খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা নিয়ে সরকারের আগ্রহ নেই

অনলাইন ডেস্ক:- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ওপর হামলা পরিকল্পনার খবরে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা৷ তাঁদের কথায়, গণতন্ত্রের স্বাথেই নিরাপত্তা জোরদার করা উচিত৷ প্রশ্ন: আদৌ কি সেটা হচ্ছে?  বিদেশি সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ভারতে বসে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার ওপর হামলার পরিকল্পনা করছিল৷ ভারতীয় জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়ে এই খবর প্রকাশ করা হয়৷
শুধু তাই নয়, জঙ্গিরা বাংলাদেশে আরো অনেক রাজনৈতিক নেতা এবং স্থাপনায় ব্যপক হামলার পরিকল্পনা করেছিল বলেও খবর৷ তাদের উদ্দেশ্য ছিল, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক কঠামো ধ্বংস করা৷
চলতি মাসের শুরুতে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার খগড়াগড়ে একটি বাড়িতে বোমা বানাতে গিয়ে দু’জন জঙ্গি নিহত হওয়ার পর, ভারতীয় গোয়েন্দাদের তদন্তে এই সব তথ্য বেরিয়ে আসে৷ নিহত শাকিল আহমেদ এবং সোবহান মন্ডল বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবি’-র সদস্য এবং তারা বাংলাদেশের নাগরিক বলে দাবি করে ভারতের গোয়েন্দারা৷
ভারতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দারা জানান যে, তাঁরা বাংলাদেশে নাশকতার এই ষড়যন্ত্রের বিস্তারিত তথ্য বাংলাদেশকে জানাবেন৷ বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল অবশ্য বলেন, এ সব তথ্য বাংলাদেশ অনানুষ্ঠানিকভাবে জেনেছে৷ বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জঙ্গিদের বেশ কয়েকটি পরিকল্পনা ভন্ডুল করে দিয়েছে বলেও জানান তিনি৷ এছাড়া তাদের বেশ কিছু নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে৷ তিনি বলেন, বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য এবং বিভিন্ন স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে৷ এর সঙ্গে ভারত ‘অফিসিয়ালি’ কোনো তথ্য দিলে, সেগুলিও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হবে৷
গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং স্থাপনার ওপর হামলা পরিকল্পনার খবর আমাদের কাছেও রয়েছে৷ আর সে অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে৷ গত এক মাসে জেএমবি-র প্রধানসহ অন্তত ২৯ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷”
ভারতীয় গোয়েন্দাদের মতে, বাংলাদেশ থেকে অন্তত ১৮০ জন জঙ্গি ভারতে গিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে৷ বাংলাদেশের গোয়েন্দারা বলছেন, এখানে জঙ্গি বিরোধী অভিযান জোরদার হওয়ায় বেশ কিছু জঙ্গি ভারতে আশ্রয় নিয়েছে বলে তাঁদের কাছেও খবর আছে৷
তাঁরা বলেন, জামায়াতুল মুজাহিদিন জঙ্গি দলটি ভারতেও রয়েছে৷ ভারতে যে ৩৬টি নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের তালিকা এনআইএ তৈরি করেছে, তার ২৭ নম্বরে রয়েছে জেএমবি৷ আর বাংলাদেশে পাঁচটি নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের এক নম্বর হলো জেএমবি৷ এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সীমান্তে নিরাপত্তা এবং নজরদারি বাড়ানো হযেছে৷
ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দেভাল এরই মধ্যে বর্ধমানের বোমা বিস্ফোরণের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেছেন যে, এর পিছনে একটি শক্তিশালী জঙ্গি নেটওয়ার্ক জড়িত৷ তাঁর কথায়, এই জঙ্গিদের চিহ্নিত করতে ভারত-বাংলাদেশ যৌথভাবে কাজ করছে৷ এ পর্যন্ত বর্ধমানের ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷
বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহেদুল আনাম খান (অব.) ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার ওপর হামলার চেষ্টা বা পরিকল্পনা এই প্রথম নয়৷ এর আগেও এমনটা হয়েছে৷ তবে এবার ভারতীয় গোয়েন্দারা জানালেন যে শুধু শেখ হাসিনা নয়, খালেদা জিয়াসহ আরো রাজনৈতকি নেতাদের ওপরও হামলা পরিকল্পনা করছিল জঙ্গিরা, তাও আবার ভারতের মাটিতে বসে৷”
তিনি বলেন, ‘‘তাদের উদ্দশ্যে হলো বাংলাদেশে একটা অরাজকতা সৃষ্টি করে তার সুযোগ নেয়া৷”
শাহেদুল আনাম খান বলেন, ‘‘সরকারের উচিত হবে শুরুতেই জঙ্গিদের এই অপচেষ্টা রুখে দেয়া৷ এ জন্য সার্বিকভাবে দেশের নিারপত্তা জোরদার করার পাশাপাশি ব্যক্তি নিরাপত্তাও জোরদার করা প্রয়োজন৷ বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা খুবই জরুরি৷”
তাঁর কথায়, ‘‘জঙ্গিরা যেভাবে আন্তঃরাষ্ট্র নেটওয়ার্ক গড়ে তুলছে, তা খুবই আতঙ্কের৷ তাই জঙ্গি দমনে এখন একক নয় যৌথ উদ্যোগ প্রয়োজন৷”
ওদিকে বিএনপি-র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ভারতীয় গোয়েন্দারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিযার ওপর জঙ্গি হামলা পরিকল্পনার যে খবর দিয়েছে, তাতে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন৷ তবে এই খবর প্রকাশ হওয়ার পর খালেদা জিয়ার নিরাপত্তার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি৷ খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা নিয়ে সরকারের কোনো আগ্রহ নাই৷”
তিনি দাবি করেন, ‘‘দেশের মধ্যেই খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা এখন নানা দিক দিয়ে হুমকির মুখে৷ আর সরকার তাঁর নিরাপত্তার প্রশ্নটিকে আরো জটিল করে তুলছে৷”খবর:ডিডাব্লিউ, তাই শামসুজ্জামান দুদুর মতে, ‘‘দেশে যে অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চলছে, তাতেই দেশের নিরাপত্তা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে৷

Exit mobile version