তথ্য ডেস্কঃ- যতটা ভাবা হয়েছিল, মহাকাশ থেকে ছুটে আসা গ্রহাণুপিণ্ডের পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়ার ঝুঁকি তার চেয়ে অনেক বেশি বলে মনে করছে বি৬১২ ফাউন্ডেশন নামের একটি সংস্থাকম্প্রিহেনসিভ নিউক্লিয়ার টেস্ট ব্যান ট্রিটি অর্গানাইজেশন (সিটিবিটিও) প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষণ করে সংস্থাটি বলছে, ২০০০ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে অন্তত ২৬টি গ্রহাণু বা উল্কাপিণ্ড পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ঢুকে পড়েছে এবং এর মধ্যে কোনো কোনোটি ভূ-পৃষ্ঠেও আঘাত হেনেছে৷গতবছর ১৩ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার মধ্যাঞ্চলে চেলিয়াবিনস্ক এলাকায় উল্কাপাত হলে প্রচণ্ড শব্দে বহু বাড়ি-ঘরের জানালার কাচ ভেঙে যায়৷ কাচ আর ছিটকে আসা পাথরের টুকরোর আঘাতে আহত হন প্রায় এক হাজার মানুষ৷ রাশিয়ার সেই উল্কাটির ব্যাস ছিল ১৫ মিটার; ওজন ১০ টনের কিছু বেশি৷ যে শক্তি নিয়ে সেটি ভূপৃষ্ঠে আঘাত করেছিল, তা হিরোশিমায় বিস্ফোরিত আণবিক বোমার বিশটির সমান৷সাবেক মহাকাশচারী ও ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক বি৬১২ ফাউন্ডেশনের প্রধান এড লু বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষের মধ্যে খুব চালু একটা ধারণা হলো – পৃথিবীতে উল্কা বা গ্রহাণু আছড়ে পড়ার ঘটনা খুবই বিরল৷ কিন্তু এই ধারণা মোটেও ঠিক নয়৷”এ বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে বি৬১২ একটি ভিডিও প্রেজেন্টেশন প্রকাশ করেছে, যাতে উল্কাপাতের ঘটনা এবং এর প্রভাব সম্পর্কে বলা হয়েছে৷ এড লু গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, একটি ফুটবল মাঠের অর্ধেক আকৃতির একখণ্ড উল্কা পুরো একটি শহর ধ্বংস করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে৷ ‘‘একবার কল্পনা করুন – বড় একটা অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং শব্দের চেয়ে ৫০ গুন বেশি গতিতে (ঘণ্টায় ৩৮০০০ মাইল) ছুটে আসছে আমাদের দিকে…৷”যুক্তরাষ্ট্রর মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা ইতোমধ্যে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে, যাতে পৃথিবীর আশপাশ দিয়ে ছুটে চলা ০.৬৫ মাইল বা তার বেশি ব্যাসের সব গ্রহাণুর গতিপথে নজর রাখা যায়৷ ওই মাপের একটি গ্রহাণু আকৃতিতে ছোটখাট একটি পর্বতের সমান৷ আর সংঘর্ষ ঘটলে পুরো পৃথিবীতেই এর বড় ধরনের বিরূপ প্রভাব পড়বে৷ আনুমানিক সাড়ে ৬ কোটি বছর আগে ৬ মাইল ব্যাসের একটি গ্রহাণু আছড়ে পড়লে পৃথিবীর জলবায়ুতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে৷ ধারণা করা হয়, ডাইনোসর ও পৃথিবীর অধিকাংশ প্রাণী সে সময় বিলুপ্ত হয়েছিল৷ লু বলেন, ‘‘চেলিয়াবিনস্কের ঘটনা আমাদের দেখিয়েছে, মাত্র ২০ মিটার ব্যাসের একখণ্ড উল্কাও কতো বড় বিপদ ঘটাতে পারে৷”বিজ্ঞানীরা এতদিন বলে এসেছেন, পুরো শহর ধ্বংস হয়ে যেতে পারে – এমন উল্কাপাতের সম্ভাবনা ১০০ বছরে একবার৷ তবে এই ধারণার পেছনে শক্তপোক্ত কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই বলেই লু-র মন্তব্য৷ যেসব গ্রহাণু পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসতে পারে।এ প্রতিবেদনটি ডি ডাব্লিউ এর সেগুলোর গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য বেসরকারি উদ্যোগে ২৫ কোটি ডলারের একটি ইনফ্রারেড স্পেস টেলিস্কোপ বসাচ্ছে বি৬১২, যেটি ২০১৮ সাল নাগাদ চালু করা সম্ভব হতে পারে৷গ্রহাণু নিয়ে ভিডিও প্রেজেন্টেশনটিও এ সংস্থার ওয়েবসাইটে দেখা যাবে৷