত্র মুখতার আব্বাস নাকভি বলেছেন, ‘সেনা কর্মকর্তাদের ফাঁসানোর চেষ্টা হলে বা তাদের ঘিরে ষড়যন্ত্রের চক্রব্যূহ তৈরির চেষ্টা করা হলে এই সব তথ্য তো বেরিয়ে আসবেই – এবং সেটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।’ লক্ষণীয় যেটা, দেশের প্রধান বিরোধী দল বিজেপিও কিন্তু বলছে না – টাকাপয়সা দেওয়ার অভিযোগটা ভুল। আর এখানেই ভারতীয় গণতন্ত্রের অস্বস্তির জায়গাটা – জম্মু ও কাশ্মীরকে স্থিতিশীল রাখার জন্য সংবিধানবহির্ভূত পথেও যে রাজ্যের নেতা বা রাজনীতিকদের অর্থ দিতে হয়ে থাকে, গোটা বিতর্কের জেরে এই সন্দেহটা এখন প্রায় বদ্ধমূল হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি এই অভিযোগের কোনও তদন্ত হয় এবং তার রিপোর্ট যাই বলুক – তাতেও সেটা পাল্টানোর সম্ভাবনা কম! খবর বিবিসি বাংলার, বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর২০১৩