অনলাইন ডেস্ক ঃ- সারা জীবন আপনি কি একটা বাংকারের ভিতর কাটাতে পারবেন? পারবেন কি পরিবার-পরিজনকে ছেড়ে বহু দূরে বহু বছর কাটিয়ে দিতে? কিংবা ফেরা যাবে না এমন পথে যাত্রা করতে? মঙ্গলগ্রহে বসবাসে আগ্রহীরা কিন্তু এসব মেনে নিয়েই আবেদন করেছেন৷ মঙ্গলগ্রহে বসবাসের স্বপ্ন দেখে মানুষ৷ সেই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে ডাচ কোম্পানি ‘মার্স ওয়ান’ মঙ্গলে বসতি স্থাপন করবে৷ এ প্রতিবেদনটি ডি ডাব্লিউএর তবে মঙ্গল যাত্রা হবে একমুখী৷ ফিরে আসার কোনো উপায় থাকবে না৷ জার্মান ফ্লাইট প্রশিক্ষক স্টেফেন গ্যুন্টার এমন যাত্রার জন্য আবেদন করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘মহাকাশ সবসময় আমাকে আকর্ষণ করেছে৷ আমি সমসময় মহাকাশ ভ্রমণের সুযোগ খুঁজেছি৷ এটা এখন বলে বোঝানো কিংবা হিসেব কষে দেখানো সম্ভব নয়৷ আগ্রহটা আমার ভেতরেই রয়েছে যা আমাকে মহাকাশের দিকে টানছে৷ দশ বছর পর মঙ্গল যাত্রা শুরু হবে – সারা জীবন ধরে যে যাত্রার স্বপ্ন দেখেছেন গ্যুন্টার৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার সর্বনিম্ন লক্ষ্য ছিল পৃথিবীর কক্ষপথ অবধি যাওয়া, আর লক্ষ্য ছিল চাঁদ৷ ২০১২ সাল পর্যন্ত ব্যাপারটা এমনই ছিল৷ কিন্তু এখন আমার লক্ষ্য মঙ্গলে যাত্রা৷ আমি এই যাত্রার জন্য প্রস্তুত৷ আমি মনে করি এতে আমার জীবন পূর্ণতা পাবে৷কারিগরি শিক্ষা, বিমান চালনার মার্কিন লাইসেন্স, মহাকাশ বিষয়ক অ্যাপ তৈরিসহ মহাকাশে যাত্রার জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন বিষয়গুলি রপ্ত করেছেন গ্যুন্টার৷ অন্তত তিনি নিজে এমনটা মনে করেন৷ স্বপ্ন বাস্তবায়নে শারীরিকভাবেও নিজেকে ফিট রাখছেন তিনি৷ ইতোমধ্যে ১৪ কেজি ওজন কমিয়েছেন৷ তবে প্রতিযোগিতা সহজ হবে না৷ কারণ, দু’লাখের বেশি মানুষ যে মঙ্গলের উদ্দেশ্যে যাত্রায় অংশ নিতে আবেদন করেছেন৷ গ্যুন্টারের এই একমুখী মঙ্গল যাত্রায় শরিক হওয়ার আবেদনের কথা শুনে তাঁর স্ত্রী বিয়াটে ভিডেন প্রথমে কষ্ট পেয়েছিলেন৷ তিনি বলনে, ‘‘সে যখন প্রথম আমাকে জানিয়েছিল বা আমি বুঝেছিলাম যে, এটা একমুখী যাত্রা, অর্থাৎ মঙ্গলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়ার পর বা সেখানে পৌঁছানোর পর পৃথিবীতে আর ফিরে আসা যাবে না – তখন স্বাভাবিকভাবেই আমি প্রচণ্ড ভয় পেয়েছি৷ কারণ আমরা পৃথিবীতে ভালো আছি, এখানে সবকিছু ঠিকভাবে চলছে৷ তা সত্ত্বেও সে কেনো একমুখী যাত্রার এই প্রকল্পে অংশ নেবে৷” রুপার্ট বলেন, ‘‘প্রথমত আমি মনে করি, বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে এটি একটি অবাস্তব প্রকল্প৷ দ্বিতীয়ত, আমার মতে, এটি একটি আত্মঘাতী মিশন৷ সবসময় একটি ছোট্ট বাংকারে আবদ্ধ পরিবেশে বসবাস সম্ভব নয়৷ অন্তত আমি মনে করি, এভাবে কয়েক বছর হয়ত থাকা যেতে পারে৷ কিন্তু সারা জীবন বাংকারে বসবাস অবাস্তব ব্যাপার৷ নীতিগতভাবে মঙ্গলে বৈজ্ঞানিক অভিযান খুবই রোমাঞ্চকর৷ কিন্তু জেনেশুনে মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া অনৈতিক৷” ‘মার্স ওয়ান’-এর একমুখী মঙ্গল যাত্রা নিয়ে মূল সমালোচনা হচ্ছে, এটি নৈতিক বিবেচনায় সমর্থনযোগ্য নয়৷ তবে গ্যুন্টার এই সমালোচনা আমলে নিতে আগ্রহী নয়৷ সে এই বিষয়টি বুঝতে পারছে না বা বুঝতে চাচ্ছে না৷মঙ্গল যাত্রার জন্য চল্লিশ জনের প্রাথমিক তালিকায় স্টেফেন গ্যুন্টার থাকবেন কিনা তা জানা যাবে শীঘ্রই৷ সব ঠিক থাকলে ২০২৩ সাল নাগাদ পৃথিবীকে চির বিদায় জানাবেন তিনি, চলে যাবেন না ফেরার দেশ, মঙ্গলে৷