ঘুর্ণিঝড় সিত্রাং সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে কৃষকদের

ঘুর্ণিঝড়ের পর আমন ধানের জমিতে পানি

অনলাইন ডেস্কঃ- ঘুর্ণিঝড় সিত্রাং নিয়ে এবার ব্যাপক আতংক তৈরি হয়েছিল বঙ্গোপসাগরের পাড়ে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার গ্রামগুলের মানুষের মাঝে ।
ঘুর্ণিঝড়ের প্রভাবে সোমবার সারাদিন ব্যাপক বৃষ্টি হয়, তবে সন্ধ্যার পর সেই বৃষ্টি থেমে যায়। আর পরদিন মঙ্গলবার ঐ এলাকায় ছিল ঝকঝকে রোদ।
তবে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে এবং অতিবৃষ্টিতে সাগরপাড়ের গ্রামগুলোর কৃষকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কারণ তাদের বছরের একমাত্র ফসল আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ।
এই পরিস্থিতি অনিশ্চয়তায় ফেলে দিয়েছে কৃষকদের।বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ ফসলের ক্ষেত পানির নিচে
বঙ্গোপসাগরের কাছে কলাপাড়ার প্রত্যন্ত একটি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, আমন ধানের বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠ পানিতে তলিয়ে গেছে।
গ্রামটিকে রক্ষার জন্য সাগরের ধার দিয়ে বেড়িবাঁধ রয়েছে। কিন্তু তাতে রক্ষা পায়নি ফসলের মাঠ।
প্রত্যন্ত গ্রামটির একজন কৃষক আবুল বাশার হাওলাদার ছয় বিঘা জমিতে আমন ধানের আবাদ করেছেন। তার পুরো আবাদই পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া তার দুই বিঘা জমিতে টমেটোসহ বিভিন্ন ধরনের সবজির পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে।ঝড়ে নষ্ট হয়ে যাওয়া সবজির ক্ষেত
মি: হাওলাদার বলেছেন, “সোমবার একদিনেই রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে। আমার জমিতে আমন ধান যখন বের হচ্ছে, তখন পানিতে তলিয়ে যাওয়ার ফলে এগুলো চিটা হয়ে যাবে। মানে তাতে চাল হবে না।
“এই আমন আবাদ নষ্ট হয়ে যাবে। আমি এখন নিরুপায়,” – বলেন কৃষক আবুল বাশার হাওলাদার।
ফসলের অনেক ক্ষতি হয়েছে
সাগরের পাড়ে বসবাস এবং অতীত অভিজ্ঞতা থেকে ৫৫ বছর বয়সী হাসিনা বেগম ধারণা করেছিলেন, এবারের ঘূর্ণিঝড় বেশি শক্তিশালী হবে না। সেজন্য তিনি বাড়ি থেকে তিন কিলোমিটার দূরের আশ্রয় আশ্রয়কেন্দ্রে যাননি।
বাড়িতে টিনের বেড়া এবং টিনের ছাউনি দেয়া কয়েকটি ঘরের একটিতে হাসিনা বেগম তার নাতি-নাতনিসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অবস্থান করেছিলেন ঝড়ের সময়।
তিনি বলেন, “আমাদের এলাকায় এবারের ঝড়ে কোনো মানুষ মারা যায়নি। কিন্তু জমির ফসলের অনেক ক্ষতি হয়েছে।”
আমন ধান এবং সবজির আবাদে সাগরপাড়ের গ্রামগুলোতে মাঠের পর মাঠ যখন সবুজ হয়ে উঠেছিল, ঠিক সে সময় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে অতিবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হলেন কৃষকরা।
কলাপাড়া উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা এ আর এম সাইফুল্লাহ জানিয়েছেন, “উপজেলাটিতে কিছু জমিতে আমন ধান পাকার আগের অবস্থায় রয়েছে। কিছু আছে গাছে ধান বেরুনোর অপেক্ষায়, আর কিছু জমিতে ধানের ফুল এসেছে।ঝড়ে উপড়ে যাওয়া গাছ
“আমনের ফুল এসেছে, এমন ফসল কিছু অতিবৃষ্টিতে নষ্ট হয়েছে। এরসাথে কিছু শাকসবজির ক্ষতির আশঙ্কা আমরা করছি,” – বলেন কৃষি কর্মকর্তা এ আর এম সাইফুল্লাহ।
ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে মাছচাষীদেরও
মাছেরও ক্ষতি হয়েছে অনেক। কলাপাড়ার দু’টি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি পরিবারই জমিতে আবাদের পাশাপাশি ছোট ছোট পুকুরে মাছ চাষ করে থাকেন।
এমন একজন মাছ চাষী আল-আমীন হাওলাদার পাঁচটি পুকুরে মাছ চাষ করেছিলেন। তিনি রুই-কাতলা থেকে শুরু করে মাগুরসহ বিভিন্ন ধরনের মাছ চাষ করেছিলেন তার পুকুরগুলোতে।
কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে একদিনের বৃষ্টিতে তার তিনটি পুকুরের সব মাছ ভেসে গেছে। আর দু’টি পুকুরেরও কিছু মাছ বেরিয়ে গেছে।
আল-আমীন হাওলাদার বলেছেন, এই মাছ চাষ করেই তিনি সংসারের চালাচ্ছেন পাঁচ বছর ধরে। এখন চাষের মাছ ভেসে যাওয়ায় তিনি অসহায় হয়ে পড়েছেন।
কলাপাড়াসহ পটুয়াখালী অঞ্চলের মানুষ বছরে একটিমাত্র ধানের আবাদ করে থাকেন। আমন ছাড়া বোরো বা অন্য কোন ধান তাদের এলাকায় হয় না। এই আমন ধানই তাদের সারাবছরের চালের চাহিদা মেটায়। বিবিসি বাংলা। এখন সেই ফসলের ক্ষতি হওয়ায় সামনের বছর চালের চাহিদা কীভাবে মেটানো যাবে, সেই দুশ্চিন্তা তাড়া করছে সাগরের পাড়ের কৃষকদের।

Exit mobile version