-মোঃ মঞ্জুর হোসেন ঈসা
১৯শে মার্চ ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলকে ঘিরে বিএনপির তৃনমূল থেকে শুরু করে শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত নিজেদের অবস্থান ধরে রাখার জন্য বেশী ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফলে বিএনপি এখন চুড়ান্ত আন্দোলন থেকে অনেক পিছনে অবস্থান করছে। নতুন প্রজন্মের ব্যানারে শাহবাগ চত্তর সহ বাংলদেশের প্রতিটি জেলায় প্রজন্মের যে তারুন্য সৃষ্টি হয়েছে সেই তারুন্যের মূল নেতৃত্ব চলে গেছে ছাত্রলীগ আর বাম রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃত্বে। আর যে সমস্ত ব্লগাররা এই আন্দোলনের সূচনা করেছিলো্ তারা এখন নিয়মিত টিস্যু পেপারের মত নিজের অজান্তেই ব্যবহার হচ্ছে। আর পুরো ফায়দা লুটে নিচ্ছে মহাজোট সরকার।
সরকারের গত চার বছরের সীমাহীন ব্যার্থতা, চর দখল থেকে শুরু করে হল দখল, ডেসটিনি থেকে শুরু করে হলমার্ক এর হাজার হাজার কোটি টাকা লুট, শেয়ার বাজার থেকে কোটি কোটি টাকা লুট, গুম খুন ধর্ষনের মহামারির ঘটনাকে আড়াল করার জন্যই প্রজন্ম চত্তরকে সরকার এখন আগামীতে নিজেদের ক্ষমতাকে পাকা পোক্ত করার জন্য রাষ্ট্রীয় পৃস্ঠপোষকতায় ধরে রেখেছে।
প্রজন্ম চত্তরে বিভিন্ন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, যারা এই চত্বরে মূল নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা সকলেই বর্তমান সরকারের ছাত্রলীগ সহ বিভিন্ন সংগঠনের গুরুত্বপূর্ন পদ দখল করে আছেন। এছাড়াও যে সমস্ত ব্লগাররা এর নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব করছেন তারাও বিগত দিনে আওয়ামী ও বাম ঘরানার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। এমনকি তাদের ব্লগে দেখা যায় এখনো তাদের প্রতিটি লেখা ও চেতনায় মধ্য দিয়ে আওয়ামী ও বাম ঘরানার বহিঃপ্রকাশ। ইসলাম তথা নির্দ্দিষ্ট একটি ধর্ম বিরোধী এই ব্লগারদের সংগঠনটি দেশী বিদেশী পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে অনেকটা পেইড ব্লগারদের মতো নির্দ্দিষ্টা এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে যদি কখনো কোন সাধারণ ব্লগাররা ঢুকে পড়ে তখন তার বিরুদ্ধেও পরিকল্পিত ভাবে নানা মুখী আক্রমন করে তাকে নিক্রিয় তথা একঘরে করে ফেলে।
এমন অবস্থায় যে দলটির সবচেয়ে বেশী ভূমিকায় থাকার কথা সেই দলের ৬ষ্ঠ কাউন্সিল আগামী ১৯শে মার্চ্। নিজেদের আন্দোলনকে কৌশলগত কারনে বন্ধ করেদিয়ে কাউন্সিলের দিকে ক্রমান্বয়ে দলের নেতাকর্মীরা নিজেদেরকে সরব রাখছে। প্রতিদিন সকালে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের বাস ভবনে বাড়তি নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ও আনাগোনা বেড়ে গেছে। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ন পদে যারা রয়েছে, তাদের কাছেও তৃনমূল নেতাকর্মীরা ধর্না দিচ্ছে যাতে আগামী কাউন্সিলে নিজেদের অবস্থান টুকু থাকে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাই পাওয়ার জন্য চেয়ারপার্সন ও মহাসচিব বরাবর নেতাকর্মীরা আবেদন করে বিএনপির স্থায়ী কমিটি, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য সহ গুরুত্বপূর্ন নেতাদের সুপারিশের আশায় বিভিন্ন চেষ্টা তদবির চালিয়ে যাচ্ছে।
