এর আগে দুপুরে আদালতে হাজির না হওয়ায় রাজধানীর বকশিবাজারে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে স্থাপিত তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদারের অস্থায়ী আদালত খালেদা জিয়াসহ তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলা দু’টিতে তাদের জামিনও বাতিল করে দেন আদালত। এরপর খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রত্যাহারের এবং সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য নতুন একটি তারিখ দেয়ার আবেদন জানান। আদালত শুনানি শেষে আবেদন খারিজ করে দেন।
এসময় বিচারক বলেন, “এ মামলার ৬৩ কার্যদিবসের মধ্যে খালেদা জিয়া সাত দিন উপস্থিত ছিলেন। তাই সবদিক বিবেচনা করে তার জামিন বাতিল করা হল।”
আদালতের এ আদেশের পর সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়ায় সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, “আদালতের এ রায় রাজনৈতিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমরা ন্যায়বিচার পায়নি। এ আদালতের ওপর আস্থা নেই বলে আমরা হাইকোর্টে আপিল করেছি। হাইকোর্টে মামলা পেন্ডিং থাকা অবস্থায় আদালত এ আদেশ দিতে পারেন না।” তিনি বলেন, ‘বিচারকের প্রতি আমাদের আগেও আস্থা ছিল না, এখনো নেই।
অপরদিকে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আদালতে হাজির না হওয়ায় আগামী ৪ মার্চ তারেক রহমানকে সশরীরে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়া দুই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ওই একই দিন (৪ মার্চ) ধার্য করা করা হয়।
এর আগে সকালে হরতাল-অবরোধে নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে আদালতে আসতে পারবেন না জানিয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ মুলতবি চেয়ে সময় ও এই মামলায় জামিন আবেদন করেন।
আবেদনে সানাউল্লাহ মিয়া উল্লেখ করেন, বেগম খালেদা জিয়া হরতাল-অবরোধে নিরাপত্তাজনিত কারণে আদালতে হাজিরা হতে পারেননি। এছাড়া বিচারক বদলি চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন থাকায় সাক্ষ্যগ্রহণ মুলতবি রাখার আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে সময় আবেদন নামঞ্জুর ও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন বিচারক আবু আহমেদ জমাদার। এই মামলায় অপর গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামিরা হলেন সলিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন আহমেদ।
চলতি বছরের ১৯ মার্চ খালেদা জিয়াসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুবেদ রায়।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় একটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এ মামলার অপর আসামীরা হলেন-খালেদার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
অপরদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় আরও একটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া অন্য আসামীরা হলেন- মাগুরার সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।