মুহাম্মদ আবু হেলাল, ঝিনাইগাতীঃ- যান্ত্রীক এই সভ্যতার যুগে শেরপুরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতীতে এখনও ঐতিহ্যবাহী ঘোড়ার গাড়ী চোখে পড়ে। ঝিনাইগাতীর বিভিন্ন হাট-বাজার, রাস্তায় প্রতিদিন ঘোড়ার গাড়ী চোখে পড়ে। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে অথবা পাহাড়ী এলাকা থেকে শহর গ্রামে-গঞ্জে ধান,চাল ,কাঠ ও বিভিন্ন মালামাল আনা নেওয়া করা হয় ঘোড়ার গাড়ীতে । উপজেলার তাওয়া কুঁচা, গুরুচরণ দুধনই, ভারুয়া, জারুলতলা, ফাকড়াবাদ, কুচাইকুড়া, হলদীগ্রাম, ইত্যাদি গ্রামে এখন প্রায় দুই শতাধিক পরিবার ঘোড়ার গাড়ী চালিয়ে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই জীবিকা নির্বাহ করছে। ঘোড়ার গাড়ী গ্রামীন কাঁচা রাস্তায় তো বটেই শহরে পিচ ঢালা রাজপথেও দেখা যায়। পাহাড় থেকে কাঠের ভাড়া নিয়ে আসা বেশ কজন ঘোড়ার গাড়ী ওয়ালা জানান, তারা ৮/১০ বছর যাবৎ ঘোড়ার গাড়ী চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। অনেকের বাপ-দাদারও ছিল ঘোড়ার গাড়ী তাই বংশানুক্রমিক ভাবেই তারা গাড়ীয়াল। প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ শত টাকা পর্যন্ত রোজগার হয়। ঘোড়ার পিছনে খাদ্য বাবদ খরচ হয় ৭০/৮০ টাকা । বাদ বাকি টাকা আয় থাকে। খৈল ও নালী ঘোড়ার প্রধান খাদ্য। ঘোড়া গাড়ীর মালিকরা জানান, রিক্সা, ভ্যান বা ঠেলা গাড়ী চালালে ঘোড়ার গাড়ীর চেয়ে কষ্ট বেশী হয় । আর রোজগারও হয় কম। কিন্তু ঘোড়ার গাড়ীতে কম কষ্টে আয় হয় বেশী । তাই তারা বাপ -দাদার এই পেশাকে টিকিয়ে রেখেছে। এছাড়া একটি সবল ঘোড়া ১২-১৫ মন ওজন বহন করে নিতে সক্ষম। গ্রাম বাংলার সেই প্রাচীন কাল থেকে ঘোড়া ও ঘোড়ার গাড়ীর প্রচলন রয়েছে । আগেরকার আমলে রাজা-বাদশারা ঘোড়ার গাড়ীতে চলাচল করতেন। নববধূকে নিয়ে বর বসে থাকতো ঘোড়ার গাড়ীতে, নতুন বউ লজ্জায় পুরো একহাত ঘোমটা টেনে বসত। দৃশ্যটির কথা মনে পড়লে যে কোন ভাবুক মনকে আন্দোলিত করে তুলে। সাধারণ মানুষ বিভিন্ন স্থানে যাতায়তের জন্য সহজ ও ¯^ল্প ব্যয়ে ঘোড়া গাড়ী ব্যবহার করতো। কিন্তু সত্তর দশকের পর থেকে উপজেলায় ঘোড়ার গাড়ীর সংখ্যা কমতে শুরু করে। মানুষ ঘোড়ার গাড়ীর পরিবর্তে রিক্সা, ভ্যানে চলাচল শুরু করে। ঘোড়ার গাড়ীওয়ালারা ঠিকমত ভাড়া না পেয়ে ঘোড়ার গাড়ী বিক্রি করে দিতে থাকে । এর পর আবার উপজেলা সদরের সাথে গ্রামীন সড়ক গুলোর প্রায় সব কাঁচা রাস্তাই পাঁকা হলে পাকা রাস্তায় শুরু হলো বাস, ট্রাক, টেম্পু সহ আধুনিক যানবাহন গুলোর চলাচল। ফলে ঘোড়ার গাড়ীর সংখ্যা কমতে শুরু করলো আর এক দফা । তবে নব্বই দশকের পরে আবার ঘোড়ার গাড়ীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেয়ে আসছে। বর্তমানে আধুনিক যানবাহন গুলোর সংগে প্রতিযোগীতায় এখনো গ্রামাঞ্চলে প্রায় দুই শতাধিক ঘোড়ার গাড়ী টিকে রয়েছে। মালপত্র আনা নেওযাসহ নানাবিধ কাজে ব্যবহার করছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঘোড়ার গাড়ী ।