কয়েকটি সহযোগী সংগঠনও দলগতভাবে গঠনতন্ত্রে সম্পৃক্ত হওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে কেউ কেউ দলগতভাবে আবেদন নিবেদন করছে। ফলে দেখা যাচ্ছে আন্দোলন এখন কাউন্সিল মুখী হয়ে গেছে। গত ১৭ই ফেব্রুয়ারী রবিবার বিএনপির ঢাকা মহানগরের উদ্যোগে একক সমাবেশে বিভন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বাড়তি উপস্থিতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পরিবর্তে নিজেদের নামের শ্লোগান প্রমান করে বিএনপি আন্দোলন থেকে এখন অনেক দূরে রয়েছে। কিছুদিন আগেও বিএনপির অনেক শীর্ষ নেতারা নিজেদের ক্ষমতায় যাওয়ার চুড়ান্ত স্বপ্ন দেখে কে কোন মন্ত্রনালয় পাবে সেই আশায় নতুন দিন গুনছিলো। সবকিছু ঠিকঠাক ভাবেই চলছিলো। চলমান শাহবাগ চত্বরের নতুন প্রজন্মের আন্দোলন এখন অনেক কিছু উলট পালট করে দিয়েছে। দেশ ক্রমান্বয়ে গভীর সংকটের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এখন দেশটা কে চালাচ্ছে এই প্রশ্নটা বার বার ঘুরে ফিরে প্রকাশ্যে উঠে আসছে। কারন শাহবাগ চত্বরথেকে যে ঘোষনা দেয়া হয় কিছুক্ষনের মধ্যেই সেই ঘোষনার প্রতি সমর্থন জানান প্রধানমন্ত্রী সহ বর্তমান সরকারের মন্ত্রী পরিষদ সহ মহাজোটের সকল নেতৃবৃন্দ।
অথচ শাহবাগ চত্বরে যখন আন্দোলনের সূচনা করেছিলো তখন তারা শুধুমাত্র কাদের মোল্লার ফাসির দাবী করেছিলো। এখন তারা সেখানথেকে বের হয়ে এসে নতুন নতুন আন্দোলনের কমূসূচী জাতির উপর চাপিয়ে দিচ্ছে আর রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সারা দেশে সেই আন্দোলনের কর্মসূচী পালিত হচ্ছে। কেউ যদি এই আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত না হয় তখন তাকে লাঞ্চিত হওয়ার ঘটনাও গনমাধ্যমে উঠে আসে। সবচেয়ে বেশী আশংকার কথা হচ্ছে যে কোমলমতি শিশু কিশোররা বর্তমান এই আন্দোলনের ঝড়ে নিজেদেরকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তা তারা নিজেরাও জানে না।
ফেইজবুকের এক ষ্ট্যাটাসে দেখতে পেলাম দুই তিন বছরের এক শিশু তার মাকে বলছে, “মা, আমি ফাসি খাবো”। এভাবে বিভিন্ন শব্দ জাতির সামনে এমনভাবে উচ্চারিত হচ্ছে যাতে মনে হয় আইনের শাষন বলতে দেশে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। এত কিছুর পরেও এখনো বাংলাদেশের সবচেয়ে বৃহত রাজনৈতকি দল যারা এদেশের সবচেয়ে বেশী ক্ষমতায় ছিলো সেই দল সবঘটনার অনেকটা বোবা দর্শক হিসেবেই নিজেদেরকে উপস্থাপন করছে। যারা জামায়াত-শিবিরের নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলন করছে তারা ইতিমধ্যে অনেকাংশেই সফলকাম হয়েছে। কারন ইতিমধ্যে তাদের আন্দোলনের ফলে জাতীয় সংসদে নতুন আইন পাশ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারী দলের শীর্ষ নেতারা বিচার বিভাগের এই রায়কে পাল্টে দেয়ার মত ইঙ্গিত দিচ্ছেন। যার ফলে দেশে একটি অস্থিরতা বিরাজ করছে।
