মাল্টি-রেজিস্টেন্ট ব্যাকটেরিয়া অত্যন্ত মারাত্মক হতে পারে৷ তার মোকাবিলায় নতুন যে হাতিয়ার তৈরি হয়েছে, সেটি দেখতে তেমন শক্তিশালী না হলেও মোক্ষম কাজ দেয়৷ রেগেন্সবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নতুন এই প্রতিষেধক তৈরি করা হয়েছে৷ ভল্ফগাং বয়েমলার-এর নেতৃত্বে এক গবেষক-দল আসলে এমন এক জীবাণু-নাশকের খোঁজ করছিলেন, যা সহজে জীবাণু ধ্বংস করতে পারে৷ বয়েমলার বলেন, ‘‘অসংখ্য মানুষের হাত পড়ে এবং সে কারণে সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি – এমন সারফেসকে যতটা সম্ভব নিরাপদ করে তুলতে আমরা অবদান রাখতে চাই৷ শুধু শিল্পোন্নত বিশ্বে নয়, উন্নয়নশীল দেশেও সেটা যেন সম্ভব হয়৷
নতুন এই পদার্থ আসলে এক পেন্ট বা রং৷ রংয়েরই উপাদান হিসেবে বহু বছর ধরে সেটি যে কোনো সারফেস জীবাণুমুক্ত রাখবে৷ তবে খালি চোখে তা দেখা যাবে না৷ তবে তার প্রভাব টের পাওয়া যাবে৷ গবেষকরা বড় আকারে তার রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া দেখালেন৷ একটি খালি বোতলের তলদেশে রং রাখা হয়েছে৷ একমাত্র তার উপর আলো পড়লে প্রতিক্রিয়া দেখা যায়৷ বাতাস থেকে অক্সিজেন শুষে নিয়ে তা বাড়তি শক্তি পায়৷ অক্সিজেনের এই ধাক্কা বুদবুদের মতো উপর দিকে উঠে আসে এবং জীবাণুর মোকাবিলা করে৷
জীবাণুর সারফেস-এর নেগেটিভ চার্জ থাকে৷ আর এই বিশেষ রংয়ের চার্জ হয় পজিটিভ৷ ফলে এই রং জীবাণু আকর্ষণ করে৷ রংয়ের উপর আলো পড়লে অতি-প্রতিক্রিয়াশীল অক্সিজেন জীবাণু ধ্বংস করে৷ গবেষকরা প্রায় দু’বছর ধরে এই প্রক্রিয়া তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন৷ বয়েমলার বলেন, প্রথমদিকে এই সারফেসের উপর উজ্জ্বল সার্চলাইটের আলো নিক্ষেপ করা হতো, যাতে জীবাণুমুক্ত করার প্রক্রিয়া আরও জোরালো হতে পারে৷ শেষে সাধারণ আলোই যথেষ্ট হয়ে উঠলো৷ সেটা ছিল উল্লেখযোগ্য এক মুহূর্ত, যখন সাধারণ একটি ঘরে সাধারণ আলোর নীচে গোটা প্রক্রিয়া সম্ভব হলো৷ এই প্রযুক্তি বিনা জটিলতায় যে কোনো জায়গায় প্রয়োগের পথ খুলে গেলো৷
হাতেনাতে এই প্রক্রিয়ার উপযোগিতা দেখাতে গবেষকরা এই বিশেষ রং স্প্রে করার এক তরলের সঙ্গে মিশিয়েছেন৷ তা দিয়ে হাসপাতালের মারাত্মক এমআরএসএ জীবাণুও কাবু করা যায়৷ পরীক্ষায় দেখা গেলো, আলোকপাতের পর হাতে-গোনা কয়েকটি জীবাণু অবশিষ্ট রয়েছে৷ শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাই তা কাবু করতে সক্ষম৷
যে সারফেসে এই রং ব্যবহার করা হয়নি, সেখানে জীবাণু রয়ে গেছে৷ প্রশ্ন হলো, ডানদিকে কত জীবাণু রয়ে গেছে৷ এর উত্তর, মোটামুটি সাতটি জীবাণু অবশিষ্ট রয়েছে৷ তবে সবার শেষে মাত্র চারটি থেকে গেছে৷ খবর:ডিডাব্লিউ, নতুন এই প্রক্রিয়ার জন্য এখনো স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্তৃপক্ষের অনুমোদন বাকি রয়েছে৷ গবেষকদের আশা, এরপর সব হাসপাতালেই এর প্রয়োগ শুরু হবে৷