ব্লগার আহম্মেদ রাজিব হায়দার শোভন নৃশংস নির্মমভাবে খুন হওয়ার পর তার ব্লগের প্রতি সবার আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছিলো। সেই আগ্রহ থেকে যখন তার বিভিন্ন সাইটে নিজের লেখাগুলো সাধারণ মানুষ পড়েছে অনেকেই কিংকর্তব্য বিমূড় হয়ে গেছে। ইসলাম ও নবী করিম (সাঃ) কে নিয়ে অবমাননা করে ব্লগে রাজিবের কুরুচিপূর্ন লেখা জাতিকে ভাবিয়ে তুলেছে অন্যান্য ব্লগাররা আসলে কোন পথে হাটছে। ইতিমধ্যে তার হত্যাকান্ডের ১৫ মিনিটের মধ্যে এই হত্যাকান্ডের দায়ভার জামায়ত-শিবির এর উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। ৫জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান সহ তার ঘনিষ্ঠ দুজন বন্ধু বান্ধবিকেও গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। যেখানে একবছরের অধিক সময় পার হওয়ার পরেও সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির হত্যাকারীদের সঠিত তথ্য আজো পুলিশ, র্যা ব বের করতে পারেনি, এম ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমের গুমের রহস্য উদঘাটন করতে পারে নি সেখানে মাত্র ১৫ মিনিটের মাথায় খুনের দায়ভার একটি নিদ্দিষ্ট দলের উপর চাপিয়ে দিয়ে তারা জাতিকে যে নতুন ম্যাসেজ দিয়েছে সে বিষয়েও এখন ভাববার সময় এসেছে।
যেখানথেকে শুরু করেছিলাম আগামী ১৯শে মার্চ বিএনপির কাউন্সিল। হয়তো এই কাউন্সিলেও পরিক্ষীত বিএনপির তৃনমূল পর্যায়ের নেতাকমীদের ঠাই হবে না। কারন অতীত ইতিহাস একথাই বলে। যারা দলের সাথে বার বার বিশ্বাসঘাতকতা করেছে দলের নিয়ম শৃঙ্খলার বাইরে গিয়ে নিজেদের মত করে চিন্তা করেছে দলকে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ করেছে তারাই সবসময় বড় বড় চেয়ার ও পদগুলো দখল করেছে।
ঢাকায় একটা প্রবাদ আছে, কোন থানায় ওসির পোষ্টিং পেতে হলে মোটা অংকের উৎকোচ দিতে হয়। বেচারা যখন মোটা অংকের উৎকোচ দিয়ে এই পদটিতে বসেন তখন তার কাছে আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রনের চেয়ে উৎকোচের অর্থ উদ্ধার করাটাই বেশী গুরুত্বপূর্ন মনে হয়। আর এই কারনেরই ঢাকার আইনশৃঙ্খলা অন্যান্য জেলার চেয়ে বেশী নাজুক অবস্থায় থাকে।
তেমনি ৫ম কাউন্সিলে বিভিন্ন গণমাধ্যমথেকে জানা গিয়েছিলো কেউ কেউ বড় অংকের উৎকোচ দিয়ে বিএনপির নির্বহী কমিটি সহ সম্পাদকীয় মন্ডলীতে আসন করে নিয়েছে। গত ৩ বছরে রাজপথে সেই সম্পাদকীয় মন্ডলীর অনেক সদস্য ও নির্বাহী কমিটির অনেক সদস্যকে আন্দোলন সংগ্রামে বাটি চালান দিয়ে, অনুবিক্ষন যন্ত্রদিয়েও খুজে পাওয়া যায়নি।
আমরা আশা করবো এবারে আপোষহীন নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে এমন কোন নেতা নির্বাচন করবেন না যারা কালো টাকা নিয়ে বসে আছে আগামী সংসদ সদস্য কিংবা মন্ত্রীত্বের আশায়। যারা দলের প্রতি কমিটমেন্ট এবং দলের নেতা কর্মীর প্রতি কমিটমেন্ট সর্বপরি দেশের প্রতি কমিটমেন্ট তাদেকে দিয়েই যদি ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল সাজানো হয় তাহলে আমরা বিশ্বাস করি আন্দোলনের নামে বিরোধী শিবির আর কানা মাছি খেলতে পারবে না।
একটি সুন্দর সোনালী অধ্যায়ের অপেক্ষায় চেয়ে আছি মাননীয় বিরোধী দলীয় নেতা বিএনপির চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেখম খালেদা জিয়া এবং তারুন্যের অহংকার বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দিকে।
সম্পাদনা/নূরনবী আহমেদ /১২.০২ঘ /১৮ ফেব্রয়ারি